স্টাফ রিপোর্টার : ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আলামপুরে নুরুল হক ওরফে নুরুল্লাহ ( ৫৫) নামে এক নিরীহ মাটিকাটা শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সন্ধেরাত ৭টার দিকে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ভর্তির পর তার মৃত্যু হয়। নিহত নুরুল্লাহ আলামপুর গ্রামের (মৃত) জহর আলীর ছেলে। অভিযোগে জানাযায়,গত পরশু গভীর রাতে মেইন আলামপুর গ্রামে কথিত রাজ্জাক ফকিরের আস্তানায় গানের আখড়ায় স্থানীয় চিহ্নিত কিছু উচ্ছৃংখল যুবক তাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এ অবস্থায় তার স্বজনরা খবর পেয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে অবস্থার অবনতি হলে গতকাল ( বুধবার) কোটচাঁদপুর হাসপাতালে ভর্তির পর তার মৃত্যু হয়।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,নিহত নুরুল্লাহ একজন সাদাসিধে রাস্তার মাটিকাটা শ্রমিক । এমনিতেই সে এলাকার বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে নিজেই কৌতুহলি হয়ে যোগ দিতেন। ২৩ মে ঘটনার রাতে আলামপুর (৪নং) গ্রামের মৃত আঃ রাজ্জাক ফকিরের ( লালন ফকিরের ভক্ত) আস্তানায় ওরসে সে যোগ দেয়। সেখানে গানের মঞ্চে উঠে সে গানও করে। এ সময় ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া এলাকার কিছু উচ্ছৃংখল যুবক তাকে মঞ্চ থেকে ধাক্কা মেরে, চড় থাপ্পড়, কিল ঘুসি দিতে দিতে পাশে বাশঝাড়ে নিয়ে বেধড়ক পারপিট করে গুরুতর আহত করে।
এ অবস্থায় তার স্বজনরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। রাতে সে মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কোন চিকিৎসা বা ওষুধ না পেয়ে নিজেই আগুনে নেকড়া ছেঁেক বুকেসহ যন্ত্রনার স্থানে চেপে ধরে।
নুরুল্লাহর ভাগ্নে আবু হানিফ জানায়, মামা আমাকে ডেকে নিয়ে কারা তাকে এভাবে বিনাদোষে মেরেছে তার বিবরণ দেয়। এ সময় সে জানায়, আসরের মঞ্চ থেকে সে গান গাওয়ার সময় তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে তাকে কিলঘুসি, লাথিসহ নানা ভাবে মেরে গুরুতর আহত করে। এসময় সে জোড় হাত করে বার বার না মারার জন্য আকুতি জানালেও তারা নাকি গালমন্দ করে মারতে থাকে। এ পর্যায়ে মারাত্মক আহত করে। গতকাল নুরুল্লাহর অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে লোকজন তাকে কোটচাঁদপুর হাসপাতালে ভর্তি করার ২ঘন্টা পরেই সে মারা যায়।
নুরুল্লাহর ছোট ভাই মোঃ মোশারেফ হোসেন জানান, আমি ঢাকায় থাকি সেখান থেকে মোবাইল ফোনে আমার ভাইকে এলাকার কিছু যুবক মেরে ফেলেছে এমন খবর পেয়ে আমার বাসায় ক’দিন আগে বেড়াতে যাওয়া মাকে নিয়ে বাড়িতে এসে ঘটনার সত্যতা পাই।
তিনি বলেন, আমি আমার নিরিহ ভাইয়ের হত্যা কারিদের বিচার দাবি করি। এসময় নিহতের বৃদ্ধা মা জমিলা বেগম বিলাপ করে কেঁেদ বলতে থাকেন আমার ছেলেকে যারা এভাবে মেরে ফেলেছে তাদের কঠোর শাস্তি চাই।
স্থানীয় একটি সুত্র নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে অভিযোগ করেন, নুরুল্লাহকে হত্যাকারি যুবকরা এলাকার প্রভাবশালী দলের নেতা ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ঘটনা ধামা চাপা দিতে জোর চেস্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছে।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন কে মোবাইল ফোনে আলামপুরে এক ব্যাক্তিকে হত্যা করা হয়েছে এমন কোন সংবাদ জানেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, কোন লোক হত্যা করার সংবাদ জানি না।
অন্যদিকে কোটচাঁদপুর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত একজন উপ-সহকারি কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার সেলিম বলেন, নুরুল্লাহ নামে একজন লোক মারা গেছে, সে গ্যাসের সমস্যায় ভর্তি হয়। গ্যাসের কারনে তার পেট ফুটো হয়ে মারা গেছে। কোন এক্্ররে/আল্ট্রাস্নো বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কিভাবে নিশ্চিত হলেন?এ প্রশ্নে তিনি বলেন আরে হ্যাঁ তাই হয়েছে। অথচ স্বজনদের অভিযোগ হাসপাতালে তাকে হত্যার সাথে জড়িত লোকজন হাসপাতাল থেকে কুট কৌশলে তড়ি-ঘড়ি করে লাশ নিয়ে যায়। এসময় তারাই এমন প্রচার চালায়। তাই পরিবারের লোকজন হতাশা প্রকাশ করে বলেছে, আসলে কি নুরুল্লাহর মতো একজন নিরিহ মানুষকে এভাবে মেরে ফেলার বিচার হবে? এ দাবি তার সাথে রাস্তায় মাটিকাটা মহিলা শ্রমিক আমেনা বেগমরও।