অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কুড়িগ্রামে পোলট্রি খামারে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে বা হিটস্ট্রোকে একের পর এক মারা যাচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। গরম নিয়ন্ত্রণে খামারিরা বৈদ্যুতিক পাখা লাগালেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তা কোনও কাজে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ খামারিদের। এ অবস্থায় বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
রবিবার (১৬ এপ্রিল) কুড়িগ্রাম সদরের একাধিক পোলট্রি মুরগির খামারে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, রবিবার (১৬ এপ্রিল) তারা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তাপ প্রবাহের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে তীব্র তাপ প্রবাহ চলমান রয়েছে; যা আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের পোলট্রি খামারি শাহীনুর জানান, তিনি বর্তমানে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি পালন করছেন। তাপ প্রবাহের কারণে তার খামারে গত চার দিনে হিটস্ট্রোকে ২৫টির বেশি মুরগি মারা গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এসব মুরগি বাজারজাত করার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিদিন স্ট্রোকে মৃত্যুর কারণে বড় ধরনের লোকসানে পড়ার শঙ্কায় আছেন তিনি।
ভুক্তভোগী এই খামারি বলেন, ‘গত চার দিন ধরে প্রতিদিন পাঁচ থেকে আটটি করে মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। গরম নিয়ন্ত্রণে ফ্যানের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু বারবার লোড শেডিংয়ের কারণে কাজ হচ্ছে না। আমি এবার বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়লাম।’
‘প্রত্যেকটা মুরগি দুই কেজির কাছাকাছি হয়েছে। চার-পাঁচ দিন পর বাজারজাত করার কথা। কিন্তু প্রতিদিন যে হারে হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা যাচ্ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত কত লোকসান হবে সে চিন্তা করছি। আমার এলাকার সব খামারে একই অবস্থা’ বলেন এই খামারি।
সদরের হরিশ্বর কালোয়া গ্রামের পোলট্রি খামারি মেহেদি হাসান বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে হিটস্ট্রোক শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে হিটস্ট্রোকে আমার খামারের ১৫টি মুরগি মারা গেছে। প্রতিটি মুরগি দুই কেজি ওজনের কাছাকাছি হয়েছে। গরমের কারণে কোনোভাবেই হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যান চালিয়েও কাজ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান কোথায় ঠেকবে বলা মুশকিল।’
খামারিরা বলছেন, শুধু হিটস্ট্রোক নয়, তাপ প্রবাহের কারণে ব্রয়লার মুরগির পাতলা পায়খানা দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত মুরগি দুর্বল হয়ে পড়ছে। নিয়মিত ভ্যাকসিন ও মেডিসিন প্রয়োগ করার পরও এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মেলেনি। অতিরিক্ত গরমের কারণে এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে।
তবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়লেও এ ধরনের সমস্যা নিয়ে খামারিরা তাদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করেননি। তারপরও তারা হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইউনুছ আলী বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন সমস্যা নিয়ে এখনও কেউ আসেননি। হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে প্রাণির খামারের ঘরের ছাদ কিংবা টিনের চালে ভেজা চট দিলে উপকার পাওয়া যাবে। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রচার চালাচ্ছি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলার ৯ উপজেলায় লেয়ার, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির খামার রয়েছে এক হাজার ৪৩২টি। এরমধ্যে নিবন্ধিত খামার ২১১টি এবং অনিবন্ধিত খামার এক হাজার ২২১টি। এরমধ্যে ব্রয়লার মুরগির নিবন্ধিত খামার রয়েছে ১৭৪টি ও অনিবন্ধিত এক হাজার ১৯টি। তবে কতটি খামার বন্ধ রয়েছে, সে হিসাব দিতে পারেনি প্রাণিসম্পদ দফতর।
খামারিদের দাবি, পোলট্রি কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেট ব্যবসার কারণে লাগাতার লোকসানের মুখে পড়ে প্রায় এক হাজার পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
Leave a Reply