অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাজধানী ঢাকায় ১২ লাখেরও বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে, যার বেশিরভাগই চালকদের জীবন-জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস। তবে সম্প্রতি এসব রিকশার চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এসেছে। আদালতের এমন নির্দেশে বিরুদ্ধে রিকশাচালকরা বিক্ষোভ শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন— অটোরিকশার অতিরিক্ত গতি এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি যে সমস্যাগুলো তৈরি করছে, সেগুলোর সমাধান প্রয়োজন। তবে, ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থা এবং অটোরিকশার ব্যাপক উপস্থিতি বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলছে। এছাড়া প্রতিটি অটোরিকশা দুইবেলায় দুইজন চালক ভাড়া নেন।এতে আছে বিপুল সংখ্যাক মানুষের বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা। ফলে, পুরোপুরি অটোরিকশা বন্ধ করা কি আদৌ সম্ভব হবে?
উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছে রিকশাচালকরা। ফলে গুলশান, হাতিরঝিল, বাড্ডা, বনশ্রী ও মগবাজারসহ অন্যান্য এলাকায় সড়কে অটোরিকশার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে। এর কারণ, অধিকাংশ চালকই সড়ক ও রেলপথ অবরোধে অংশ নেওয়ার জন্য বের হয়নি। তবে, বিভিন্ন মোড়ে প্যাডেল চালিত রিকশার সংখ্যা ছিল বেশি।
রাস্তায় রিকশা চালাচ্ছিলেন— এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানিয়েছেন, ছাত্র আন্দোলনে ৮০ শতাংশ রিকশাচালক শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিল। অথচ আজ তাদেরই এমন দিন দেখতে হলো। রিকশাচালক মো. মুসা জানান, গতকাল তিনি রিকশা চালাতে পারেননি এবং মাত্র ৭০০ টাকা উপার্জন করেছেন, তার মধ্যে ৬০০ টাকা জমা দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমার বাবা-মাকে টাকা না দিলে, সংসার কীভাবে চলবে?
অটোরিকশার চলাচলে সবচেয়ে বড় আপত্তি হচ্ছে এর ‘নিয়ন্ত্রণহীন গতি’। এ বিষয়ে ভোলার মো. আব্দুল হক বলেন, কেউ কেউ দ্রুত চালায়, তবে যখন রাস্তায় জ্যাম থাকে, তখন সবাই একই গতিতে চলে।
৪৩ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে আসা আব্দুল হক বয়স বৃদ্ধির কারণে পায়ে চালিত রিকশাচালাতে সমস্যায় পড়েন, তাই তিনি গত ১৫ বছর ধরে অটোরিকশা চালাচ্ছেন। তিনি সরকারের কাছে সুপারিশ করেন— মেইন রোডে না উঠিয়ে, আমরা গলিতেই চালাতে চাই।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন— শুধু প্রধান সড়কেই নয়, দীর্ঘমেয়াদে শাখা সড়কেও অটোরিকশা চলা উচিত নয়, কারণ তাদের নিয়ন্ত্রণহীন গতি বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৯০০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৫৮২টি মারাত্মক ছিল।
অটোরিকশার বন্ধ করা সহজ নয়, তবে আপাতত মূল সড়কে এগুলো বন্ধ করা উচিত। শাখা সড়কে চলতে দিলে, তা সড়কের সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকতে হবে। রিকশার জন্য একটি স্পেসিফিকেশন বা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা প্রয়োজন। স্থানীয় গ্যারেজগুলোতে রিকশা পরিবর্তন করার কারণে অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে গেছে। আপনি যত রিকশা সরাবেন, তত বেশি রিকশা তৈরি হবে, কারণ নিয়ন্ত্রণ নেই।
অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, অটোরিকশার ব্রেকিং সিস্টেম এবং কাঠামো দুর্বল, তাই এটি বিপজ্জনক বাহন।
তিনি আরও বলেন, এই বাহনের স্ট্যাবিলিটি তার সেন্টার অব গ্রাভিটির উপর নির্ভর করে, কিন্তু প্যাডেল চালিত রিকশায় ব্যাটারি যোগ করলে তার গ্রাভিটি বদলে যায়, ফলে দ্রুত গতিতে বাঁক নিলে অটোরিকশা উল্টে যেতে পারে।
অটোরিকশা চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা সহজ নয়, কারণ ঢাকা শহরে এখন আনুমানিক ১২ লাখ অটোরিকশা চলাচল করছে। অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ঢাকায় অসংখ্য নতুন অটোরিকশা এসেছে, কারণ অনেকেই মনে করছেন এখানে আয় বেশি।
বর্তমানে এ বাহনটির সাথে জীবন-জীবিকা জড়িত, কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
তিনি জানান, অটোরিকশার চলাচল বন্ধ করলে সেটি অন্যদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
রিকশা ব্যবহারকারীদের মধ্যেও অটোরিকশা বন্ধের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু পথচারী অটোরিকশা বন্ধ করার পক্ষে, তবে তারা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে এটি বন্ধ করা উচিত হবে না। ইকরাম করিম নামে একজন বলেন, “এই যুগে পায়ে চালিত রিকশা কেন চালাতে হবে?” তবে তিনি মনে করেন, গতি সীমিত করা যেতে পারে।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, যারা দুর্ঘটনায় পড়েনি, তারা এখন গতি উপভোগ করছেন। কিন্তু যারা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, তারা মনে করেন অটোরিকশা বন্ধ করা উচিত।
ঢাকায় অটোরিকশার চলাচল বন্ধ করা পুলিশ বিভাগের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। একাধিক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, পাবলিক সহযোগিতা না থাকলে অটোরিকশা বন্ধ করা সম্ভব নয়। পুলিশ মাত্র দুজন, আর এক সিগন্যালে অটোরিকশার সংখ্যা ৫০টা।
তারা জানান, অটোরিকশাগুলো বাইক বা গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে এবং থামালেও থামে না, যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, অটোরিকশার বন্ধ করা সহজ নয়, তবে আপাতত মূল সড়কে এগুলো বন্ধ করা উচিত।
তিনি বলেন, শাখা সড়কে চলতে দিলে, তা সড়কের সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকতে হবে। একই সঙ্গে, তিনি পরামর্শ দেন, রিকশার জন্য একটি স্পেসিফিকেশন বা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা প্রয়োজন। স্থানীয় গ্যারেজগুলোতে রিকশা পরিবর্তন করার কারণে অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, আপনি যত রিকশা সরাবেন, তত বেশি রিকশা তৈরি হবে, কারণ নিয়ন্ত্রণ নেই।
তিনি আরও বলেন, পায়ে চালিত রিকশাকে সেভাবেই রাখা উচিত, কারণ সেটি আসলে তাদের প্রকৃত বাহন।
Leave a Reply