অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের নয়া সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি। ইন্দৌরে দু’দিনের বৈঠকে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন।
গত ১৩ এপ্রিল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সভাপতি মাওলানা রাবে হাসান নদভি ৯৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর বোর্ডের সভাপতির পদটি শূন্য হয়। এরপর ৩ জুন সর্বসম্মতিক্রমে মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানির নাম অনুমোদন করা হয়।
মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি বিহারের দারভাঙ্গায় ১৯৫৬ সালের ৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জামিয়া রহমানি মুঙ্গের এবং দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে পড়াশোনা করেছেন। হায়দরাবাদের বাসিন্দা মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি পেশায় একজন লেখক এবং ইসলামী ধর্মতাত্ত্বক। তিনি ভারতের একজন বিশিষ্ট আইনবিদ, বেশ কয়েকটি আইনশাস্ত্রের বইয়ের লেখক এবং শরীয়া বিজ্ঞানের গবেষক। তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়া তিনি বহু পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সভাপতি হওয়ার আগে বোর্ডের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। মাওলানা ওয়ালী রহমানির ইন্তেকালের পর, ২০২১ সালের এপ্রিলে, মাওলানা রাবে হাসানী নদভি সদর বোর্ড তাকে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করে। এর পরে, ২০২১সালের নভেম্বরে, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানিকে কানপুরের জলসা-ই-আম-এ বোর্ডের স্থায়ী সাধারণ সম্পাদক করা হয়। মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি ভারতের ইসলামিক ফিকহ একাডেমির মহাসচিব। তিনি দারুল উলূম নদওয়া উলামার ত্রৈমাসিক বিতর্ক ও দৃষ্টিভঙ্গির সম্পাদক ও কাউন্সিল সদস্য। তিনি অনেক মাদ্রাসা ও সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক। মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি অর্ধশতাধিক বই লিখেছেন।
১৯৭৩ সালের ৭/৮ এপ্রিল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড গঠিত হয়েছিল। এই বোর্ডটি এমন সময়ে তৈরি করা হয়েছিল যখন সরকার একটি অভিন্ন আইনের মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য শরীয়া আইন বাতিল করার চেষ্টা করছিল। এ সময় দত্তক বিল সংসদে পেশ করা হয়। এই বিলটিকে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’র দিকে প্রথম পদক্ষেপ বলা হয়। বর্তমানে চেষ্টা চলছে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ কার্যকর করার।
ভারতে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপির দেওয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির মধ্যে বহুলালোচিত ও বিতর্কিত বিষয় হল অভিন্ন দেওয়ানী বিধি বা ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি। এরকম কোনো আইন বাস্তবায়িত হলে বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, বা সম্পত্তির উত্তরাধিকারের, দত্তক ইত্যাদির মত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সম্পদ্রায়ের মানুষজন নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী যে ভিন্ন ভিন্ন ‘ব্যক্তিগত আইন’ (পার্সোনাল ল’) অনুসরণ করেন, তা আর থাকবে না। ধর্ম, লিঙ্গ, বা যৌন অভিরুচি নির্বিশেষে সবার জন্য একটিই ‘অভিন্ন আইন’ হবে। ভারতে মুসলিমদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে শরীয়াহ বিধি চালু রয়েছে। কিন্তু ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ কার্যকর হলে সেই বিধি গুরুত্ব হারাবে বলে মনে বিশ্লেষকদের অভিমত।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড বরাবরই ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’র বিরোধিতা করে আসছে। বোর্ডের মতে, ভারতের মতো বহু-ধর্মীয়, বহু-সাংস্কৃতিক এবং বহুভাষিক দেশের জন্য এই ধরনের বিধি প্রাসঙ্গিক নয় বা উপকারী নয়। ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত আইন সমুন্নত রাখার জন্য অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড এর আগে সকলের কাছে আবেদনও করেছে।
Leave a Reply