অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আগামীকাল শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ। ‘নারী ও কন্যা নির্যাতন বন্ধ করি, নতুন সমাজ নির্মাণ করি’ শীর্ষক শ্লোগানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আগামীকাল ২৫ নভেম্বর থেকে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আজ বিস্তারিত কর্মসূচি জানানো হয়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফৌজিয়া মোসলেম, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মাহফুজা রেহানা বেগম ও সীমা মোসলেম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান এ সংবাদ সম্মেলনে “নারী ও কন্যার প্রতি যৌন সহিংসতা (ধর্ষণ) ও তরুণ প্রজন্মের সম্পৃক্ততা” শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
ড. ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে নারীর প্রতি সহিংসতা মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে সরকারের পাশাপাশি মহিলা পরিষদও কাজ করছে। তবে, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নারী আন্দোলনের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনকেও জোরদার করতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরো সংবেদনশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে ঢাকায় নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধে করনীয় নির্ধারণ ও সামাজিক শক্তিকে সংহত করার লক্ষ্যে ২৮ নভেম্বর জাতীয় কনভেনশনের আয়োজন করা হবে। এছাড়াও বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে গণপরিসরে ও গণপরিবহনে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় করণীয় বিষয়ে প্রশাসন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক, জনপ্রতিনিধি এবং আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময় সভা, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষনের ঘটনা প্রতিরোধে পাড়া, মহল্লায় তৃণমূলের নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীদের সাথে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক সভা এবং নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পোস্টার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার ঘটনায় তরুণদের সম্পৃক্ততা বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিদ্যা বিভাগ ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩৮৪ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৮২.৩ শতাংশ তরুণ মনে করে যে, যুব জনগোষ্ঠীর যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার প্রবণতা বেশি এবং ৫৯.৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন যুব জনগোষ্ঠী যৌন সহিংসতার অপরাধী হওয়ার প্রবণতা বেশি।
গবেষণা প্রতিবেদনে তরুণ সমাজকে এই ভয়াবহ অপরাধ প্রবণতা থেকে রক্ষা করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুবকদের শিক্ষামূলক জীবনমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান, যৌন শিক্ষার মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি রোধ করা এবং এর বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়। এতে শিক্ষা পাঠ্যক্রম ও যথাযথ শিক্ষক প্রশিক্ষণেরও সুপারিশ করা হয়।
১৯৮১ সাল থেকে বিভিন্ন দেশের নারী অধিকার কর্মীরা ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালন করে আসছে। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনা মানবাধিকার সম্মেলনে এ দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ নারী নির্যাতন দূরীকরণ বিষয়ক ঘোষণা গ্রহণ করে এবং ২০০০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ২৫ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তীতে ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত ১৬ দিনের প্রচারণা কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রতিবছর বিশ্বের দেশে দেশে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে নারী নির্যাতন দূরীকরণ দিবস পালনসহ ১৬ দিনের প্রচারণায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
Leave a Reply