21 Feb 2025, 05:01 pm

কৌশলে জাতিসংঘকে রাশিয়ার পক্ষে ব্যবহার করছেন পুতিন !

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গত ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ বলে আখ্যায়িত করে জাতিসংঘ। একই সঙ্গে জাতিসংঘ জানায়, এটি ‘জাতিসংঘ সনদের’ বিচ্যুতি।

তার কিছুদিন পর ২ মার্চ সাধারণ পরিষদ ১৪১ সদস্যের ভোটের ভিত্তিতে গ্রহণ করা রেজ্যুলিউশনে রাশিয়ার আক্রমণকে ‘আগ্রাসন’ ঘোষণা দিয়ে তীব্র অসমর্থন জানানো ছাড়া যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর কোনও পদক্ষপেই নেয়নি জাতিসংঘ।

৪ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের গ্রহণ করা রেজ্যুলিউশনে ‘দ্রুত ও যাচাইযোগ্য’ উপায়ে রাশিয়ার সেনা এবং রুশ পৃষ্ঠপোষকতায় চলা সশস্ত্র দলগুলোকে ইউক্রেন থেকে সরে যাওয়ার  আহ্বান জানানো হয়। এ সময় আলোচনায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো উঠে আসে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ইস্যু করা মৌখিক সতর্কবার্তায় রাশিয়াকে দ্রুত এই সহিংসতা বন্ধ করে কূটনৈতিক আলোচনার পথ খুলতে বলা হয়েছে।

গুতেরেস বলেছেন, ‘আমাদের এক মুহূর্তও দেরি করা উচিত না। যুদ্ধের নির্মমতার প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এ বাস্তবতা ইউক্রেনের জনগণের জন্য এখন যতটা ভয়াবহ, ভবিষ্যতে এর চেয়ে মারাত্মক হতে পারে পরিস্থিতি।

জাতিসংঘের উপমহাসচিব রোজম্যারি ডিকার্লো ১৩ জানুয়ারি নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় রাশিয়ার আক্রমণকে প্রশ্নে বলেন, ‘এটি জাতিসংঘ সনদ এবং আর্ন্তজাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’

জাতিসংঘে মার্কিন প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘পুতিন সরকারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোণঠাসা করতে কাজ করে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। যদিও রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাধারী দেশ।’

ডিসেম্বরে ফরেন পলিসি পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রতিনিধি স্টিভ কোহেন ও জো উইলসন বলেন, ‘জাতিসংঘ সনদের চুড়ান্ত লঙ্ঘন করেছে রাশিয়া। নিরাপত্তা পরিষদ থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়াসহ ইউক্রেনের চার প্রশাসনিক অঞ্চলের দখল নিতে পুতিন যে গণভোট করেছে তা বাতিল করতে হবে। বুচার মতো ইউক্রেনের শহরগুলোতে নৃশংস অপরাধ করা, নিউক্লিয়ার যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করা ও পৃথিবীর খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতিতে হুমকি ডেকে আনা থেকে রাশিয়াকে বিরত থাকতে হবে।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে আরও সহযোগিতার আবেদন জানানোর পরপর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘তার সরকার যুদ্ধের এক বছর পূর্তিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা করে। আর এতে গুতেরেস মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারেন।’

কুলেবা আরও বলেন, ‘যদি রাশিয়া যুদ্ধাপরাধের ট্রাইবুনালে যেতে রাজি হয়, তবেই কেবল রাশিয়াকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হবে।’

১১ মাস ধরে যুদ্ধ চলার পরও রাশিয়া জাতিসংঘে সদস্যপদ ধরে রেখেছে। জাতিসংঘ সনদের ২(৪) নম্বর ধারায় আত্মরক্ষা এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ব্যতিত সব ধরনের সহিংসতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আক্রমণের শুরুতে পুতিন বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে আমাদের অবধারিত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী ডনবাস রাশিয়ার কাছে সহযোগিতা কামনা করেছিল।’

জাতিসংঘ সনদের ৫১ ধারার ৭ নম্বর অংশের বরাতে ইউক্রেনে হামলার বৈধতা দাবি করছেন পুতিন। তবে উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিখাইল ট্রয়টস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন আক্রমণের ওপর ৫১ ধারা যথোপযুক্তভাবে প্রয়োগ করা যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অদ্ভুত মানসিকতার কিছু দেশসহ জাতিসংঘে যত সদস্য আছে, তাদের ৫-১০ সদস্যও সম্মত হবে না যে বাধ্য হয়ে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। আসলে রাশিয়া নিজেই ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে।’

ট্রয়টস্কি বলেন, ‘৫১ ধারায় আক্রমণকে অন্যায্য বলা আর ভোট দিয়ে রাশিয়ার আক্রমণকে বিরোধিতা করার মধ্যে একটা ‘ধূসর অবস্থান’ রয়েছে। কিছু দেশ যুক্তি দেখাতে পারে যে, ইউক্রেনের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর মিত্রতার ফলে রাশিয়া এক ধরনের হুমকির মধ্যে ছিল। ফলে কিছু দেশ রাশিয়ার আক্রমণের বিরোধিতা করা রেজ্যুলিউশনে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে বা ‘না’ ভোট দিতে পারে। তবে এরকম দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্র দেশগুলোর কাছে চড়া মূল্য দিতে হবে।’

রাশিয়াকে নিরাপত্তা পরিষদ থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়ার প্রশ্নটা এখনও ধোঁয়াশায় আছে বলে মনে করেন ট্রয়টস্কি। তার মতে, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের একে অপরের বিরুদ্ধে কোনও যুদ্ধ শুরুর পরিকল্পনা করছে না। ফলে তারা এখনও ভবিষ্যতে চাপ প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে পারে। ফলে রাশিয়াকে বহিষ্কারের বিষয়টি হয়ত ভাবা হবে না। ফলে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ যত বিলম্বিত হবে, বিশেষ করে যদি আরও নৃশংসতা ঘটে, তাহলে রাশিয়ার স্থায়ী সদস্যপদ নিয়ে চাপে পড়তে পারে জাতিসংঘ।

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো চীনের অবস্থান। চীনের অবস্থান যদি পাল্টাতে শুরু করে তাহলে তা রাশিয়ার জন্য মাথাব্যথা হতে পারে। সূত্র: নিউজউইক অবলম্বনে

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2304
  • Total Visits: 1606535
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1707

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ৯ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
  • ২১শে শা'বান, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৫:০১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
     12
2425262728  
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018