এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : চার হাজার এক’শ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ছয়লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অগ্রগতি জমি অধিগ্রহনসহ নানা কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে। এখনো অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা পরিশোধ করা হয়নি। পল্লী বিদ্যুৎ এবং ওজোপাডিকো তাদের বৈদ্যুতিক পোলও সরাতে পারেনি। ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগ সড়কের দুপাশের স্থাপনার মুল্য নির্ধারণের হিসাব না দেয়ায় কাজের ধীরগতির অন্যতম কারণ বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ছয়লেনে উন্নয়ন প্রকল্পটির ঝিনাইদহ অংশে সরেজমিন দেখা গেছে পাইলিং, লোডটেস্ট এবং কয়েকটি কালভার্ট তৈরীর কাজ চলমান রয়েছে। এ কাজের অগ্রগতির হার মাত্র পাঁচ শতাংশ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১ ঝিনাইদহ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১-এর আওতায় ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে সাড়ে ৪৭ কিলোমিটার ছয়লেনে উন্নয়ন প্রকল্পটি (এন-৭) অনুমোদন দেয়া হয়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। আগামী ২০২৬ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে চার বছরের বেশি সময় পার হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী, চুটলিয়া ও ধোপাঘাটা ব্রীজ এলাকায় পাইলিংয়ের কাজ চলমান। তৈরী করা হচ্ছে ওভার ব্রীজের জন্য গার্ডার। চুটলিয়া মোড়ে লোড টেস্ট করা হচ্ছে। তবে সড়ক নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমি এখন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
ঝিনাইদহ এবং যশোর জেলা এলাকায় মোট ৩০৪ একর জমি অধিগ্রহন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস থেকে যশোরের চাঁচড়া চেকপোস্ট পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তার দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪৭ কিলোমিটার। সড়কে থাকবে একটি ফ্লাইওভার, চারটি সেতু, ৫৫টি কালভার্ট, পাঁচটি ভেহিকুলার ওভারপাস, আটটি পেডিস্ট্রিয়ান ওভারপাস ও একটি রেলওয়ে ওভারপাস। এছাড়াও প্রকল্প করিডোরকে স্মার্ট হাইওয়েতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ও অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ডিজাইন করা হবে। প্রকল্প শুরুর আগেই সড়কের দু’পাশের শতবর্ষী গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। উইকেয়ার ফেজ-১ এর ঝিনাইদহ অংশের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মিলন আলী বলেন, জমি অধিগ্রহন এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই কাজটি করতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কাজ করছে। তিনি বলেন, প্রকল্প কর্মকর্তার অফিস থেকে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বৈদ্যুতিক পোল সরানোর জন্য। কিন্তু তারা এখনো সেই কাজটি করেনি। ফলে কাজের গতি থেমে যাচ্ছে। তাছাড়া অধিগ্রহনকৃত জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় কৃষকরা সে সব জমিতে আবাদ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আশা করেন দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি বুঝিয়ে দিলে কাজও পুরোদমে শুরু করা যাবে।
ঝিনাইদহ ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তার (এলএও) প্রধান সহকারী আলাউদ্দীন জানান, সরকারের সব বিভাগ তাদের প্রতিবেদন দিয়েছেন। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগ এখনো সড়কের দুপাশের স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের হিসাব দেয়নি। ফলে আমরা টাকার চাহিদা পাঠাতে পারছি না। তিনি আরো জানান, ভূমি অধিগ্রহনের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়খালী বাজারের ব্যবসায়ী শওকত আলী জানান, চার বছর ধরে শুনছি সড়কটি ৬ লেন হবে। আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গা হবে। কিন্তু এখনও দোকান সরানোর কোন নোটিশ বা আমাদের ক্ষতি পূরণের টাকা পায়নি। চুটলিয়া এলাকার কৃষক নাসির উদ্দিন জানান, শুনেছি অধিগ্রহনকৃত জমির টাকা দ্রুত দেয়া হবে। কিন্তু মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে জমিও নিচ্ছে না আবার টাকাও দিচ্ছে না। এ নিয়ে আমরা বেশ ঝামেলায় আছি। এদিকে ছয় লেন রাস্তা নির্মাণ কাজ বিলম্বের কারণে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চলাচলের অযোগ্য উঁচু-নিচু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়খালী, তেতুলতলা, চুটলিয়া, দোকানঘর ও খয়েরতলা নামক স্থানে যানবাহন চলাচল দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, অধিগ্রহণকৃত জমির জন্য সড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, গণপূর্ত, কৃষি বিভাগ ও বনবিভাগসহ কয়েকটি দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা তাদের তালিকা দিলে আমরা টাকার জন্য চিঠি পাঠাবো। তারপর অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
Leave a Reply