21 Dec 2024, 11:49 pm

আল্লাহর উদ্দেশ্যে অপরকে ভালবাসা ও ঘৃণা করা সম্পর্কিত হাদীসে কুদসীসমূহ (বাংলা অর্থ)

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

মানুষ নিজের রুচি অনুযায়ী সমভাবাপন্ন সঙ্গীর সঙ্গ পছন্দ করে থাকে। এ মূলনীতি অনুসারে মুসলমান পরস্পর অন্য ধর্মীয় মানুষের চেয়ে বেশি ভালবাসবে, এটাই স্বাভাবিক। আর একই পথের পথিকদের মধো ভালবাসা ও সৌহার্দ্য সৃষ্টির মূল কারণ হলো তাদের গন্তব্য স্থল একই। মুসলমানদের পরস্পরের সাথে প্রেম ও প্রীতির বন্ধনের মূল সূত্র ইসলাম।
মুসলমানদের পরস্পরের ভালবাসা শুধু মানুষের উদ্দেশ্যে মানুষকে ভালবাসা নয়, বরং আল্লাহর­ সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে ভালবাসা। রসূলে মাকবুল সল্লাল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্র­াম-এর নির্দেশও তাই। দুনিয়ার সুখ-সুবিধা বা স্বার্থের খাতিরে মুসলমানের প্রেম ও ভালবাসা গড়ে উঠা নাজায়েয। শুধুমাত্র আল্ল­াহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কারও সঙ্গে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াই তাদের পক্ষে আবশ্যক।
ঘৃণা পোষণের বিষয়েও ঠিক একই রকম। লৌকিব স্বার্থে উদবুদ্ধ হয়ে অথবা প্রবৃত্তির প্ররোচণায় কারও প্রতি ঘৃণা বা বৈরীভাব পোষণ করা নাজায়েয। তবে আল্ল­াহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচারী ব্যক্তির প্রতি ঘৃণা পোষণ করা মু’মিনের জন্য জায়েয ও স্বাভাবিক। আল্ল­াহ ও তাঁর রসূলের শিক্ষাও  তাই।

১. মহান আল্লাহ­ তা’আলা শেষ বিচারের দিন বলবেন, “ঐ সকল ব্যক্তি কোথায় যারা দুনিয়াতে আমার মহত্তে¡র দিকে লক্ষ্য রেখেই একে অপরকে ভালবাসত? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়াতলে আশ্রয় দান করব। আজ আমার ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া নাই।” ইমাম আহমদ ও ইমাম মুসলিম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

২. মহান আল্ল­াহ তা’আলা বলেছেন, “আমার উদ্দেশ্যে যারা পরস্পরকে বন্ধু করেছে তাদের জন্য আমার ভালবাসা নির্ধারিত হয়েছে। তাদেরকে শেষ বিচারের দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না, আরশের তলে ছায়া দান করব।” ইবনুল আবিদ দুনিয়া উবাদা ইবনে সামিত (রা)-এর সূত্রে আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।

৩. হাদীসে কুদসীতে আল্ল­াহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, “আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরকে যারা ভালবাসে, আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরের সাথে যারা উঠা-বসা করে, আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরের সাথে যারা খরচ করে এবং আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরকে যারা পরিদর্শন করে, আমার ভালবাসা তাদের জন্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে।” ইমাম আহমদ ও ইবনে হাব্বান আলোচ্য হাদীসখানা হযরত মুয়ায (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৪. আল্ল­াহ তা’আলা বলেছেন, “আমার ভালবাসা সে সকল মানুষের জন্য নির্ধারিত, যারা আমার খাতিরে পরস্পরের সাথে উঠা-বসা করে। আর আমার ভালবাসা সে সব মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে যারা আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরের জন্য ধন-সম্পদ খরচ করে। আর আমার ভালবাসা সে সকল ব্যক্তির জন্য ধার্য হয়েছে, যারা আমার খাতিরে পরস্পরের সাথে সাক্ষাত করে।” তিবরাণী আলোচন্য হাদীসখানা উবাদাহ ইবনে সামিত (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৫. মহান আল্ল­াহ তা’আলা বলেন, “নিশ্চয়ই আমি দুনিয়ার অধিবাসীগণকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করি। অতঃপর যখন আমি আমার ঘর আবাদকারী, আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরের বন্ধুত্ব বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি ও খুব ভোরে আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনাকারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করি, তখন আমি তাদের উপর থেকে সে শাস্তি দূর করে দেই।” ইমাম বায়হাকী আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।

৬. মহান আল্ল­াহ তা’আলা বলেন, “নিশ্চয়ই আমি দুনিয়ার অধিবাসীগণকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করি। অতঃপর যখন আমি আমার ঘর  আবাদকারী,  আমার  উদ্দেশ্যে  পরস্পরের বন্ধুত্ব বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি ও খুব ভোরে আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনাকারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করি, তখন আমি তাদের উপর থেকে সে শাস্তি দূর করে দেই।” ইমাম বায়হাকী আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।

৭. এমন কোন যুবক, যে ইহকালের স্বাদ ও এর প্রমোদ ত্যাগ করে এবং তার যৌবনের প্রবণতার পরিবর্তে আল্ল­াহ তা’আলার আদেশ পালনকে গ্রহণ করে, আল্ল­াহ তাকে বাহাত্তর জন সত্যবাদী ধর্মভীরু ব্যক্তির সমপরিমাণ প্রতিদান দান করেন। অতঃপর আল্ল­াহ তা’আলা বলেন, “ওহে কামনা ত্যাগী ও আমার জন্য যৌবন উৎসর্গকারী যুবক! তুমি আমার নিকট আমার কোন কোন ফেরেশতার ন্যায় মর্যাদাশীল।” হযরত হুসাইন ইবনে সুফিয়ান আলোচ্য হাদীসখানা শুরাইহ (রা)/(রঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
[মহান আল্র­াহর জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভালবাসার ভেতর দিয়ে প্রেমিক যুবক ফেরেশতার মর্যাদা অর্জন করতে পারে। অতএব, আল্ল­াহর উদ্দেশ্যে নিজের প্রেম ও ভালবাসা নিয়োজিত করা প্রত্যেক যুবকের জন্য আবশ্যক।]

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2681
  • Total Visits: 1405656
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ১৯শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১১:৪৯

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018