05 Oct 2024, 02:16 pm

ডেঙ্গু আক্রান্তরা হাসপাতালে দেরী করে আসায় মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ না করে সারা বছর ধরেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা দেরীতে হাসপাতালে আসায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।

গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ হাজার, অথচ এবছর ইতোমধ্যেই প্রায় ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে। ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরী অবস্থা জারি অথবা মহামারি ঘোষণা করার মতো কোন অবস্থা ঘটেনি।
ডেঙ্গুতে অসহায় পরিবোরের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে জরিমানায় আদায়কৃত অর্থ ও সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ তহবিল থেকে সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। ডিএমসি ও সোহরাওয়ার্দি হাসপাতাল থেকে স্থান না থাকার কথা বলে ডেঙ্গু রোগী ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ খাতিয়ে দেখা হবে।

বেসরকারি সকল হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার এনএস-১ টেস্ট ফি ৩ শত, আইজিজি টেস্ট ফি ৩ শত, আইজিএম টেস্ট ফি ৩ শত ও সিবিসি টেস্ট ফি ৪ শত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য টেস্ট ফি, বেড ভাড়াসহ বিবিধ খরচ নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।  বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা এর জন্য একমাস সময় চেয়েছে। তবে শুধু আইন দিয়ে নয় মানবিক মূল্যবোধের মাধ্যমে বিবেকবান মানুষ হিসেবে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা উচিত।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার এফডিসিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা নিয়ে এক ছায়া সংসদে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এসব কথা বলেন।

ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছায়া সংসদে প্রস্তাবের পক্ষে ইস্টার্ণ ইউনিভার্সিটি এবং বিপক্ষে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে।

সভাপতির বক্তব্যে জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের ৬৪টি জেলায় ইতোমধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ঢাকায় এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন, শুধু বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তৎপর থাকায় পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগ।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা না করলে এর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। ডেঙ্গুর প্রকোপ এবার এত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যে, ২৩ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে গত ২৪ ঘন্টায় ১৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এর মধ্যে ১৭ জনই মারা গেছে ঢাকা সিটিতে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। অথচ ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ার শঙ্কা আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে। তখন পরিস্থিতি কি হবে তা ভাবতে ভয় হচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সম্পৃক্ততা খুবই জরুরী।

তবে জনসচেতনতার নামে শুধু নগরবাসীর উপর এডিস মশা বিস্তারের দায় চাপানো সঠিক হবে না। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় চলতি মাসের ১১ দিনে ১ কোটি ১ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র। আমরা জানিনা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে কত জরিমানা আদায় হয়েছে। আমি মনে করি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে লার্ভা পাওয়ার অভিযোগে যে অর্থ জরিমানা হিসেবে আদায় হয়েছে, সেই অর্থ এবং একই সাথে সিটি কর্পোরেশনের তহবিল থেকে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অসচ্ছল ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা উচিত।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতার জন্য ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিম্নে ১০ দফা সুপারিশ করেন;

১) এডিস মশা নির্মূলে শুধু মৌসুমী কার্যক্রম পরিচালনা না করে নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করে বছরব্যাপী কার্যকর ওষুধ ছিটিয়ে সমন্বিত কীট ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে বাসা বাড়িসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নর্দমাসহ সর্বত্র পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।

২) এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক কমিটি গঠন করা এবং জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন করা।

৩) এডিস মশা নিধনে আমদানিকৃত কীটনাশক স্বল্প মূল্যে বা বিনামূল্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে নাগরিকদের প্রদান করা।

৪) এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার অভিযোগে জরিমানা বাবদ আদায়কৃত অর্থ দিয়ে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া অসহায় পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৫) মশা নিধন ও মশা বাহিত রোগ প্রতিরোধে কীটতত্ত্ববিদ, পরিবেশবিদ, মেডিকেল ও ভেটেরিনারি পেশার ব্যক্তিবর্গসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে মতামত গ্রহণ করা।

৬) গরিব মানুষ সহ যাদের প্রয়োজন তাদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি মশার কামড় থেকে রক্ষায় বিনামূল্যে মশারি বিতরণ করা।

৭) ডেঙ্গুর রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রস্তুত করা।

৮) ডেঙ্গু প্রতিরোধে তথ্যচিত্র নির্মাণ করে সারাদেশে প্রদর্শন করা ও তৃণমূল পর্যায়ে কমিউনিটি রেডিওতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা।

৯) বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে টেস্ট ফিসহ অন্যান্য খরচ নির্ধারনে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করা ।

এবং ১০) সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনবল বৃদ্ধিসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

“নাগরিক সচেতনতাই পারে, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে” শীর্ষক ছায়া সংসদে ইস্টার্ণ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরিজিত করে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক রাশেদ রাব্বি, সাংবাদিক ফালগুনী রশীদ ও সাংবাদিক জিনিয়া কবির সূচনা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

ক্যাপশন-১ : ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে চ্যাম্পিয়ন দলের বিতার্কিকদের ট্রফি প্রদান করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও  ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ক্যাপশন-২ : ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে চ্যাম্পিয়ন দলের বিতার্কিকদের ট্রফি হাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরনসহ বিচরকদের সাথে দেখা যাচ্ছে।
ক্যাপশন-৩ : ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে চ্যাম্পিয়ন দলের বিতার্কিকদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 6729
  • Total Visits: 1121407
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1639

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
  • ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
  • ১লা রবিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ২:১৬

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018