অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : উত্তরপশ্চিম ও উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মনোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ রাত ৯টার দিকে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজারের প্রচণ্ড গতিতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ৭টার পর তীব্রগতিতে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করে। এতে ঝড়ো বাতাসে বহু গাছ উপড়ে পড়েছে। সমুদ্র সৈকত এলাকায় গড়ে ওঠা অসংখ্য ছোটখাটো কাঁচা দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে কিছুটা দুর্বল হয়ে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার হতে পারে। ঝড়টি আজ রাতের মধ্যে বাংলাদেশের ভূখণ্ড অতিক্রম করে যেতে পারে। ফলে আজ সারা রাত দেশের উপকূলীয় এলাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টি হতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এর বিকাল সাড়ে ৪টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়টি রাতে দুর্বল হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ অব্যাহত আছে।
এছাড়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদসংকেত, পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে ৫ নম্বর বিপদসংকেত ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এছাড়া, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এর প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply