অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব রোজমেরি ডি কারলো বলেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ছয় জাতিগোষ্ঠীর সাথে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা সবচেয়ে উত্তম পন্থা। একই সাথে তিনি ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য আমেরিকার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে জাতিসংঘে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব এসব কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, গত বছর ডিসেম্বরে আইএইএর নির্বাহী বোর্ডে আমি সর্বশেষ প্রতিবেদন তুলে ধরার সময় বলেছিলাম ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে সবাইকে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে হবে। কিন্তু গত প্রায় ছয় মাস হলো এই সমঝোতা পুনরুজ্জীবন বিষয়ক আলোচনা অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে।
জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব রোজমেরি ডি কারলো আরো বলেছেন, ‘ইরানের সাথে পাশ্চাত্যের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার একমাত্র কার্যকর উপায় হচ্ছে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং অবিলম্বে সবাইকে আলোচনায় বসতে হবে। আমি ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে জাতিসংঘ মহাসচিবের দাবির পুনরাবৃত্তি করছি এবং একই সাথে ইরানের তেল বাণিজ্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ারও আহবান জানাচ্ছি’।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের ৮মে একতরফাভাবে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর জাতিসংঘে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের বিরোধিতা উপেক্ষা করে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যাতে ইরান মার্কিন অন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। ট্রাম্প প্রশাসন সেসময় ব্যাপক প্রচার চালিয়ে ইরানকে তাদের ১২টি দাবি মেনে নিতে আহŸান জানায়। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ২০১৮ সালে ওই দাবি উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ইরান ওই দাবির কাছে মাতা নত তো করেনি বরং আমেরিকাকে সুযোগ করে দেয়ার জন্য এক বছর পর্যন্ত পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে ইরান অটল ছিল। এরপরও ওয়াশিংটন তার অবস্থানে অটল থাকলে তেহরান পাঁচ দফায় পর্যায়ক্রমে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে। অর্থাৎ ইরান এরপর থেকে পরমাণু ক্ষেত্রে আর কোনো সীমাবদ্ধতা মানেনি এবং ইচ্ছামতো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রেখেছে।
এরপর বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারের সময় দাবি করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে এসে ভুল করেছেন যা ছিল মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থী এবং এতে করে বরং আমেরিকাই বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়বে। কিন্তু পরে দেখা গেল বাইডেন ক্ষমতায় এসেও ইরান বিরোধী সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে তার নীতির কোনো পার্থক্য নেই। এ অবস্থায় জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব রোজমেরি ডি কারলো ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য যে আহŸান জানিয়েছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।