অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং বন্দী বিনিময় সত্ত্বেও, এই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে ইসরাইলের আন্তরিকতা নিয়ে এখনও গুরুতর সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এ সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ কারণে, সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভায়, বেশিরভাগ বক্তা এই চুক্তি বাস্তবায়নে সবার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
, জাতিসংঘে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত এবং স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এক বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেছেন যে গাজায় যুদ্ধবিরতি অবশ্যই একটি স্থায়ী এবং টেকসই সমাধান হতে হবে। তিনি আরও বলেন: ‘গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সাহায্য সরবরাহ এবং গাজায় ব্যাপক পুনর্গঠন পরিকল্পনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজা উপত্যকায় জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা বা আনরোয়ার কার্যক্রম বজায় রাখা এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তার জন্য টেকসই ও প্রয়োজনীয় তহবিল প্রদানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়াও, “পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হামলা যা এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি তা বন্ধ করা জরুরি।’
চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফুতসোং নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে জোর দিয়ে বলেছেন যে, গত ১৫ মাস ধরে গাজায় প্রচণ্ড বোমাবর্ষণের ফলে ৪৬,০০০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ২০ লক্ষ মানুষ ব্যাপক মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন কেবল প্রথম পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজায় স্থায়ীভাবে ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধ করা এবং এ উপত্যকায় মানবিক সংকট নিরসনসহ বেশ কয়েকটি মৌলিক সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করতে হবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন এসব দাবি থেকে বোঝা যায়, যদিও ইসরাইলের ডানপন্থী ক্ষমতাসীন মন্ত্রিসভা প্রতিরোধ শক্তিগুলোর চাপের মুখে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে, তবুও বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার পরে তারা এই চুক্তি মেনে চলবে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর এবং বাস্তবায়নকে ইসরাইল ও নেতানিয়াহুর জন্য পরাজয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং এমনকি কিছু বিশেষজ্ঞ এও করেন যে যুদ্ধবিরতি নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভাকে পতনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।
ইতিমধ্যে, ইসরাইলের অনেক নাগরিক এবং বহু রাজনৈতিক, সামরিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এই চুক্তির প্রতিবাদ করেছে। তারা এটিকে ইসরাইলের পরাজয় এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ শক্তির বিজয় বলে মনে করছে।
১৫ মাসব্যাপী গাজা যুদ্ধের সময় ইহুদিবাদী ইসরাইল সরকার বারবার ঘোষণা দিয়ে বলেছিল যে তারা হামাস এবং গাজার প্রতিরোধকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে চায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরিবর্তে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ইসরাইলি বন্দীদের উদ্ধার করতে চায় এবং সমগ্র গাজা উপত্যকা অথবা অন্তত গাজার উত্তরাঞ্চল জনশূন্য করতে চায়।
কিন্তু এখন তেল আবিব হামাসের সাথে একটি চুক্তির অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে ফিলিস্তিনি বন্দীদের সাথে হামাসের হাতে আটক ইসরাইলি বন্দীদের বিনিময় করতে সম্মত হয়েছে। ইসরাইল এতেও রাজি হয়েছে যে আন্তর্জাতিক সাহায্য হামাসকে সরবরাহ করা হবে এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ শক্তি নিজেরা এসব ত্রাণ বিতরণ করবে। এছাড়াও, ইসরাইল গাজা থেকে তাদের সব সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নেওয়ার অর্থ হল প্রতিরোধ শক্তির ইচ্ছার সামনে পরাজয় মেনে নেওয়া। কেননা প্রতিরোধ শক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী ইসরাইল বন্দী বিনিময়, গাজা থেকে দখলদার সেনা প্রত্যাহার এবং উপত্যকায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ সাহায্যের প্রবেশকে সহজতর করার বিষয়টি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে ইসরাইলের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টির আরেকটি কারণ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের ক্ষমতায় উত্থান। হোয়াইট হাউসে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের সময় নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে গাজা যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন না। এর আগে, এই অঞ্চল সফরকালে ট্রাম্পের দূত হুইটেকারও বলেছিলেন: গাজা চুক্তি কঠিন ছিল এবং বাস্তবায়ন করা আরও কঠিন হতে পারে।#
Leave a Reply