অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রে আছে রাজনৈতিক সংলাপ। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও কি সংলাপ হবে নাকি হবে না- এ নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে সংলাপ নিয়ে আলোচনা তত গতি পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কথার বাহাসেই রয়েছে সংলাপ ইস্যুটি।
বিরোধী দলগুলো সংলাপে বসতে শর্ত দিচ্ছে আর ক্ষমতাসীনরা চাচ্ছে শর্তহীন সংলাপ। তবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংলাপ দরকার এবং এজন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ‘ইগো থেকে সরে আসতে হবে’—মনে করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।
তবে রাজনৈতিক সংকটেও শর্তের বেড়াজাল, সংলাপের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই দলই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে কার্যত রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের কথা বলছে। এমন অবস্থায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থবহ সংলাপে বসার তাগিদ দিয়েছে মার্কিন নির্বাচনী মিশন। চলতি মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা সফর করেছে প্রতিনিধি দলটি। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে তারা মোট ৫টি মতামত তুলে ধরেছে। মতামতের প্রথমেই সংলাপের আহ্বান করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময় মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে অনুরোধ করা হয়। সেই সঙ্গে নাগরিকের ভিন্ন মতকেও সম্মান জানাতে বলা হয়েছে।
দেশের নাগরিক যেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেয়া হয়। রাজনৈতিক সহিংসতাকারী অপরাধীদেরকে জবাবদিহি করার প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিকল্প নেই। দেশের জনগণকেও নিজেদের মতামত তুলে ধরতে সহায়তা করতে হবে।
এ অবস্থায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের প্রধান দুই দলই তাদের নিজস্ব এক দফা নিয়ে অনড় অবস্থানে আছে। বিএনপি চায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর শাসক দল চায় শেখ হাসিনার অধীনে এখন সংবিধানে যে ব্যবস্থা আছে তার অধীনে নির্বাচন। কিন্তু শর্তহীন সংলাপ না হলে সেই সংলাপে কোনো ফল আসবেনা বলে মত বিশ্লেষকদের।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, দুই দলই এখন এক দফায় আছে। বিএনপি চায় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন। আর আওয়ামী লীগ চায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন। দুই দল যদি এভাবে দুই প্রান্তে অনড় থাকে তাহলে তো কোনো অর্থবহ সংলাপ করা সম্ভব নয়। যদি সংলাপ হয়ও তা কোনো ফল বয়ে আনবে না। দুই পক্ষ যদি তাদের এই অনড় অবস্থান ছেড়ে দিয়ে বিকল্প কিছু বের করতে পারে তাহলে অর্থবহ সংলাপ সম্ভব৷ আর এটা হলে বাকি যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সমাধান করা সম্ভব।
আর টিআইবির নির্বাহি পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জানের মতে, এখন রাজনৈতিক অচলবস্থা একটি জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা এবং গ্যারান্টি প্রয়োজন। তা না হলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না। সংলাপের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো সংলাপের জন্য মধ্যবর্তী অবস্থা দেখছি না। দুই পক্ষই তাল গাছ আমার বলে অনড় অবস্থান নিয়ে বসে আছে। শাসক দল সংবিধানের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার কথা বলছে আর বিএনপি সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছে। এই পরিস্থিতিতে যদি অর্থবহ সংলাপ না হয় তাহলে দেশ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাবে। লেজিমেটিসির সংকট কাটবে না এবং বর্তমান পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে মোড় নিতে পারে বলে শংকা বিশ্লেষকদের।
Leave a Reply