26 Nov 2024, 08:39 pm

ইরাককে ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র প্রস্তুতকারক’ হিসেবে মার্কিন মিথ্যা দাবির জবাব আজও মিলেনি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন  সীমান্তবাণী ডেস্ক : ২০ বছর আগে ২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারীতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে অ্যানথ্রাক্স এজেন্টযুক্ত একটি টেস্ট টিউব দেখিয়ে এটিকে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অস্তিত্বের পক্ষে একটি যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। গতকাল ইতিহাসের সবচেয়ে বিপর্যয়কর মিথ্যার ২০ তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে কিন্তু আমেরিকা আজও ইরাকে হামলার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেয় নি।

নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠকের এই পরিণতি ছিল যে ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আগ্রাসন ও দখল, দেশটির রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন, লাখ লাখ মানুষের হতাহত ও আহাজারি, লাখ লাখ মানুষের শরণার্থীতে পরিণত হওয়া এবং পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে একটি বৃহৎ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থান। কিন্তু এই হামলার কারণ হিসেবে ইরাকে প্রস্তাবিত গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অস্তিত্ব এবং এই অজুহাতে সেখানে মার্কিন আগ্রাসনের কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে মার্কিন বাণিজ্য কেন্দ্র টুইনটাওয়ারে হামলার পর বুশ প্রশাসন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে এবং গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে ২০০৩ সালের মার্চ মাসে ইরাকে  হামলা চালায়। ইরাকে সামরিক আগ্রাসন যা তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে পরিচালিত হয়েছিল এতে ইরাকি জনগণের ব্যাপক প্রাণহানি ছাড়াও কয়েক হাজার মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতির উপর এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।

জর্জ বুশ ইরাকের বিরুদ্ধে এমন একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছিলেন যখন মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রত্যক্ষ করেছিল যে হোয়াইট হাউস এমন একটি দেশের বিরুদ্ধে হামলার ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ব্যাপকভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল যে দেশটি কখনো আমেরিকায় হামলা চালায় নি কিংবা আমেরিকায় হামলা চালানোর বিষয়ে কখনো হুমকিও দেয় নি।

যাইহোক বুশ যখন ইরাকে আক্রমণ করেছিলেন তখন তিনি দাবি করেছিলেন যে ইরাককে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থেকে নিরস্ত্র করতে এবং এর জনগণকে মুক্ত করার জন্য এই হামলা শুরু করেছিলেন যাতে বিশ্ব একটি বড় বিপদ থেকে মুক্তি পায়।সরলভাবে বুশও বাথ শাসনকে উৎখাত করে ইরাকে আমেরিকার প্রাথমিক বিজয়ের পর ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন।

এদিকে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কেনেডি স্কুল ২০১৩ সালের প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছে যে ইরাক এবং আফগানিস্তান যুদ্ধগুলো আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধ এবং এতে সাধারণত চার থেকে ছয় ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে খরচ হয় যা প্রতিটি আমেরিকান পরিবারের জন্য ৭৫ হাজারের সমতুল্য।

অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের ৫ ফেব্রুয়ারির বক্তব্যকে ‘বিশ্ব সমাজের সঙ্গে আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রতারণা’ বলে মন্তব্য করেন রুশ পার্লামেন্ট স্পিকার ভিয়াচিস্লাভ ভলোদিন। তিনি পাওয়েলের সেদিনের বক্তব্য স্মরণ করে বলেন, পাওয়েল সেদিন ইরাককে ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র প্রস্তুতকারক’ হিসেবে অভিযুক্ত করে প্রমাণ হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদে এক শিশি ‘হোয়াইট পাউডার’ তুলে ধরেছিলেন।

পাওয়েলের ওই প্রতারণামূলক বক্তব্য সত্ত্বেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরাক আগ্রাসনের অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু আমেরিকা তার সকল অপকর্মের সহচর ব্রিটেনকে নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরাকে আগ্রাসন চালায়।কিন্তু সারা ইরাক তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি। এর আগে বাগদাদ শত শত বার দাবি করেছিল, দেশটির কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 11137
  • Total Visits: 1320544
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৪শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৮:৩৯

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018