অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফিলিস্তিনি জাতির বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অপরাধজ্ঞ অব্যাহত থাকার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সংসদ সদস্যরা তাদের দেশে ইসরাইলের দূতাবাস বন্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হবে, তেল আবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে এবং ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর রাষ্ট্রদূতকে প্রিটোরিয়া থেকে বহিষ্কার করা হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা আফ্রিকা মহাদেশের বৃহৎ এবং প্রভাবশালী দেশগুলির মধ্যে একটি যেটি বর্ণবাদের কঠিন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সে বিশ্বের জাতিগত বৈষম্য এবং বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। দক্ষিণ আফ্রকার মানুষ নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে শ্বেতাঙ্গ শাসক গোষ্ঠীর বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে লড়াই করে অবশেষে বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। ফলে এটা লক্ষণীয় বিষয় যে গত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ এবং সরকার বিশ্বের যেকোনো জায়গায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কর্তৃপক্ষের মতে ইসরাইলি শাসন হল একটি বর্ণবাদী শাসন যা ইহুদিদেরকে মুসলিম ফিলিস্তিনিদের চেয়ে উচ্চতর মনে করে এবং তাদের প্রতি বৈষম্য করে। অতএব, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সর্বদা ফিলিস্তিনিদের মালিকানাধীন জমিতে প্রকাশ্য বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছ। দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী “নালদি পান্দর” এই প্রসঙ্গে বলেছেন: “প্যালেস্টাইনের গল্পটি দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিগত বিচ্ছিন্নতা এবং নিপীড়নের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাক মনে করিয়ে দেয় । “দক্ষিণ আফ্রিকান হিসাবে আমরা জাতিগত বৈষম্য এবং বৈষম্যের প্রভাবগুলো নিজেই অনুভব করেছি এবং ফিলিস্তিনিদের একটি প্রজন্মকে সমাজে নিম্ন স্থানে রাখা হলে আমরা কিছুই করতে পারি না।”
এ প্রসঙ্গে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এবং ইসরাইলি কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের হত্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বারবার ইসরাইলি নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলেছে এবং গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। যাইহোক ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইরের অপরাধজ্ঞের ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ আফ্রিকা এ পদক্ষেপগুলোকে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছে এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী “নালদি পান্ডুর” বলেছেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখের সামনে গণহত্যা সহ্য করা যায় না, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তেল আবিব থেকে নিজেদের কূটনীতিকদের ডাকা হবে।
এছাড়াও, ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অব্যাহত আগ্রাসনের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছে।প্রিটোরিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে গণহত্যার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করতেও বলেছে। এখন এসব বক্তব্যের পর ইসরাইলের সঙ্গে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ এবং কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন করা একটি নীতিগত বিষয় যার জন্য একটি বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন। তাদের মতে, ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ দাবি করার, তাদের নিজস্ব স্বাধীন দেশ পরিচালনা করার এবং স্বাধীনতায় ও বৈষম্য ছাড়াই বসবাস করার অধিকার রয়েছে।
নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি এবং ফিলিস্তিনের অন্যতম রক্ষক নকোসি জুলুল্লেল ম্যান্ডেলা এই প্রসঙ্গে বলেছেন: ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার জন্য ব্যবহারিক সমর্থন প্রয়োজন। যাইহোক ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার পদক্ষেপ এমন সময় নেয়া হলো যখন ইহুদিবাদী শাসক সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আঞ্চলিক অঙ্গনে তার নীতিগুলির ব্যর্থতার পরে আফ্রিকান দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নত এবং প্রসারিত করার জন্য কঠোর চেষ্টা করেছে৷ এই সময় আফ্রিকান দেশগুলো যারা বেশিরভাগই বৈষম্য এবং দমন-পীড়নের বোঝা অনুভব করেছে তারা এখন ইসরাইল এবং এর দখল নীতির বিরুদ্ধে আগের চেয়ে আরও বেশি অবস্থান নিয়েছে।
Leave a Reply