24 Nov 2024, 02:39 am

ইসরাইলি বাহিনীর অনুকরণে হাসপাতালে বিএনপির হামলা ন্যাক্কারজনক : তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ২৮ অক্টোবর সমাবেশের নামে হাসপাতাল, পথচারী, সাংবাদিক, পুলিশ এবং বিভিন্ন স্থাপনার ওপরে বিএনপির হামলাকে ইসরাইলি বাহিনী ও একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার সাথে তুলনা করেছেন।
তিনি আজ দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, ‘ইসরাইলি বাহিনী গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়ে প্রায় আটশ’ মানুষকে হত্যা করার পরও বিএনপি এবং জামাত এই বর্বরতার বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি বরং ইসরাইলি বাহিনীর অনুকরণে তারা শনিবার হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। আর একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজারবাগে হামলা চালিয়েছিলো, শনিবার বিএনপি-জামাতও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে, বিশটির বেশি এম্বুলেন্স জ্বালিয়ে দিয়েছে। দেশের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দল হাসপাতালে এ রকম হামলা করেছে বলে আমার জানা নেই।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির কর্মীরা সমাবেশের নামে নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল, বিজয়নগর, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে একজন পুলিশকে পিটিয়ে পরে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। তাদের হামলায় আরো একশ’র বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে এবং এদের দুইজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া, আনসারের ২৫ জন এবং ২১ জন সাংবাদিক আহত হয়েছে। তারা প্রায় শতাধিক গাড়ি পুড়িয়েছে। শনিবার রাতে আমরা ঢাকা মেডিকেল ও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে গেছি। দেখেছি বহু পুলিশ সদস্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে। বিএনপির কর্মীরা বেশিরভাগ পুলিশের মাথায় আঘাত করেছে যাতে মৃত্যু হয় এবং যে পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তার খুলি নামিয়ে ফেলা হয়েছে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য।’
দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে কখনো এর আগে হামলা হয়নি উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের কথা বলে বিএনপি সমাবেশ শুরুর আগেই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। প্রধান বিচারপতি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, প্রধান বিচারপতি একটি প্রতিষ্ঠান, বিচার বিভাগের প্রধান, তার বাসভবনে তারা হামলা চালিয়েছে এবং সেখানে ঢুকে পড়েছে। ইতিপূর্বে বিএনপির আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির খাস কামরায় লাথি মেরেছিলো, সেটিও বিচার বিভাগকে তাদের তোয়াক্কা না করার প্রমাণ।’
এ দিন সাংবাদিকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর যে হামলা বিএনপি জামাত চালিয়েছে আমি সেটির তীব্র নিন্দা জানাই। গণমাধ্যমকর্মীরা কোনো দলের পক্ষ হয়ে সেখানে যায়নি, নিউজ কাভার করতে গেছে এবং তারা বিএনপি বিটের সাংবাদিক, তাদের ওপর কেন হামলা হলো? গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। এগুলোর বিচার হবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব গতকাল নিহত শামীম মিয়াকে যুবদল নেতা বলে দাবি করেছেন, অথচ নিহতের পরিবার বলছে তিনি কোনো রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না এবং তার গায়ে কোনো আঘাত নাই এবং হাসপাতাল বলছে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। অর্থাৎ হত্যার দায় এড়ানোর জন্য বিএনপি আবারও মিথ্যাচার করছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি এইভাবে যখন তান্ডব শুরু করে তখন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী এই তান্ডব বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। তখন বিএনপির নেতারা প্রথমে মঞ্চ ত্যাগ করে চলে যায়, তার সাথে সাথে তাদের কর্মী-সমর্থকরাও চলে যায়। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি চর্চা করার স্বার্থেই তারা যেখানে চেয়েছে সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সার্বিকভাবে সহায়তাও করা হয়েছে। কিন্তু কয়লা ধুলে ময়লা যায় না, বিএনপিরও চরিত্র কখনো বদলায় না। এটিই প্রমাণিত হলো।’
‘২০১৩-১৪-১৫ সালের পুনরাবৃত্তি আর নয়’: ‘বিএনপি-জামাত আবার ২০১৩-১৪-১৫ সালের রূপে ফেরত আসছে কি না’ সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল এভাবে বর্বরতা করতে পারে না। এর দায় শুধু যারা করেছে তাদের নয়, দায় এর নির্দেশদাতাদের। যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা দায় এড়াতে পারেন না। কারণ তারা এর প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলো। তারা পুলিশের ওপর বোমা এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে এবং পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে বিধায় বিএনপির নেতাকর্মী আহত হয় নাই। ওরা হয়তো মনগড়া তথ্য দেবে কিন্তু পদদলিত হয়ে বা নিজেদের লাঠি বা ককটেলের আঘাত ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা আহত হয় নাই।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই হামলা কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না, এগুলো সন্ত্রাসী দলের কাজ। শনিবার এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করার উদ্দেশ্যেই বিএনপি সারাদেশ থেকে সন্ত্রাসীদের ঢাকায় সমবেত করেছে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করা, তাদেরকে নিবৃত্ত করা, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমাদের দায়িত্ব দেশে শান্তি, শৃঙ্খলা, জনগণের মধ্যে স্বস্তি স্থাপন করা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে দিতে পারি না। তাই যারা এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে, ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করছে বা করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
যুক্তরাষ্ট্র শনিবার সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরাও সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি। এবং আশা করবো, যারা পুলিশ মেরেছে, পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, যারা জাজেস কমপ্লেক্সে, হাসপাতালে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে।’
‘যেভাবে হরতাল’: ‘বিএনপিই হামলা করলো, তারাই আবার হরতাল দিলো’ সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভিডিওতে দেখলাম যে, মির্জা ফখরুল সাহেবকে পেছন থেকে বলছে যে, স্যার হরতাল ডাকেন  ডাকেন। তখন ফখরুল সাহেব বলছেন, আমরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেবো। আর পেছন থেকে বলা হলো না না এখানেই ডেকে দেন। তখন ফখরুল সাহেব হরতাল ডেকে দিলেন। কিন্তু হরতাল তো কেউ মানছে না, রাস্তায় গাড়িঘোড়া চলছে, অফিস আদালত খোলা, কোনো কোনো জায়গায় জ্যাম লেগেছে, হরতাল একটি ভোঁতা অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। যখন জনগণ এই হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে এতেই প্রমাণিত হয় তাদের সমস্ত কর্মকান্ড জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।’ এরপরও বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেখুন কেউ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাইলে আমরা তো কখনো বাধা দেইনি। গণতান্ত্রিক দেশে শান্তি সমাবেশে বাধা দেওয়া সমীচীন নয়। আমরা আশা করবো বিএনপি চরিত্রটা বদলাবে। এবং তারা স্বাভাবিক রাজনীতি রীতিনীতি গণতান্ত্রিক চর্চা করবে, এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে তারা সরে আসবে।’
‘জো বাইডেনের উপদেষ্টা: বিএনপির জালিয়াতি’ : বিএনপির নয়াপল্টন অফিসে শনিবার সন্ধ্যায় ‘জো বাইডেনের উপদেষ্টা’ হাজিরের গুজব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান। মন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন একজন ব্যক্তি একটু ইংরেজি বলতে পারে তাও তিনি যে নেটিভ আমেরিকান নন, সেটা তার উচ্চারণে বোঝা যায়। তাকে নিয়ে গিয়ে তারা সেখানে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে এবং পরিচয় দিয়েছে ‘জো বাইডেনের উপদেষ্টা’। মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে বলেছে সে সরকারের কেউ নয় এবং মির্জা ফখরুল সাহেবও বলেছে তার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। বিএনপি যে শুধু সন্ত্রাসী নয়, জালিয়াত রাজনৈতিক দল, এটি তারই প্রমাণ। তারা ইতিপূর্বে কংগ্রেসম্যানদের সই জাল করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছিলো।’
ড. হাছান বলেন, ‘তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, সেই ব্যক্তিটি ইসরাইলের একজন এজেন্ট। আপনারা জানেন, ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিএনপি জামাত কিছু বলেনি। এ জন্য ইসরাইল বিএনপির ওপর সন্তুষ্ট। সে কারণে ইসরাইলি এজেন্টকে তারা পাঠিয়েছে যাকে নিয়ে বিএনপি গতকাল সভা করেছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 11343
  • Total Visits: 1284563
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ২:৩৯

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018