১. হযরত মূসা (আ) কে বনী ইসরাঈল প্রশ্ন করল,“ হে মূসা তোমার প্রভু কি দয়া করেন?” মূসা বললেন, “আল্লাহকে ভয় কর হে বনী ইসরাঈল! তখন আল্লাহ্ বললেন, “হে মূসা! তোমার সম্প্রদায় তোমাকে কি বলেছে?” তিনি বললেন “হে আমার রব! আপিনি তা জানেন।” তারা বলেছে, “তোমার রব কি রহম করেন?” তিনি (আল্লাহ্) বললেন,“ “তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমার বান্দাদের প্রতি আমার রহম করার অর্থ এই যে, আমার রহমত আমার গযবের ওপর প্রাধান্য লাভ করেছে। যদি তা না হত, তবে আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিতাম।” ইবনে আসাকির আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা)- এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২. হযরত দাউদ (আঃ) তাঁর প্রভুকে সম্বোধন করে বললেন, “হে আমার প্রভু! তোমার নিকট তোমার বান্দাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি প্রিয়,
যাকে তোমার ভালবাসার খাতিরে আমিও ভালবাসতে পারি?” তিনি বললেন, “হে দাউদ ! আমার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রিয় সেই
সংযমশীল রূহ ও সেই পবিত্র হাত বিশিষ্ট বান্দা, যে কারো কোন অনিষ্ট করে না এবং কারোও অগোচরে তার মন্দ বলে বেড়ায় না। সে এরূপ অবিচল চিত্র যে, পাহাড়ও স্ব-স্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, কিন্তু সে বিচ্যুত হয় না। আর সে আমাকে ভালবাসে, আর সেই সঙ্গে যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে তাকেও সে ভালবাসে। আর সে আমাকে আমার বান্দাদের নিকট প্রিয় করতে প্রয়াস পায়।” তিনি (দাঊদ) বলেন, “হে রব! তুমি নিশ্চয়ই জান যে, আমি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু আমি কিরূপে তোমাকে তোমার বান্দাদের নিকট প্রিয় করব?” তিনি বললেন, “তুমি তাদেরকে আমার নিয়ামত, আমার সম্পদ ও করুণার কথা স্বরণ করিয়ে দাও। হে দাঊদ! আমার বান্দাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উৎপীড়িতের সাহায্য করে, অথবা উৎপীড়নের সময় তার পাশে থাকে, আমি সেই দিন তার পদদ্বয় ঠিক রাখব যেদিন পা পিছলিয়ে যাবে।” বায়হাকী আলোচ্য হাীসখানা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন।
৩. বনী ইসরাঈলগণ বলল, “হে মূসা ! তোমার রব কি নিদ্রা যান?” তিনি বললেন, “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।” এ সময় তার রব তাকে ডেকে বললেন, “হে মূসা! তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করতেছে তোমার রব কি নিদ্রা যান? শোন, তুমি তোমার এ হাতে দুটি কাঁচের পাত্র লও এবং রাত্রিতে দাঁড়িয়ে থাক।” অতঃপর মূসা তা করলেন। যখন রাত্রির একÑতৃতীয়াংশ অতিক্রম করল, তখন মূসার নিদ্রা আসল এবং তিনি তার হাটুর উপর ঝুকে পড়লেন। আবার তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং পাত্র দুটিকে মজবুত করে ধরলেন, অবশেষে শেষ রাত্রি আসলে, তিনি পুনরায় নিদ্রাভিভূত হয়ে পড়লেন , সাথে সাথে কাঁচপাত্র দুটি হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেল। তখন তিনি (আল্লাহ্) বললেন, “হে মূসা ! যদি আমি ঘুমাতাম তবে আকাশসমূহ ও যমীন আমার নিয়ন্ত্রণচ্যুত হয়ে পড়ে যেত, যেভাবে চাঁচ পাত্র দুটি তোমার হাত থেকে পড়ে গেল। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তার নবীর ওপর ‘আয়াতুল কুরসী’ অবর্তীর্ণ করলেন। ইবনে আবু হাতিম প্রমুখ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৪. হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর রবকে প্রশ্ন করেছিলেন এবং বলেছিলেন, “হে রব! যে ব্যক্তি তোমার প্রসংশা করে, তার প্রতিদান কি? তিনি বললেন, প্রশংসা কৃতজ্ঞতার চাবি: আর কৃতজ্ঞতা তার নিয়ে বিশ্বজগতের প্রতিপালকের আরোশ পর্যšত্ম আরোহণ করে।” তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, “যে ব্যক্তি তোমার গুণকীর্তন বা তাসবীহ বর্ণনা করে, তার প্রতিদান কি?” তিনি বললেন, “তাসবীহের রহস্য জগতের প্রতিপালক ছাড়া অন্য কেউ অবগত নয়।” দায়লামী আলোচ্য হাদীখানা হযরত আনাস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৫. হযরত মূসা (আঃ) তার প্রতিপালককে ছয়টি বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন, যেগুলোকে তিনি নিজের বিশেষ বৃত্তে বলে মনে করতেন। আর সপ্তমটি, যা তিনি পছন্দ করতেন তা মূসার জন্য ছিল না। তিনি প্রশ্ন করলেন, “হে রব! আপনার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে ধর্মভীরু কে?” তিনি বললেন, “আল্লাহকে যে স্বরণ করে এবং তাঁতে বিস্মৃত হয় না।” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার কোন বান্দা সবচেয়ে হিদায়াতপ্রাপ্ত?” তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি সৎপথ অনুসরণ করে।” তিনি প্রশ্ন করলেন, “ আপনার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী নির্দেশ মান্যকারী কে?” তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি জনগণকে সে আদেশই দেয়, যা সে নিজেকেও দিয়ে থাকে।” তিনি বললেন, “অতঃপর আপনার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে কোন ব্যক্তি সবচেয়ে জ্ঞানী।” তিনি বললেন, “যে জ্ঞানার্জনে কখনও তৃপ্ত হয় না, মানুষের অর্জিত জ্ঞানকেও যে ব্যক্তি নিজের জ্ঞানের মধ্যে জমা করতে থাকে।” তিনি প্রশ করলেন, “আপনার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানের অধিকারী কোন ব্যক্তি ?” তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হওয়া সত্তেও ক্ষমা করে দেয়।” তিনি বললেন, “আপনার কোন বান্দা সবচেয়ে ধনী?” তিনি বললেন, “সেই ব্যক্তি যে নিজের প্রাপ্ত সম্পদেই সন্তুষ্ট থাকে।” তিনি বললেন, “আপনার কোন বান্দা সবচেয়ে বেশি গরীব?” তিনি বললেন, “মুসাফির।” অতএব, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাদীসে বলেছেন। ধনের প্রাচুর্য দ্বারা কেউ ধনাঢ্য হয় না। আতœার প্রাচুর্যই প্রকৃত ধনাঢ্যতা। অতঃপর আল্লাহ্ যখন কোন বান্দার কল্যাণ করতে চান, তখন তিনি তাকে অন্তরের ঔষার্য দান করেন, তার অন্তরকে সংযম দ্বারা শক্তিশালী করেন। আর আল্লাহ্ যখন কোন বান্দার অকল্যাণ চান, তখন তিনি তার সম্মুখে দারিদ্র্যকে স্থাপন করেন অর্থাৎ সর্বদা সে নিজেকে পরমুখাপেক্ষী ধারণ করে, হীনমন্যতার চিহ্ন তার মধ্যে চিরস্থায়ী হয়।” ইমাম বায়হাকী ও ইবনে আসাকির আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।
Leave a Reply