অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগের কারণে গণমাধ্যম সেলফ সেন্সরশিপের পথ বেছে নিতে পারে। পত্রিকাটি আরও লিখেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা বিরোধী মত দমন করতে মিডিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, আইওয়া’র একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পাশাপাশি “এবিসি” টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সাথে অভিযোগ প্রত্যাহার সংক্রান্ত চুক্তি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই দু’টি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে দৈনিক গার্ডিয়ান লিখেছে, বিচারিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। এ ধরণের মামলাগুলোকে ছোট গণমাধ্যমগুলোর জন্য বড় আঘাত হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। কারণ তাদের আর্থিক সামর্থ্য খুব একটা বেশি নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা একটি মানহানির মামলা দেড় কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়ে নিষ্পত্তি করতে রাজি হয়েছে এবিসি নিউজ।
এবিসি নিউজের একজন তারকা সঞ্চালক ট্রাম্পকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে মিথ্যা কথা বলেছিলেন। তিনি অনুষ্ঠানে বারবার ট্রাম্পকে ‘ধর্ষণের দায়ে দোষী’ বলেছিলেন। এবিসি নিউজের ওই সঞ্চালকের নাম জর্জ স্টেফানোপোলোস। এ বছর ১০ মার্চ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একজন নারী সদস্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওই নারী সদস্য কেন ট্রাম্পের প্রতি তার সমর্থন জানিয়েছেন, তা নিয়ে কথা বলার সময় স্টেফানোপোলোস বারবার বিচারক ও দুই জুরিবোর্ড ট্রাম্পকে ধর্ষণের অভিযোগ দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
গত বছর একটি দেওয়ানি মামলায় জুরিরা ট্রাম্পকে ‘যৌন নিপীড়নকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। নিউইয়র্কের আইনে এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে। ট্রাম্প এবিসি নিউজের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ওই মামলা নিষ্পত্তির জন্য শনিবার উভয় পক্ষ একটি সমঝোতায় আসে বলে প্রথম খবর প্রকাশ করে ফক্স নিউজ ডিজিটাল।
এবিসি শুধু আর্থিক দণ্ডই দেবে না; বরং তাদের একটি বিবৃতি দিয়ে স্টেফানোপোলোসের বক্তব্যের জন্য ‘দুঃখ প্রকাশ’ করতে হবে। এ ছাড়া ট্রাম্পের আইনি লড়াইয়ের খরচ হিসেবে এবিসি নিউজ আরও ১০ লাখ মার্কিন ডলার দেবে। ১০ মার্চ ২০২৪ এবিসি নিউজের অনলাইনে ট্রাম্পের বিষয়ে যে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সেটির নিচেও সংশোধনী দিতে হবে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ও কলাম লেখক ই জা ক্যারল তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন। ক্যারলের অভিযোগ ছিল, ১৯৯৬ সালে একটি দোকানে কেনাকাটা করার সময় পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে ট্রাম্প তার সঙ্গে জোরজবরদস্তি করেছিলেন এবং তাকে যৌন নিপীড়ন করেছিলেন।
২০২৩ সালে নিউইয়র্কের একটি ফৌজদারি আদালত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা ক্যারলের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান। আদালত ক্যারলের সম্মানহানি করার অভিযোগে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করেন। আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প।
ব্রিটিশ মিডিয়ার পাশাপাশি মার্কিন গণমাধ্যমেও তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পলিটিকো পত্রিকার ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে, এবিসির বিরুদ্ধে মামলার ফলাফল তথা জরিমানার ঘটনায় এখন ট্রাম্প আরও বেশি তৎপর হয়ে উঠবেন এবং সব পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলার বন্যা বইয়ে দেবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের পদে বসার পরও এ ধরণের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখলে মিডিয়ার সেলফ সেন্সরশিপের পথ বাছাই করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
Leave a Reply