26 Nov 2024, 12:38 am

ঊর্ধ্বমুখী রডের বাজার ; টন ছাড়ালো ৯৪ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নির্মাণশিল্পের অন্যতম অপরিহার্য উপকরণ রডের দাম ফের বাড়ছে। মাঝে কিছুদিন টনপ্রতি দু-তিন হাজার টাকা কম ছিল। এক সপ্তাহ ধরে আবার ঊর্ধ্বমুখী দাম। এক টন ভালো মানের রডের দাম ছাড়িয়েছে ৯৪ হাজার টাকা। তবে বেশি বেড়েছে সাধারণ মানের রডের দাম। এই মানের ৭৮-৭৯ হাজার টাকার রড বিক্রি হচ্ছে ৮৩-৮৪ হাজারে। একই সঙ্গে বেড়েছে লোহার অ্যাঙ্গেল, গ্রিল, রেলিংয়ের দামও।

রাজধানীর পুরান ঢাকার খুচরা বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা যায়।

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাড়ির কাজ ধরেন আহমেদসহ তিন ভাই। শনিবার (২১ জানুয়রি) পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডে রড কিনতে যান তারা। পরে জানতে পারেন সম্প্রতি রড-অ্যাঙ্গেল, এমএস-এর দাম টনপ্রতি বেড়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। এখন তার নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে বেশি টাকায় তৈরি করতে হবে বাড়ি।

নির্মাণের অতিপ্রয়োজনীয় উপকরণ রডের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, এর আগে করোনার কারণে পণ্য আমদানিতে অসুবিধা ছিল, সেসময় দাম বেড়েছিল। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর দাম বাড়লো। এখন এলসির অজুহাতে আবারও দাম বাড়ানো হলো। উৎপাদন পর্যায়ে দাম বাড়ায় খুচরায়ও দাম বেড়েছে।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের তথ্য বলছে, দুই বছরের ব্যবধানে রডের (প্রতি টন) দাম বেড়েছে ৩০ হাজার টাকা। ২০২০ সালে এক টন রোড ছিল ৬৪ হাজার টাকা, ২০২১ সালে ৬ হাজার টাকা বেড়ে ৭০ হাজার টাকা হয়েছিল। সদ্যবিদায়ী ২০২২ সালে কয়েক ধাপে ২৪ হাজার টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৯৪ হাজার টাকায় ঠেকে। পরে কিছুটা কমে ভালো মানের রডের দাম ৯২ হাজার টাকায় আসে। দাম বেড়ে যায় সিমেন্ট, বালু, পাথর, ইট, থাই অ্যালুমিনিয়াম, গ্রিল ও রেলিং, জেনারেল ইলেকট্রিফিকেশন, স্যানিটেশন, টাইলস ও লেবার খরচ।

এতে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম প্রতি স্কয়ার ফুটে ৫৪১ টাকা ৩৮ পয়সা বেড়েছে। দুই হাজার ফুট কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে এর মধ্যে শুধু রডের দাম বাড়ার কারণে ফ্ল্যাটের প্রতি স্কয়ার ফুটে নির্মাণ খরচ বেড়েছে ১২০ টাকা। একইভাবে সিমেন্টের কারণে ৪৪ টাকা, বালুর কারণে ২৩ টাকা, ইটের কারণে ৪০ টাকা, পাথরের কারণে ৬৭ টাকা ৫০ পয়সা, থাই অ্যালুমিনিয়ামের কারণে ৩৫ টাকা ও শ্রমিক খরচের কারণে বেড়েছে ৭০ টাকা পর্যন্ত।

পুরান ঢাকার বংশালের সোনার বাংলা আয়রন, ঢাকা আয়রন, ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ, মনির স্টিল, মেরাজ স্টিল ও সিরাজ অ্যান্ড সন্সসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, এক টন বিএসআরএম রড বিক্রি হচ্ছে ৯৪ থেকে সাড়ে ৯৪ হাজার টাকায়, দুই-তিন সপ্তাহ আগে সেটা ৯২ থেকে ৯৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়ে কেএসআরএমের রড বিক্রি হচ্ছে ৯৩ হাজার থেকে ৯৩ হাজার ৫শ টাকা, একেএস ৯২ থেকে ৯৩ হাজার, আরআরএম ৮৬ হাজার থেকে ৮৬ হাজার ৫শ টাকা, বন্দর স্টিল ৮৭ হাজার থেকে ৮৭ হাজার ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সাধারণ রডের। বিভিন্ন সাধারণ মানের রড দু-তিন সপ্তাহ আগে যেটা টনপ্রতি ৭৮ থেকে ৭৯ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেটা তিন থেকে চার হাজার টাকা বেড়ে ৮৩ থেকে ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে দাম বেড়েছে টিউববার, রাউন্ড পাইপ, চেকার প্লেট ও ফলোবক্সের দাম।

মাসখানেক আগে ফলোবক্স এক লাখ ৩২ হাজার টাকা টনে বিক্রি হলেও এখন চার হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। রাউন্ড পাইপের টনপ্রতি দাম পাঁচ হাজার টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে টিউববার। চেকার প্লেট দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায়। দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেড়ে এমএস প্লেট বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ২২ হাজার ৫শ টাকায়।

ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বলেন, এর আগে করোনার কারণে রডের কাঁচামাল জাহাজে করে আনতে পারছিলেন না উৎপাদকরা। এতে দাম বাড়িয়েছিলেন তারা। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতে আরেক দফা দাম বেড়েছিল। এখন আবার এলসি খোলার সমস্যার কারণে কাঁচামাল আনতে পারছেন না। এতে দাম বাড়ানো হয়েছে, আমরা খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতা। দাম বাড়ানো হলে দাম বাড়ে, দাম কমলে কম দামেই বিক্রি করি।

দাম বাড়ায় রডের বিক্রিও কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। হাফিজুর নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি এক সপ্তাহ ধরে দোকান খুলে রেখেছি, কোনো বেচা-বিক্রি নেই। এভাবে ব্যবসা চলতে পারে না। দফায় দফায় দাম বাড়ার কারণে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। জমানো টাকায় সংসার চলছে। আমার জমানো টাকা আছে, যেটা দিয়ে পরিবার চালাতে পারছি। কিন্তু কুলি ও লেবারের অবস্থা করুণ। আমাদের এখানে যারা কুলির কাজ করেন তাদের কোনো আয় নেই প্রায় দুই সপ্তাহ।

রিহ্যাবের তথ্য আরও বলছে, গ্রিল ও রেলিংয়ের দামও বেড়েছে ৫৫ টাকা পর্যন্ত। ২০২০ সালে গ্রিল ও রেলিং প্রতি স্কয়ার ফুটের দাম ছিল ১০৫ টাকা, ২০২১ সালে ছিল ১২০ আর ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬০ টাকা। গ্রিল ও রেলিংয়ের দাম বাড়ার কারণে দুই হাজার ফুট কনস্ট্রাকশনে খরচ বেড়েছে সাড়ে ৭ টাকা।

রিহ্যাব সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, নতুন ড্যাপের কারণে আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবার জন্য মানসম্মত আবাসন কঠিন হয়ে পড়ছে। আবার নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপনের পর দীর্ঘ সময় জমির মালিকের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা কোনো চুক্তিতে যেতে পারছেন না। এখন বেশিরভাগ ভবন হবে চার-পাঁচতলা। এতে চলতি বছর আবাসন সংকট আরও বাড়বে। আবার নির্মাণসামগ্রীর দাম আকাশচুম্বি। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতে নির্মাণ উপকরণের দাম কমাতে হবে, ড্যাপ নিয়েও ভাবতে হবে। এটা না হলে উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বি হবে বাড়িভাড়া। আবাসন খাতে শঙ্কা তৈরি হবে।

বিএসআরএম স্টিলের কোম্পানি সচিব শেখর রঞ্জন কর বলেন, রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে রডের কাঁচামাল আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে। এর পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে এবং ডলারের দাম বেড়েছে। এসব কিছুর কারণে রডের দাম বেড়েছে। তাছাড়া নতুন করে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 13930
  • Total Visits: 1311753
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৩শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১২:৩৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018