December 14, 2025, 7:23 pm
শিরোনামঃ
ঝিনাইদহে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুর স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আইনি নোটিশ সুদানে সন্ত্রাসী হামলায়  ৬ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিহত ; পরিচয় প্রকাশ ভূমি রেজিস্ট্রেশন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন হওয়া উচিত : ভূমি সচিব সালেহ আহমেদ দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু ; হাসপাতালে ভর্তি ৩৮৭ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ১৫ জনকে ঠেলে পাঠালো বিএসএফ সেন্টমার্টিনে পর্যটকের চাপে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব টিকিট আগাম বিক্রি শেষ রাঙ্গামাটিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে সেনাবাহিনীর শীতবস্ত্র বিতরণ সিরিয়ায় মার্কিন সেনা নিহতের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প
এইমাত্রপাওয়াঃ

গাজীপুরের একই পরিবারের ৮ জন দৃষ্টিহীন ; দিন কাটে কষ্টে

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রথমে বাবা, পরে সন্তান, তারপর নাতিরা—একে একে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মেছেন তারা। এখন এই পরিবারের আট জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দিনে একবেলা খেলে আরেক বেলায় খাবার জোটানো দায়। সরকারিভাবে পাওয়া মাসিক ভাতা ১৫ দিনে শেষ হয়ে যায়। প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংকট থেকে পরিবারটি বের হতে পারছে না। মাঝেমধ্যে খাবার সহায়তা পেলেও কারও কাছ থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সহায়তা পাননি এই পরিবারের সদস্যরা।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার উজিলাব (হলাটিরচালা) গ্রামের হোসেন আলীর পরিবারের ১০ সদস্য। এর মধ্যে আট জনই জন্মান্ধ। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

এই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোসেন আলী ২০০২ সালে মারা যান। একটি চোখে কিছুই দেখতেন না। আমৃত্যু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটিয়েছেন। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে। চার ছেলেমেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মেছেন। স্ত্রী রাশিদা বেগম অনেক কষ্ট করে সন্তানদের বড় করে বিয়ে দেন। পরে তাদের ঘরের সন্তানরাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মান। বংশ পরম্পরায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় এখন তারা শঙ্কিত। চিকিৎসাসেবায় কেউ এগিয়ে এলে গ্লানি মুছে যাবে—এমন স্বপ্ন দেখেন তারা।

দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা হলেন—হোসেন আলীর ছেলে আমির হোসেন, আমিরের স্ত্রী শিউলি আক্তার, আমিরের বোন নাসরিন আক্তার, হাসিনা আক্তার, আমিরের ভাই জাকির হোসেন, জাকির হোসেনের সন্তান জোনাকি আক্তার ঝিনুক, হাসিনার মেয়ে রূপা আক্তার ও ছেলে মারুফ মিয়া। এর মধ্যে হোসেন আলীর চার ছেলেমেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও অন্যরা পান না।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অবস্থায় ২০০২ সালে স্বামী মারা গেছেন উল্লেখ করে হোসেন আলীর স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, ‘মারা যাওয়ার সময় জন্মান্ধ চার ছেলেমেয়ে রেখে গেছেন। তাদের লালনপালন করে বিয়ে দিয়েছি। এখন তাদের ঘরের সন্তানরাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করছে। এ নিয়ে বিপদে আছি।’

একবেলা খেলে আরেকবেলায় না খেয়ে থাকতে হয় জানিয়ে রাশিদা বেগম বলেন, ‘একদিন ভাত মিললে আরেকদিন তরকারি মেলে না। খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটে আমাদের। সরকারিভাবে পাওয়া মাসিক ভাতা ১৫ দিনে শেষ হয়ে যায়। মাসের বাকি দিন খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়।’

আমির হোসেন বলেন, ‘আমি কোনও উপার্জন করতে পারি না। একবেলা খাইলে আরেকবেলায় খাবার পাই না। আগে বাউল গানের আসরে ঢোল বাজাতাম। প্রতিবন্ধী হওয়ায় এখন কেউ নেয় না। তিন মাস পরপর ২২৫০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। এই টাকায় সংসার চলে না। বর্তমান বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। সরকারিভাবে কম দামে যে পণ্য বিক্রি হয় তার কোনও কার্ড পাই না। প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ায় তা থেকেও বঞ্চিত আমরা।’

হাসিনা আক্তার বলেন, ‘আমার এক ছেলে এক মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। লেখাপড়া করতে পারে না। পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় কষ্টে দিন কাটে আমাদের। আমরা চিকিৎসা সহযোগিতা চাই।’

জাকির হোসেন বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার সময় ছোট ছিলাম। ছোট থেকে এ পর্যন্ত বেড়ে উঠলেও কোনও ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইনি। আমার মেয়ে জোনাকি দৃষ্টিহীন। দৃষ্টিহীন হয়ে জন্ম নেওয়ায় তার বয়স যখন এক বছর তখন তার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ যদি আমাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হতো। সমাজের আর ১০ জন মানুষের মতো আমরা বাঁচতে চাই।’

খুব কষ্টে সংসার চলে জানিয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, ‘তিন মাস পরপর সমাজসেবা অধিদফতর থেকে সরকারিভাবে ২২৫০ টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে না। আমরা সমাজে বাঁচার জন্য সহযোগিতা চাই।’

ছোটবেলা থেকেই আমি দৃষ্টিহীন জানিয়ে আমির হোসেনের স্ত্রী শিউলি আক্তার বলেন, ‘এক চোখে দেখি। ডান চোখে কিছুই দেখি না। শাশুড়িকে রান্নাবান্নার কাজে সহায়তা করি। বাবা-মা কেউ নেই। কোনও রকমে বেঁচে আছি।’

আমি আর দাদি ছাড়া পরিবারের সবাই দৃষ্টিহীন জানিয়ে আমির হোসেনের ছেলে ইমন জানায়, ‘তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। আমার বাবা অনেক কষ্ট করেন। কেউ যদি পরিবারের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসতো তাহলে এই অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতো সবাই। দৃষ্টিহীন হওয়ায় কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না।’

উজিলাব গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন ও বশির আহমদ বলেন, ওই পরিবারের আট জন দৃষ্টিহীন। খুব কষ্ট করে চলে তাদের সংসার। পরিবারে উপার্জনক্ষম বলতে কেউ নেই। সরকারি সহায়তায় সংসার চলে না। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের অনুরোধ জানাই।’

শ্রীপুর উপজেলা সামজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘হোসেন আলীর পরিবারের আট জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে মাঝেমধ্যে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি। তাদেরকে উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজের দায়িত্বশীল কেউ তাদের চিকিৎসাসেবার উদ্যোগ নিলে সবচেয়ে ভালো হতো।’

আজকের বাংলা তারিখ

December ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Nov    
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  


Our Like Page