অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : লক্ষ্মীপুরে জমির মালিকানার দ্বন্দ্বের জেরে রাতের অন্ধকারে দুই দফা হামলা চালিয়ে বিদ্যালয়ের ১০টি আধাপাকা ও দুটি টিনশেড শ্রেণিকক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ও শুক্রবার ভোরে সদর উপজেলার পালেরহাট মডেল একাডেমিতে এ ভাঙচুর চালানো হয়।
এসময় দুটি ল্যাপটপ ও শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের ১ লাখ টাকা নিয়ে যায় হামলাকারীরা। ভাঙচুর ও লুটপাটে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান মোরশেদ কামাল। জমির মালিকানা দাবিকে কেন্দ্র করে তোফায়েল আহমেদ ও আবু তাহেররা দলবল নিয়ে এ হামলা চালায় বলে জানা গেছে।
স্কুলটির প্রধান মোরশেদ কামাল ও তার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের মা ফাতেমা বেগম এই জমির মালিক। ২০১৪ সালে এই জমিতে স্কুল স্থাপিত হয়। কিন্তু এরপর থেকেই তাদের মায়ের চাচাতো ভাই তোফায়েল আহমেদ, আবু তাহের ও খোরশেদরা জমির মালিকানা দাবি করে আসছেন। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) একাধিকবার বৈঠক হলেও তোফায়েলরা জমির কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। সবশেষ ১৩ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়েও বৈঠক হয়। সেখানেও তারা কোনো দলিল দেখাতে পারেননি।
এদিকে তোফায়েলরা দলবল নিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল করতে বৃহস্পতিবার রাতে স্কুলে ভাঙচুর চালায়। বাজারের একজন নৈশ প্রহরীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ৯৯৯ হটলাইন নম্বরে কল দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ চলে গেলে শুক্রবার ভোরে আবারও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দলবল নিয়ে ভাঙচুর চালায় তার। এতে বাধা দিতে গেলে প্রতিষ্ঠান প্রধান মোরশেদকে মারধর করা হয়। হামলাকারীরা স্কুলের অফিস কক্ষসহ ১০টি আধাপাকা, দুটি টিনশেড শ্রেণিকক্ষ, একটি ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ সব আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পরে দুটি ল্যাপটপ ও শিক্ষকদের মাসিক বেতনের জন্য রাখা ১ লাখ টাকা নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত জানান, বৃহস্পতিবারও তারা ক্লাস করেন। এখন তাদের স্কুলটা ভেঙে তছনছ করে ফেলেছে। তারা কোথায় ক্লাস করবে। সামনে তাদের বার্ষিক পরীক্ষা। এ অবস্থায় ক্লাস করতে না পারলে তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হবে।
অভিভাবক বেলাল হোসেন বলেন, স্কুলটি এমনভাবে ভাঙচুর করেছে এখানে পাঠদান কর্মসূচি চালানো অসম্ভব। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করানো ঝুঁকি মনে হচ্ছে।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোরশেদ কামাল বলেন, দুই দফা হামলা চালিয়ে পুরো স্কুল ভেঙে তছনছ করে ফেলা হয়েছে। প্লে-অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের পাঠদান এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
বক্তব্য জানতে তোফায়েল আহমেদ, আবু তাহের ও খোরশেদ আলমের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছ উজ জামান বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে গেছে। এরপর আমরা চলে গেলে আবারও স্কুলে ভাঙচুর চালানো হয়। সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। হামলাকারীদের তথ্য নেওয়া হয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply