মহাগ্রন্থ আল কোরআন তিলাওয়াতের মূল্য ও মর্যাদা বর্ণনাতীত। নিরাকার স্রষ্টার সাথে সাকার বান্দার সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের সর্বোত্তম সূত্র কোরআন তিলাওয়াত। কোরআনুল কারীম আল্লাহর বাণী এবং তাঁর সত্ত্বা থেকে নিঃসৃত। অতএব এটা মুখে আবৃত্তি করাই তাঁকে কার্যকরীভাবে স্মরণ করার প্রথম সোপান। তারপর কোরআনের আদেশ-নিষেধ ও সারগর্ভ উপদেশমালা সম্যক আয়ত্ব করা এবং তদানুযায়ী জীবন গঠনে মনোযোগী হওয়াই কোরআনুল কারীম তিলাওয়াতের উদেশ্য। বস্তুত কোরআন তিলাওয়াতই শুধুমাত্র আলাহ ও তাঁর অনুগত বান্দার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের শ্রেষ্ঠতম পন্থা। এ জন্য রসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন তিলাওয়াতের ওপর অত্যাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
নিয়মিত বৃষ্টিপাতের সাহায্যে জমিকে যেরুপ বীজ বপনের উপযুক্ত করা যায়, অনুরূপভাবে নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াতের দ্বারা মানবরূপ জমিকে ঈমানের বীজ বপনের যোগ্য করে তোলা সম্ভব। এর দুর্নিবার আকর্ষণ ধরাপৃষ্ঠে অবস্থিত কোররআন তিলাওয়াতকারীর আন্তরিক সত্ত্বাকে আল্লাহর সুউচ্চ আরশ পর্যন্ত নিয়ে যায়। কোরআনুল কারীম তিলাওয়াতের এরূপ শক্তি আছে বলেই রসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসংখ্য হাদীসে এর গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন এবং পাশাপাশি আবৃত্তিকারীর মর্যাদা প্রসঙ্গেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “কোরআন তিলাওয়াতের মজলিসে ভোরের বেলা ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন।” তা ছাড়া রোজ-কিয়ামতে হাফিযে কুরআন ও কোরআন স্বয়ং তিলাওয়াতকারীর স্বপক্ষে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবেন। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের প্রত্যেকটি অক্ষর তিলাওয়াতের পরিবর্তে দশটি নেকী লাভ হয়, এ উক্তির তাৎপর্য হলো, প্রত্যেক আবৃত্তিকারী মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত করে উহার প্রত্যেকটি বিষয় বুঝতে চেষ্টা করবে।
১. বরকতময় আল্লাহ তা’আলা বলেন, “কোরআন তিলাওয়াত ও আমার যিকিরের ফলে যে ব্যক্তি আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করার সুযোগ পায় না, সে প্রার্থনাকারীকে আমি যা দিয়ে থাকি তা শ্রেষ্ঠতর দান। আর মহান আল্রাহর বাণীর মর্যাদা যাবতীয় বাণীর ওপর ঠিক তেমনি, যেমন যাবতীয় সৃষ্টির ওপরে সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে মহান আল্লাহর মর্যাদা।” দারামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু সাঈদ (রা)-এর সূত্রে সংগ্রহ করেছেন।
২. মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ বলেছেন, “নমায আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করা হয়েছে। আমার বান্দা আমার নিকট থেকে যা চায় তা তার জন্য।” অতঃপর যখন কোন বান্দা বলে, “যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক”- তখন আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা আমার যথার্থ প্রশংসা করেছে।” অতঃপর যখন যে বলে, “তিনি করুণ্যময় ও দয়ালু।” তখন আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা আমার স্তুতি বর্ণনা করেছে।” আর যখন সে বলে, “তিনি শেষ বিচারের দিনের অধিপতি।” তখন আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা আমার মর্যাদা প্রকাশ করেছে।” যখন যে বলে, “আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য কামনা করি।” তখন আল্লাহ বলেন, “এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে আধা-আধি।” আমার বান্দা যা চায় তা তার জন্য। তারপর যখন সে বলে, আমাদের সহজ-সরল পথে চালাও তাদের পথে যাদের ওপর তুমি করুণা বর্ষণ করেছ, অভশপ্তদের পথে নয় এং পথভ্রষ্টদের পথেও নয়- তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার বান্দার অংশ। আর আমার বান্দা আমার নিকট যা চায় তা তার জন্য। ইমাম আহমদ ও ইমাম মুসলিম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩. তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, “হে বনী আদম, আমি তোমার ওপর সাতটি আয়াত অবতীর্ণ করেছি, তন্মধ্যে তিনটি আমার জন্য, তিনটি তোমার জন্য এবং একটি আমার ও তোমার মধ্যে অর্ধেক-অর্ধেক। অতঃপর যা আমার জন্য তা ‘ আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, আর রাহমানির রাহীম, মালিকি ইয়াওমিদদীন। আর যা আমার ও তোমার মধ্যে তা- ইয়্যাকা-না’বুদু ওয়াইয়্যাকা নাসতায়ীন। তোমার পক্ষ থেকে ইবাদত এবং আমার পক্ষ থেকে তোমাকে সাহায্য দান। আর যা তোমার জন্য তা ইহদিনাস সিরাত্বোল মুসতাকীম সিরাত্বোল্লাযীনা আন আমতা আলাইহিম, গায়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওলাদদ্বো—-য়াল্লীন।” তিবরানী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৪. রাতের বেলা যে ব্যক্তি নিজ বিছানায় শয়নের ইচ্ছা করে তারপর ডান কাতে শয়ন করে একশতবার সূরা এখলাস’ (কুলহু ওয়াল্লহু আহাদ) সূরা তিলাওয়াত করে শেষ বিচারের দিন সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা বলবেন, “হে আমার বান্দা! তুমি তোমার ডান দিক দিয়ে বেহেশতে প্রবেশ কর। ইমাম তিরমিযী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা)-এর সূত্রে নকল করেছেন।
Leave a Reply