অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ (শুক্রবার) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা যে কমিশন তৈরি করেছেন, সেই কমিশন প্রায় এক বছর আট–নয় মাস ধরে ঐকমত্যের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। সংস্কার ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রে একমত হয়েছিলাম। কয়েকটি বিষয়ে মতভেদ থাকায় আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলাম। অর্থাৎ, আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও মূল বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, এটাই নিয়ম। যখন আমরা নির্বাচনে যাব, তখন ম্যানিফেস্টোতে (ইশতেহার) এই বিষয়গুলো থাকবে। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা সেসব বিষয় সামনে আনব, পার্লামেন্টে পাস করে দেশের পরিবর্তন ঘটাব। আর যদি ভোট না দেয়, তাহলে সেটি বাদ পড়বে।”
অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, “যেদিন ঐকমত্যের নথি জমা দেওয়া হলো, মনে আছে, সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল—১৭ তারিখ। তার আগে আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার ঠিকঠাক করে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ধরে সেখানে স্বাক্ষর করলাম। কিন্তু যখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেটা উপস্থাপন করা হলো, তখন দেখা গেল অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে আমরা যে ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো উল্লেখ করা হয়নি। তাই আমরা বলেছি—‘ইটস অ্যা ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ (বিশ্বাসভঙ্গ), তারা সেই আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে। জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনগণের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে। আমরা যে বিশ্বাসযোগ্যতা আশা করেছিলাম, তারা তা রাখেনি। তাই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের দায় অন্তর্বর্তী সরকারের।”
বিএনপিকে সংস্কারের বিপক্ষের দল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে- অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই—বিএনপি সংস্কারের দল। বিএনপির জন্মই হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তখন সমস্ত পত্রিকা বন্ধ ছিল, তিনি সেগুলো খুলে দিয়েছিলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোনো সুযোগ এখন আর নেই। গণভোট নির্বাচনের দিনই হবে, সে কথা তাঁরা পরিষ্কার করে বলেছেন। সেখানে দুটো ব্যালট থাকবে—একটি গণভোটের জন্য, আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য।
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা গণভোটের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে, দয়া করে তারা যেন জনগণকে আর বিভ্রান্ত না করে। এই দল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। আজকে দয়া করে জনগণ যে নির্বাচন চায়, সেটার যেন বিরোধিতা তারা না করে।
সভায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশ যখন একদলীয় শাসনব্যবস্থার জাতাঁকলে, তখন আ স ম আব্দুর রবের মতো রাজনীতিবিদেরা দেশকে উদ্ধার করেছিল। তিনি আ স ম আব্দুর রবের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। আগামীতে নির্বাচিত হলে বিএনপির ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
শারীরিক অসুস্থতার জন্য জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানান দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।