অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মুক্তিপ্রাপ্ত ইয়েমেনি বন্দীদের প্রথম দল গত ১৪ এপ্রিল সানা বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। বন্দি বিনিময় করা ইয়েমেনে যুদ্ধরত পক্ষের মধ্যে সংলাপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল। বিগত আট বছরে যখনই আলোচনা হয়েছে তখনই বন্দী বিনিময়ের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।
গত ২০ মার্চ সুইজারল্যান্ডে ইয়েমেন যুদ্ধে আটক বন্দীদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সে সময় আনসারুল্লাহর ৭০৬ জন বন্দী এবং অপরপক্ষে সৌদি ও সুদানসহ আরো অন্য দেশের আটক ১৮১ জন সেনাকে মুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল। চার ধরনের বন্দী রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে আনসারুল্লাহ সমর্থিত ইয়েমেনের বর্তমান হুথি সরকারের বন্দী, ইয়েমেনের পদত্যাগ করা সরকারের বন্দী, মাআরিবের বন্দী এবং সৌদি আরব ও তার ভাড়াটে সেনাদের বন্দী। ইয়েমেনে যুদ্ধবন্দীদের বিনিময় পবিত্র রমজান মাসের ১৯ তারিখে শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি জানায় মারিব ফ্রন্টে হামলাকারীদের প্রস্তুতি না থাকার কারণে বন্দী বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন স্থগিত ছিল।
যাইহোক, বর্তমানে তিন ধাপে বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের প্রথম পর্যায় হবে সানা ও এডেনের মধ্যে, দ্বিতীয় পর্যায়টি হবে সানা ও রিয়াদের মধ্যে এবং তৃতীয় পর্যায়টি হবে সানা ও মারিবের মধ্যে। এই পর্যায়ে ৮০০ বন্দী মুক্তি পাবে। বন্দীদের এই বিনিময়কে ইয়েমেন যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে দেখা হচ্ছে। যদিও উভয় পক্ষ ২০২০ সালের অক্টোবরে এক হাজারেরও বেশি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছিল।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এমন সময় এ বন্দী বিনিময় হচ্ছে যখন ইয়েমেনি ও সৌদিরা যুদ্ধ অবসানের জন্য একমত হয়েছে এবং উভয়পক্ষ যুদ্ধ না করার ব্যাপারে আন্তরিকতা দেখিয়েছে। চলমান বন্দী বিনিময়ের বিষয়টিকে এরই আলোকে মূল্যায়ন করতে হবে। বন্দী বিনিময় চুক্তির সফল বাস্তবায়ন এই যুদ্ধবিরতি এবং ইয়েমেনে যুদ্ধের সমাপ্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ক্ষেত্র তৈরি করত পারে। প্রকৃতপক্ষে, বন্দী বিনিময় বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যকার আস্থা আরো বাড়িয়ে দেবে।
আরব বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং দৈনিক রাই আল ইয়াওমের সম্পাদক আব্দুলবারী আতাওয়ান বলেছেন, ‘আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের হস্তক্ষেপ বন্ধ হলে ইয়েমেন সংকটের অবসান ঘটবে এবং বর্তমানে বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়া সংঘাত অবসানে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে’।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বন্দী বিনিময় সংক্রান্ত আলোচনা ওমানের মধ্যস্থতায় হয়েছে যার এই ক্ষেত্রে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ থেকে অনেক দূরে থেকে ওমান এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করেছে। বলা যায়, মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে ইয়েমেনে যুদ্ধের পক্ষগুলো ওমান সরকারের ওপর আস্থা রেখেছে এবং এই আস্থার কারণেই গত চার বছরে ওমান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। ইয়েমেনে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে ওমানের সফল মধ্যস্থতা প্রমাণ করেছে যে, বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকলে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের সংকট আর বাড়বে না এবং শুধুমাত্র এই অঞ্চলের দেশগুলোর মাধ্যমেই যে কোনো সংকটের অবসান ঘটবে। এ কারণে ইয়েমেন সংকটের অবসান এবং বন্দী বিনিময়ের বিষয়টিকে এ অঞ্চলের জনগণ স্বাগত জানিয়েছে।
Leave a Reply