15 Jan 2025, 11:07 am

খালেদা জিয়ার ১০ বছরের সাজা স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাজা স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে আপিলের সার সংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীন। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, এডভোকেট আমিনুল ইসলাম।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। দুদকের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট আসিফ হোসাইন।

খালেদা জিয়ার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতের আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, এই মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ফরমায়েশী রায় দিয়েছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই এই মামলাটি ব্যবহার করা হয়েছে। মামলায় ইতোপূর্বে ন্যায়বিচার পাইনি।
আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা সংক্রান্ত রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। রায়ের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার আনা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে এই আদেশ দেয়া হয়। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে আপিলের ওপর শুনানি হবে।

বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কোন টাকা আত্মসাৎ হয়নি বলে সর্বোচ্চ আদালতকে জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী।
শুনানিতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী মো. আসিফ হাসান আদালতকে বলেন, এই ট্রাস্টের টাকা কিন্তু আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা মুভ হয়েছে। তবে সুদে আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে, কোন টাকা ব্যয় হয়নি। দুদক আইনজীবী মামলায় এজাহার, অভিযোগপত্র ও সাক্ষ্যের অংশ তুলে ধরেন। তিনি মামলার ডকুমেন্টস থেকে বেগম খালেদা জিয়া এ মামলার অভিযোগের সাথে সম্পৃক্ত নন এমন উপাদান পেশ করেন।

সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীন হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে লিভ মঞ্জুরের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।

হাইকোর্ট রায়টি আদালতে পড়ে শোনান ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

আদালতের অনুমতি নিয়ে এ মামলায় বিচারিক আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া জবানবন্দী উপস্থাপন করেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এটর্নি জেনারেল বলেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের জবানবন্দী ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বেগম খালেদা জিয়ার এ জবানবন্দী তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব বহন করে। জবানবন্দিতে বেগম খালেদা জিয়ার তার বিরুদ্ধে বিচারের প্রেক্ষাপট, হয়রানির বিষয় তুলে ধরেন। বিচার বিভাগের উপর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়ন্ত্রণের নানা দিক তুলে ধরা হয় এ জবানবন্দীতে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে খালেদার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। এরপর সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রাজধানীর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। তার অংশ হিসেবে নিজের খরচে পেপারবুক (মামলা বৃত্তান্ত) তৈরির আবেদন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।

এদিকে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি। তবে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমার পরেও মামলা দুটি আইনগতভাবে লড়ার কথা জানিয়ে বিএনপির আইনজীবী বলেন বেগম খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি তার সাজা মওকুফ করেছেন। সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে তিনি আইনজীবীদের বলেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 1933
  • Total Visits: 1486455
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1676

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বুধবার, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ১৪ই রজব, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১১:০৭

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
      1
23242526272829
3031     
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018