28 Apr 2024, 01:01 am

এলজিইডির ‘টাঙ্গাইল প্রজেক্ট’ গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : টাঙ্গাইল  জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পাকা রাস্তা হওয়ায় জীবনমানে প্রভাব ফেলছে। পায়ে হাঁটা ভাঙা রাস্তায় সাঁই সাঁই ছুটে চলছে ছোট ছোট যানবাহন। পাড়ার ছোট্ট শিশুটিও নির্বিঘ্নে পাঠশালায় যাচ্ছে। কর্দমাক্ত উঁচু-নিচু মেঠোপথ পিচঢালা সড়কে পরিণত হয়েছে। স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে। বাড়ির আঙ্গিনা ও ক্ষেতের সবজিসহ নানা কৃষি পণ্য সহজেই বাজারজাত করা যাচ্ছে- কৃষকরা পাচ্ছে ন্যায্য মূল্য। এক কথায় গ্রামীণ জনপদ দিনদিন শহরে রূপান্তরিত হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুদূর প্রসারী ভাবনার ফসল ‘টাঙ্গাইল প্রজেক্ট’ গ্রামকে শহরে পরিণত করার দূরূহ কাজটির অত্যাবশ্যকীয় নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।
জানাগেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রাম হবে শহর’ প্রতিপাদ্য বাস্তবায়নে প্রথম সহায়ক হিসেবে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নকে চিহ্নিত করা হয়। সে লক্ষ্যে টাঙ্গাইলের ৮টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম, তানভীর হাসান ছোট মনির, আতাউর রহমান খান, মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারি, ছানোয়ার হোসেন, আহসানুল ইসলাম টিটু নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। বৈঠকে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের এমপি এলজিইডির তত্ত্বাবধানে গ্রামীণ জনপদের রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নে ‘টাঙ্গাইল প্রজেক্ট’ নামে প্রকল্প গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি টাঙ্গাইলের সকল সংসদ সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন করেন। পরে ওই প্রস্তাব আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের কাছে উপস্থাপন করা হয়। কৃষিমন্ত্রী প্রস্তাবের পক্ষে মতামত দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ‘গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প : টাঙ্গাইল প্রকল্প’ নামে প্রকল্পটি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়। টাঙ্গাইলের জনপ্রতিনিধিরা প্রথমে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা দাবি করেন। পরে এলজিইডি প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাক্কলিত ব্যয় ৬০০ কোটি টাকা ধরে ‘টাঙ্গাইল প্রকল্পের’ কাজ শুরু করে।
টাঙ্গাইল এলজিইডি সূত্র জানায়, বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে শুরু হওয়া টাঙ্গাইল প্রকল্পের আওতায় জেলায় ৫৪৬ কোটি পাঁচ লাখ ১৭ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জেলার ১২টি উপজেলায় ৪৮৮টি ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে ধনবাড়ী উপজেলায় ৩৪টি, মধুপুরে ৬৯টি, গোপালপুরে ৪৬টি, ভূঞাপুরে ১৭টি, ঘাটাইলে ৪০টি, কালিহাতীতে ৩৪টি, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৬৫টি, দেলদুয়ারে ৩০টি, নাগরপুরে ২৩টি, মির্জাপুরে ৫০টি, বাসাইলে ২৯টি এবং সখীপুর উপজেলায় ৫১টি প্রকল্প রয়েছে। সূত্রমতে, ৪৮৮টি প্রকল্পের চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৩৬৮ কোটি চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১১০টি সম্পন্ন এবং ১২০টি প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এরমধ্যে ১৬৫ কোটি টাকা প্রকল্পগুলোর বিপরীতে পরিশোধ করা হয়েছে।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম, মির্জাপুর, বাসাইল, দেলদুয়ার, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উঁচু-নিচু কর্দমাক্ত কাঁচা রাস্তাগুলো পাকাকরণ করায় বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লায় দোকানপাট গড়ে ওঠেছে। প্রায় প্রতিটি স্কুল-মাদ্রাসার পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। স্কুল ও বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তা বড় সড়কে গিয়ে মিশেছে। বিভিন্ন এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী রাশিদুল, আবুল খায়ের, হাফিজুর, আরমান রকি, আয়েশা, রুমি, সাদিয়া, রহিমা, কামরুল, রাফিউরসহ অনেকেই জানান, গ্রামের রাস্তা পাকা হওয়ায় স্কুলে যাতাযাতে তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। এখন আর সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা কাঁদায় ভরে ওঠেনা, শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে জামা-কাপড় নষ্ট হয়না। স্বস্তিতে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সুযোগ হওয়ার তারা খুব খুশি। নানা এলাকার কৃষক নাজিম উদ্দিন, আব্দুর রহমান, আছাবুল ইসলাম, হারাধন কর্মকার, গণেশ বনিক, সুবল চন্দ্র সাহা, আজিজুর রহমান, আবুল হাসেম, কাশেম আহমেদ, রাজন সিকদার, সবজি চাষী রকি, জাহান আরী, হায়দর আলীসহ অনেকেই জানায়, আগে তাদের উৎপাদিত ফসল ও সবজি বাজারে নিয়ে যেতে বেশি খরচ হয়েছে। গ্রামে পাকা রাস্তা হওয়ায় কম খরচে সহজেই বাজারে নিয়ে বিক্রি করা যায়। যাতায়াত খরচ কম হওয়ায় তারা সবজি ও ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন।
এলজিইডির কয়েকজন ঠিকাদার জানান, তারা লটারিতে অংশ নিয়ে রাস্তা-ব্রিজ ও কালভার্টের কাজ পাচ্ছেন। লটারি হওয়ায় ছোট বড় প্রায় সব ঠিকাদারই কম-বেশি কাজ পাচ্ছেন। তারা ‘টাঙ্গাইল প্রজেক্ট’কে আরও অন্তত পাঁচ বছর দীর্ঘায়িত করার পাশাপাশি বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইল প্রজেক্ট মূলত জেলার গ্রাম-গঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের ৪৮৮টির মধ্যে ঠিকাদারদের সঙ্গে ৪৫০টি প্রকল্পের চুক্তি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১০টি প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে। ১২০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি প্রায় ৭০ শতাংশ। এ প্রকল্পের কাজে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। শতভাগ নিয়ম মেনে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পের পরিচালক কাজের গুণগত মান সঠিকভাবে হলেই কেবল সন্তুষ্ট হন। বিষয়টি ঠিকাদাররা অনেকেই জানেন বলে তারাও এ বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছেন।
‘টাঙ্গাইল প্রজেক্ট’- এর প্রকল্প পরিচালক মোল্লা মিজানুর রহমান জানান, টাঙ্গাইল প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। প্রকল্পটি শেষ হলে টাঙ্গাইল জেলায় কোন কাঁচা রাস্তা থাকার কথা নয়। প্রকল্পটির অনেকগুলো ছোট ছোট কাজ চলমান রয়েছে- সেজন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। এছাড়া প্রকল্পটি যেহেতু স্থানীয় উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে সেহেতু প্রকল্পটি দীর্ঘায়িত ও বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ করবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 18447
  • Total Visits: 672703
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1122

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
  • ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১:০১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
2930     
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018