অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সঞ্চিত টাকা হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হাজিডাঙ্গা আদর্শ গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের তিন সহস্রাধিক গ্রাহক। দীর্ঘদিন ধরে তারা সমিতির সভাপতি রঞ্জন মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক তার স্ত্রী সন্ধ্যা মন্ডলসহ তাদের পরিবারের কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। ঐ সমিতিতে গ্রাহকদের কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা সঞ্চিত ছিল।
গ্রাহকদের অভিযোগ, ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজসহ তার সহযোগীরা সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে জোর করে সমিতির অনেক সম্পত্তি কবলা দলিল ও পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়ে তাদের ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সমিতির সদস্যরা টাকা ফিরে পাওয়ার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩ হাজারের অধিক সদস্য বিভিন্ন মেয়াদে সমিতিতে টাকা জমা রেখেছেন। অধিকাংশ সদস্যের বইয়ে স্কিমের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। স্কিম শেষ হওয়া গ্রাহকরা পাওনা টাকা চাইতে গেলে সমিতি কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে সময়ক্ষেপণ করে। এরপর সদস্যরা গত ১৩ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে সমিতি কার্যালয়ে গিয়ে তাদের পাওনা টাকা চায়। তখন সমিতির সভাপতি রঞ্জন মন্ডল জমি বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করবে বলে জানান। কিন্তু পরের দিন প্রভাবশালী কিছু লোক একটি কালো গ্লাসের মাইক্রোবাসে করে সাবরেজিস্ট্রার অফিসে রঞ্জন মন্ডলকে নিয়ে যায়। এরপর হেলমেট পরিহিত অবস্থায় গাড়ি থেকে নামিয়ে তাকে সাবরেজিস্ট্রারের সামনে নেওয়া হয়। পরে বিএনপি নেতা মো. মোশাররফ হোসেন, শান্তনু রায়, সাইফুর রহমান খান, গোবিন্দ মন্ডল এবং অসীম মন্ডল তার কাছ থেকে জমি লিখে নেন।
অভিযোগে তারা আরো বলেন, ঐদিন সংবাদ পেয়ে তারা রঞ্জন মন্ডলের বাড়ি গেলে তিনি জানান, আমি জমি লিখে দিলেও কেউ আমাকে এক টাকাও দেয়নি। ওরা আমাকে আগামীকাল (১৫ আগস্ট) সকালে টাকা দেবে, আপনারা সকালে আসেন টাকা দিয়ে দেব। যথাসময় আমরা সমিতি কার্যালয় উপস্থিত হলে জানতে পারি, রঞ্জন ঐদিন ভোরে ভারতে চলে গেছেন।
সমিতির একজন গ্রাহক আরাজি ডুমুরিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী । অনেক কষ্টে সাত বছর ধরে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা সমিতির কাছে জমা রেখেছি। আমার কার্ডের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এখন আমার সুদে-আসলে পাওয়ার কথা ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা। বর্তমানে সমিতির সভাপতির দেখা নেই। শুনেছি জমি লিখে নেওয়ার পর রঞ্জন মন্ডলকে রাতের আঁধারে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো তিনি নিখোঁজ।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি বলেন, লোকের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে, যারা জমি দলিল করে নিয়েছেন তারা রঞ্জন মন্ডলের টাকা পরিশোধ করেননি। তারা তাকে রাতের অন্ধকারে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিয়েছে, তার প্রমাণও রয়েছে। রঞ্জন মন্ডলের জমি লিখে নেওয়ার ব্যাপারে মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজের মোবাইল ফোনে একাধিকবার রিং দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, শুনেছি রঞ্জিত মন্ডল কম দামে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জমি লিখে নিয়েছে বলেও শুনেছি।