অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে করা একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এর ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বুধবার (তারিখ উল্লেখ নেই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান এ আবেদনটি করেছিলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, “আবেদনে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। আসামিপক্ষের দাবি ছিল, জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধ হয়নি। তাই যুদ্ধ না হলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ট্রাইব্যুনালে হতে পারে না। তাছাড়া আইন সংশোধনের মাধ্যমে গুমের মতো অপরাধ অন্তর্ভুক্ত করাও তারা প্রশ্নবিদ্ধ করেন।”
আবেদনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, ২০২৪ সালের আইন সংশোধনের বৈধতা। জিয়াউল আহসানের পক্ষ থেকে বলা হয়, গুমের ঘটনা ২০২৪ সালের আগে ঘটেছে, তাই সংশোধিত আইনের ভিত্তিতে এই বিচার হওয়া সম্ভব নয়।
আদালত তাদের আদেশে বলেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন অনুযায়ী এই আদালত প্রতিষ্ঠিত। এ আইনের বৈধতা বা সংশোধনকে চ্যালেঞ্জ করার এখতিয়ার ট্রাইব্যুনালের নেই। যদি কোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে তা চ্যালেঞ্জ করার উপযুক্ত স্থান সাংবিধানিক আদালত, অর্থাৎ হাইকোর্ট।
আদালত আরও উল্লেখ করেন যে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার সীমিত করা হয়েছে সংবিধানেই। ফলে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।
প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয় যে, ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ করার বিষয়টি এখানে নয়, বরং তা সাংবিধানিক আদালতে করা উচিত। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারে আইনের সংশোধন বৈধ। অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে সংবিধানই এ ধরনের আইনি সুরক্ষা প্রদান করেছে।”
এ মামলার শুনানিতে আসামিপক্ষের হয়ে আইনজীবী এম আই ফারুকী এবং অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার অংশ নেন।
জিয়াউল আহসান মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, গুম এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
২০১৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে কাজ করছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সংশোধিত আইন ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
আদালতের এ রায়ের ফলে চলমান বিচারে আর কোনো আইনি জটিলতা থাকছে না বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।