গোলাম হোসেইন মোহসেনি এজেয়ি
অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেইন মোহসেনি এজেয়ি সাম্প্রতিক ইসরায়েলি আগ্রাসনের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের মামলা দ্রুত ও নির্ভুলভাবে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও মামলার নিষ্পত্তিতে যেন কোনো বিলম্ব বা গাফিলতি না হয়—এটি অগ্রহণযোগ্য।”
গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে তিনি এই মন্তব্যগুলো করেছে। ওই হামলায় ইরানের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রও এই হামলায় অংশ নেয়, এবং ইরানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের তিনটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।
ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মোসাদের সঙ্গে সম্পর্কিত নাশকতা চক্র ভেঙে দিয়েছে এবং ইসরায়েলি প্রযুক্তির স্পাইক ক্ষেপণাস্ত্র, আত্মঘাতী ড্রোন ও বিস্ফোরক জব্দ করেছে।
এই অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানী তেহরান ছাড়াও ইসফাহান, আলবোর্জ, মাজানদারানসহ কয়েকটি প্রদেশে ড্রোন ও বোমা তৈরির ওয়ার্কশপে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে অবকাঠামো ও আবাসিক এলাকায় হামলার পরিকল্পনা উদ্ধার করা হয়।
ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, মোসাদ ইরানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে এবং দেশে বিভিন্ন গুপ্তহত্যা চালিয়েছে।
মোহসেনি এজেয়ি বলেন, “সাম্প্রতিক আগ্রাসনে শত্রুপক্ষ ইরানের ভিত্তি নষ্ট করতে বহুমুখী ষড়যন্ত্র করেছিল, কিন্তু জনগণের ‘সচেতনতা ও আনুগত্য’ এসব পরিকল্পনা শুরুতেই ব্যর্থ করে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “তারা ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে টার্গেট করে অস্থিরতা তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে, বিভিন্ন শ্রেণি ও মতাদর্শের মানুষ, যাদের মধ্যে পারস্পরিক মতপার্থক্য ছিল, তারাও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করেছে।”
ইরানের প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা আজ এমন শত্রুদের মোকাবিলা করছি, যারা কেবল আল্লাহ নয় বরং মানবজাতিরও শত্রু। এ এক কঠিন কিন্তু সুমিষ্ট সংগ্রাম; এই দুরভিসন্ধিমূলক শত্রুদের অপদস্থ করা আমাদের জন্য বিশেষ তৃপ্তি বয়ে আনবে।”
তিনি নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর নির্দেশনা, ইরানের সামরিক ও নিরাপত্তা সক্ষমতা এবং জনগণের একতাকে এই বিজয়ের মূল চাবিকাঠি বলে উল্লেখ করেন।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী সম্প্রতি বিচার বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন, দেশ-বিদেশে হামলার পেছনে থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে মামলা পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, “এইসব অপরাধের বিষয়ে আদালতে বিচার, তা দেশীয় হোক বা আন্তর্জাতিক—সবচেয়ে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি। অতীতে আমরা এক্ষেত্রে গাফিলতি করেছি, এবার আর তা করা যাবে না।”
মোহসেনি-এজেয়ি বলেন, “আমাদের অবশ্যই সব পরিস্থিতিতেই ন্যায়বিচার, সততা ও আইনি নীতিমালা মেনে চলতে হবে। কোনোভাবেই এই আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটানো যাবে না।”
তিনি বলেন, “অভিযোগপত্র প্রস্তুতের সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তা করতে হবে এবং আদালতকে দ্রুত, যথাযথ ও ন্যায়সঙ্গত রায় দিতে হবে।”
মোহসেনি-এজেই আরও জানান, কিছু মামলা হয়তো সাম্প্রতিক আগ্রাসনের আগের এবং বিভিন্ন বিচারিক শাখায় ছড়িয়ে রয়েছে। এসব মামলার ফলাফল নির্ধারণ করা—বিশেষ করে যারা ‘পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি’র আওতায় পড়ে—সেটি বিচার বিভাগের অগ্রাধিকার।”
তিনি বলেন, যেসব মামলা হয়তো গুপ্তচরবৃত্তি বা ‘পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি’র আওতায় পড়ে না, সেগুলোকে যেন অবহেলা না করা হয় এবং দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
১৩ জুনের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বহু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।