অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হাথরাস জেলার সিকান্দররাউয়ে ধর্মীয় সভয়া পদদলিত হয়ে ১২১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হতে পারেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু বাবা নারায়ণ হরি ওরফে ‘ভোলে বাবা’। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদেন এই তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি দল সিকান্দাররাউয়ের ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, অপর একটি দল গিয়েছেন বাবা নারায়ণ হরির মূল আশ্রম ফুলর রাম কুটির চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ভবনে। তবে সেখানে ছিলেন না তিনি।
‘আমরা তার সার্বক্ষণিক গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখছি। বর্তমানে তিনি তিনি মাইনপুরি গ্রামের একটি আশ্রমে অবস্থান করছেন। এই আশ্রমটির অবস্থান সিকান্দাররাউ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে।’
জানা গেছে, স্বঘোষিত ধর্মগুরু বাবা নারায়ন হরি ওরফে ভোলে বাবার প্রকৃত নাম সুরাজ লাল। তিনি উত্তর প্রদেশের ইটাহ্ জেলার পাতিয়ালি পঞ্চায়েতের বাহাদুরনগরী গ্রামের বাসিন্দা। সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা সুরাজ একসময় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার হেড কনস্টেবল ছিলেন। পরে ১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ধর্মীয় বাণী প্রচারে মন দেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে নারয়ণ সাকার হরি রাখেন।
এখন হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, দিল্লি-সহ গোটা ভারতে অসংখ্য ভক্ত ছড়িয়ে রয়েছে স্বঘোষিত এই ধর্মগুরুর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভোলে বাবার কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। তার ভক্তদের দাবি, সমাজে বিভিন্ন স্তরে তাঁর অনুপ্রেরণা কাজ করে।
গতকাল মঙ্গলবার সিকান্দাররাউয়ের ফুলরাই গ্রামে বাবা নারায়ণ হরির ‘সৎসঙ্গ’ বা ধর্মীয় সভা ছিল। লক্ষাধিক ভক্ত তার বাণী শুনতে সেই সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সভা শেষে লোকজন বেরিয়ে যাওয়ার সময় পদদলিত হয়ে নিহত হন অন্তত ১১৬ জন। তাদের মধ্যে ১০৬ জন নারী এবং ৭ জন শিশু। নিহতদের অধিকাংশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
এই ধর্মীয় সভার আয়োজন করেছিল ‘মানব মঙ্গল সদ্ভাবনা অনুষ্ঠান’ নামের একটি সংস্থা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সভা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে যে আবেদনপত্র জমা দিয়েছিল সংস্থাটি, সেখানে বলা হয়েছিল যে ৮০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ।
সভা উপলক্ষে যে শামিয়ানা টানানো হয়েছিল, সেটি খোলামেলা হলেও ফ্যানের ব্যবস্থা রাখেননি আয়োজকরা। সভার আগমন ও নির্গমনের পথও ছিল অপ্রশস্ত।
বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত হয়েছে সেই সভা। ব্যাপক ভিড় ও গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকা ভক্তরা সভা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শামিয়ানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেন। এ সময়েই পদদলিত হয়ে নিহত হন ১১৬ জন।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সভার আয়োজক সংস্থা মানব মঙ্গল সদ্ভাবনা অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফৌজদারি বিধির ১০৫, ১১০, ১২৬ (উপধারা ২), ২২৮ এবং ২৩৮ ধারায় একাধিক মামলা করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ঘটনার তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং এবং আহতের পরিবারকে ৫০ হাজার রুপি সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
Leave a Reply