অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, তিস্তা নদী উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অঞ্চলের দুই কোটি মানুষের চাওয়া পদ্মা সেতুর মতো জনগুরুত্বপূর্ণ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হোক। প্রধানমন্ত্রী খুব শিগগিরই এ ঘোষণা দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে শনিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, উত্তরাঞ্চল দেশের শস্য ভান্ডার হলেও প্রতিবছর তিস্তার কারণে আবাদি জমিসহ ঘড়বাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে এই শস্য ভান্ডার বিনষ্ট হতে থাকলে বাংলাদেশকে আমদানি নির্ভরশীল হতে হবে। বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে হলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা জরুরি। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশ, প্রতিবেশসহ হুমকিতে পড়বে জীববৈচিত্র্য।
সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা বাঁচা, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা কোটি মানুষের স্বপ্ন, আস্থা এখন শুধুই শেখ হাসিনা। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে রংপুর বিভাগ হবে মিঠাপানি রফতানিকারক অঞ্চল। নদীতে ড্রেজিং করে চ্যানেলটা এক হবে, জলাধার নির্মাণ হবে। অকল্পনীয় পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে তিস্তাপাড়ের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, তিস্তা নদীতে বিজ্ঞানসম্মত খনন চাই। নদীর দুপাড়ে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এর সুরক্ষা চাই। এই সুরক্ষা দিতে গিয়ে এটা মহাপরিকল্পনার নামে হবে, নাকি অন্য কোনো পরিকল্পনায় হবে তা আমাদের অজানা। আমরা জানি না এর অর্থায়ন বিদেশ থেকে নিতে হবে, নাকি দেশ থেকে নিতে হবে। দেশের একটা বৃহৎ জীবনরেখাকে বাঁচাতে হলে এ নদীর পরিচর্যা করতেই হবে। এ অঞ্চলের অর্থনীতিসহ তিস্তা নদী ও নদীপাড়ের মানুষকে বাঁচাতে সুপরিকল্পিত ও বিজ্ঞানসম্মত সুরক্ষার বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর আগমনে তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজের শুরু দেখতে এখন নদীপাড়ের মানুষ মুখিয়ে আছেন।
নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা নদী এ অঞ্চলের মানুষের জীবনরেখা। তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে দুই পাড়ের মানুষের জীবন, সম্পদ এবং কৃষিজমি সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই দুরবস্থা লাঘবে তিস্তা নদী বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সুরক্ষা জরুরি। দুই কিলোমিটার প্রস্থের নদী এখন ১০-১২ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে। ভাঙন, বন্যা ও খরার হাত থেকে এ অঞ্চলের মানুষকে রক্ষায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিদেশি অর্থসহায়তা না মিললে পদ্মা সেতুর মতো দেশের টাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বখতিয়ার শিশির প্রমুখ। এ সময় ছয়টি দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান সংগঠনটির নেতারা।
তাদের দাবিগুলো হলো, ১. তিস্তা নদী সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদীতে সারাবছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধার নির্মাণ। ২. তিস্তার ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ। ৩. ভাঙনের শিকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন। ৪. তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন, মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা। ৫. তিস্তা নদীর শাখাপ্রশাখা ও উপ-শাখাগুলোর সঙ্গে নদীর আগেকার সংযোগ স্থাপন এবং দখল-দুষণমুক্ত করা। নৌ চলাচল পুনরায় চালু। ৬. মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা পাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।