অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ঈদের ছুটিতে কুমিল্লার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেছে কুমিল্লা ও আশপাশের জেলার দর্শনার্থীরা। আজ ঈদুল আযহার দ্বিতীয়দিন শনিবার কুমিল্লার প্রত্যেকটি বিনোদন কেন্দ্রে সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা ভিড় করছে।
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কুমিল্লা আসার জন্য রেল ও সড়কপথে যাতায়াতের সুব্যবস্থা থাকায় দর্শনার্থীরা এ জেলাকে বেছে নিয়েছেন। কুমিল্লায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে শালবন বিহার ও নগরীর ধর্মসাগরপাড়। শালবন বিহারের পাশেই লালমাই পাহাড়। যা উত্তর-দক্ষিণে ১১ মাইল লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২ মাইল চওড়া। লাল মাটির এ পাহাড়ের সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫০ ফুট। লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় কুমিল্লা মহানগরীকে। এ পাহাড় এর আশ পাশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন। কুমিল্লা মহানগর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে শালবন বিহার অবস্থিত। এখানে পুরাকীর্তি রয়েছে। এখানে রয়েছে ময়নামতি জাদুঘর। জাদুঘরের পাশে রয়েছে বন বিভাগের ২টি পিকনিক স্পট। শালবন বিহারের পাশে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড)। মহানগরীর ধর্মসাগর পাড়ে আড্ডা দিতে এবং নৌকায় চড়তে মানুষ ভিড় করছে।
সরেজমিন আজ সকাল সাড়ে ১০টায় দেখা গেছে, শহরের রাস্তঘাট আর অফিস-আদালত ফাঁকা থাকায় সবার গন্তব্য ছিল বিনোদন কেন্দ্রমুখী। চান্দিনার সেই প্রত্যন্ত অঞ্চল কাদুটি থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে কুমিল্লা ধর্মসাগর পার্কে এসেছিল নয় বছর বয়সী শিশু ইকবাল। পার্কে এসে কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, ধর্মসাগর পার্কে আমার খুবই পছন্দের। তাই বাবা-মার সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। দোলনা ও ট্রেনে উঠেছি। কথার ফাঁকে ছোট্ট এই শিশুটি তার বাবার কাছে আবদার করে পার্ক থেকে বের হওয়ার পর তাকে খেলনা গাড়ি কিনে দিতে হবে। শহরের ঝাউতলা এলাকার আমির হোসেন চাকরি করেন ঢাকার বেসরকারি একটি কোম্পানিতে। ঈদুল আযহার ছুটিতে কুমিল্লায় এসেছেন। ঈদের দ্বিতীয়দিন তাই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন ধর্মসাগর পাড়। তারা জানালেন, এখানে এসে ঈদের আনন্দটা ভালোই কাটছে। তাদের মতো অনেকেই সিটিপার্ক ও ধর্মসাগরপাড় এসেছেন পরিবার নিয়ে ঈদের আনন্দটা উপভোগ করার জন্য। সিটিপার্কে বেশির ভাগ বাবা-মা সন্তানসহ রাইডে উঠে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। সপরিবারে এ আনন্দের সঙ্গে ভবিষ্যতের সাথী হিসেবে তরুণ-তরুণীরাও মেতে ওঠে ভিন্ন আনন্দে। একান্তে সময় কাটানোর পাশাপাশি প্রিয় মুহূর্তকে সেলফিতে ধরে রাখতেও কার্পণ্য করেননি প্রেমিকযুগলরা। ঈদের ছুটিতে শালবন বৌদ্ধ বিহারের পার্কিংয়ে শতাধিক প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন দেখা গেছে। বিহারে শিশুদের নিয়ে প্রবেশ করেছেন অভিভাবকরা। লালমাই পাহাড় ও কোটবাড়িতে বেসরকারি পার্কগুলোতেও ভিড় রয়েছে। এদিকে মহানগরীর ধর্মসাগর পাড়ে আড্ডা দিতে এবং নৌকায় চড়তে মানুষ ভিড় করেছেন। কুমিল্লার সদর দক্ষিণে লালমাই পাহাড়ের শীর্ষ দেশে চন্ডি মন্দির অবস্থিত। এলাকাটি চন্ডিমুড়া হিসেবে পরিচিত। কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লাগোয়া রাজেশপুর ফরেস্টবিট। এখানে বাংলাদেশ ও ভারতের নোম্যান্স ল্যান্ডের দেখা মিলে। পাখির কিচির-মিচির শব্দ আর সবুজ অরণ্যে ডুব দেয়া যায় কিছু সময়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ওয়ার সিমেট্রি কুমিল্লা-সিলেট সড়কের পাশে ময়নামতি সেনানিবাসের উত্তরে অবস্থিত। এখানে ব্রিটিশ, কানাডিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, নিউজিল্যান্ডিয়ান, আফ্রিকান, জাপানী, আমেরিকান এবং ভারতীয় মিলে ৭৩৭ জন সৈন্যের সমাধি রয়েছে। জেলার লাকসামের পশ্চিমগাঁওয়ে ডাকাতিয়া নদীর তীরে রয়েছে নারী জাগরণের পথিকৃৎ নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়ি। এদিকে দর্শনার্থীরা যেন নির্বিঘেœ আনন্দ উপভোগ করতে পারে সে জন্য কুমিল্লা জেলা পুলিশ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।
শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাসিবুল হাসান সুমি বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন আজ দর্শনার্থীদের প্রচুর ভিড় করছে।
Leave a Reply