26 Apr 2024, 06:32 pm

সেনা স্থাপনায় হামলার কারণে পাকিস্তানি এক নারীকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে চলছে উত্তাপ। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার ও এর জেরে সামরিক স্থাপনায় হামলার ঘটনার পর সেই উত্তাপ-উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে।

এই ঘটনায় ইমরানের দল ও তার নেতা-কর্মীদের ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে পাকিস্তান সরকার। তবে এর মধ্যে আলাদা করে উঠে এসেছে এক নারীর নাম। পাকিস্তানের পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। কিন্তু এখনও সন্ধান মেলেনি। মঙ্গলবার (২৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি এই নারীর নাম খাদিজা শাহ। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দেশটির সাবেক একজন সেনাপ্রধানের নাতনি। মূলত পাঞ্জাব পুলিশ ব্যাপক অভিযান শুরু করার পর থেকে প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলায় জড়িত সন্দেহে শত শত পিটিআই কর্মীকে আটক করেছে।

তবে সাবেক সেনাপ্রধানের নাতনি খাদিজা শাহের সন্ধান এখনও পায়নি পুলিশ। পাকিস্তানি এই নারী গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও এই ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত কারও প্রতি ‘কোনও করুণা দেখানো হবে না’ বলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই কঠোর আদেশ জারি করেছে।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, মামলার প্রধান সন্দেহভাজন খাদিজা শাহ গ্রেপ্তার থেকে বাঁচতে কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে চলছেন। এমনকি তার স্বামী জেহানজেব আমিনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে, সাবেক অর্থমন্ত্রী সালমান শাহকেও অল্প সময়ের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়, পরে তাকে ছেড়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।

সংবাদমাধ্যম বলছে, জেহানজেবের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ গুলবার্গের একটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালায়, কিন্তু অভিযানকারী দলের পৌঁছানোর কয়েক মিনিট আগে খাদিজা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে সিসিটিভি ফুটেজে তাকে বেসমেন্ট পার্কিং এরিয়া দিয়ে বিল্ডিং থেকে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে।

একজন নির্ভরযোগ্য পুলিশ কর্মকর্তার মতে, কোনও অপরাধী শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না বলে সেনাবাহিনী জানিয়ে দিয়েছে। লাহোরে সাম্প্রতিক সফরের সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির পুলিশকে তাদের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেছেন, অপরাধে জড়িত কোনও অপরাধীর প্রতি নমনীয়তা দেখানো যাবে না। তবে নারী অভিযুক্তদের অসম্মান না করে আইনানুগভাবে গ্রেপ্তার করা উচিত বলে জানান তিনি।

পাকিস্তানের সবচেয়ে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারদের একজন খাদিজা শাহ পাকিস্তানের পাশাপাশি একজন মার্কিন নাগরিকও। অবশ্য নিজেকে নির্দোষ ঘোষণা করে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অডিও বার্তা প্রকাশ করে এই নারী দাবি করেছেন, ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর তিনি কেবল লাহোরের কর্পস কমান্ডারের বাড়ির বাইরে উপস্থিত ছিলেন এবং লুটপাটের কোনও কাজে অংশ নেননি।

পৃথক এক প্রতিবেদনে জিও নিউজ জানিয়েছে, লাহোরের জিন্নাহ হাউসে হামলার প্রধান সন্দেহভাজন খাদিজা শাহ হচ্ছেন ড. সালমান শাহের মেয়ে। সালমান পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের অর্থ বিষয়ক দলের সদস্য ছিলেন এবং উসমান বুজদার সরকারের সময় পাঞ্জাব সরকারের উপদেষ্টা হিসাবেও কাজ করেছেন।

খাদিজা শাহের বিরুদ্ধে গত ৯ মে হামলার সময় লাহোর কর্পস কমান্ডার হাউসে হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির মামলায় ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর থেকে কর্তৃপক্ষ সরকারি ও সামরিক স্থাপনা ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য ক্র্যাকডাউন শুরু করার পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।

জিও নিউজ বলছে, নিজেকে ইমরানের দল পিটিআইয়ের সমর্থক বলে দাবি করা খাদিজা শাহ পাকিস্তানের সাবেক এক সেনাপ্রধানের নাতনিও। গত রোববার পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের হেফাজতে নেওয়ার পর তিনি আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেন।

যদিও পুলিশ যখন তার বাড়িতে অভিযান চালায় তখন তিনি পেছনের দরজা থেকে পালিয়ে যান এবং আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিলেও এখনও সেটি করেননি।

১৬ মিনিটেরও বেশি দীর্ঘ এক অডিও বার্তায় খাদিজা শাহ স্বীকার করেছেন, তিনি পিটিআই সমর্থক এবং লাহোর কর্পস কমান্ডার হাউসের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তবে মানুষকে সেখানে সহিংসতায় প্ররোচিত করাসহ কোনও ধরনের অন্যায় কাজ করার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।

অডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছি। আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ গত পাঁচ দিন আমার জন্য খুব কঠিন ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা (কর্তৃপক্ষ) মধ্যরাতে আমার বাড়িতে প্রবেশ করে এবং আমার স্বামী ও বাবাকে অপহরণ করে। তারা আমাদের সন্তানদের সামনে আমার স্বামীকে মারধর করেছে… আমার গৃহকর্মীরাও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।’

পিটিআইয়ের এই সমর্থক কোনও আইন লঙ্ঘন করেননি জানিয়ে বলেছেন, তিনি গত এক বছরে পিটিআইয়ের অনেক বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। দ্বৈত নাগরিক হওয়ার কথা জানিয়ে খাদিজা বলেছেন, তিনি মার্কিন দূতাবাস থেকে সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এই বিষয়ে আরও বিশদ বিবরণ দেননি তিনি।

খাদিজা বলেন, ‘পাঞ্জাব সরকার আমার বিরুদ্ধে বলছে- আমি নাকি ৯ মে ভাংচুরের প্রধান সন্দেহভাজন এবং মাস্টারমাইন্ড। আমি পিটিআইয়ের কোনও নেতা বা কর্মী নই। আমি ইমরান খানের সমর্থক হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিবাদ করেছিলাম।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 16857
  • Total Visits: 649421
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1122

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
  • ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৬:৩২

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
2930     
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018