অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আফগানিস্তানের ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সেদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি রোজা ওতুনবায়েভা। আফগানিস্তানকে সহায়তাকারী জাতিসংঘ মিশনের প্রধান রোজা ওতুনবায়েভা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভায় বলেছেন: “২০২৫ সালে আফগান জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হবে।” পার্সটুডে এসব তথ্য জানিয়েছে।
ওতুনবায়েভা আরও বলেছেন, “কয়েক দশকের যুদ্ধ ও চরম দারিদ্রের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নারী ও শিশুদের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে আফগানরা এখনও গুরুতর মানবিক সংকটের মুখোমুখি।”
তিনি বলেন: “সাহায্য তহবিল হ্রাসের বিষয়টি বর্তমানে আফগান জনগণের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে এবং এই প্রভাব অব্যাহত থাকবে।”
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, “গত মাসে আফগানিস্তানে ২০০ টিরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে আনুমানিক ১৮ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”
ওতুনবায়েভা আরও বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন আফগান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো এটা নির্ধারণ করা যে তারা আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একীভূত করতে চায় কিনা। যদি তারা সেটা চায় তাহলে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তারা প্রস্তুত কিনা সেটাও দেখতে হবে।”
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্ররা ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে আক্রমণ করে। ২০ বছর ধরে দখলদারিত্বের পর ২০২১ সালে ১৫ আগস্ট তারা দেশটি থেকে পিছু হটে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন দখলদার বাহিনী সন্ত্রাসবাদ, অনিরাপত্তা, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের ভারে ন্যুব্জ এক আফগানিস্তান রেখে যায়।
২০২১ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি আফগানিস্তানে ২০ বছরের মার্কিন যুদ্ধের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, এই যুদ্ধে ২ লাখ ৪১ হাজার আফগান নিহত হয়েছে। অবশ্য এই পরিসংখ্যানে রোগ-ব্যাধি এবং খাদ্য, পানি ও অবকাঠামোগত সমস্যা অথবা আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের অন্যান্য পরোক্ষ পরিণতির কারণে যারা মারা গেছেন তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এই সময়ে লাখ লাখ আফগান নাগরিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে ইরান ও পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে ৮০ লক্ষেরও বেশি আফগান শরণার্থী অবস্থান করছে। আফগান শরণার্থীর সংখ্যাই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের নিবন্ধিত আফগান শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ৭০ লাখ।
এছাড়াও, সেভ দ্য চিলড্রেনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন ২ কোটি আফগান শিশু অবিস্ফোরিত বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নিহত বা পঙ্গু হওয়ার ভয়ে ঘুম থেকে ওঠে। তাদের মধ্যে ৩৮ লাখের বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন এবং ছয় লাখ মানুষ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে, যুদ্ধের আগে ৬২ শতাংশ আফগান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন এবং যুদ্ধের পরে এই সংখ্যা বেড়ে ৯২ শতাংশ হয়েছে। এদিকে, যুদ্ধ শুরুর আগে আফগানিস্তানে দারিদ্র্যের হার ৮০ শতাংশ ছিল। ২০ বছরের যুদ্ধের পর তা বেড়ে ৯৭ শতাংশে পৌঁছেছে।