March 10, 2025, 3:33 am
শিরোনামঃ
বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের ২ ফ্ল্যাট, ৩১৫ একর জমি জব্দ মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হাইকোর্টের নির্দেশ হিজবুত তাহরীরের ৫ সদস্যকে কারাগারে প্রেরণ ঝিনাইদহে কৃষকদের ‘অবহিতকরণ-পরিকল্পনা প্রণয়ন-মূল্যায়ন’ বিষয়ক কর্মশালা চট্টগ্রামে ৩৯ ‘অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী’ গ্রেফতার  নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে ঝিনাইদহে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত গাজায় ইসরাইলি গণহত্যায় ৪০ জনেরও বেশি বন্দী নিহত : নিউ ইয়র্ক টাইমস মুক্তি পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ; আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল সিরিয়ার সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করল লেবাননের হিজবুল্লাহ
এইমাত্রপাওয়াঃ
আমাদের সাইটে নতুন ভার্ষনের কাজ চলছে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

গাজীপুরের একই পরিবারের ৮ জন দৃষ্টিহীন ; দিন কাটে কষ্টে

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রথমে বাবা, পরে সন্তান, তারপর নাতিরা—একে একে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মেছেন তারা। এখন এই পরিবারের আট জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দিনে একবেলা খেলে আরেক বেলায় খাবার জোটানো দায়। সরকারিভাবে পাওয়া মাসিক ভাতা ১৫ দিনে শেষ হয়ে যায়। প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংকট থেকে পরিবারটি বের হতে পারছে না। মাঝেমধ্যে খাবার সহায়তা পেলেও কারও কাছ থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সহায়তা পাননি এই পরিবারের সদস্যরা।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার উজিলাব (হলাটিরচালা) গ্রামের হোসেন আলীর পরিবারের ১০ সদস্য। এর মধ্যে আট জনই জন্মান্ধ। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

এই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোসেন আলী ২০০২ সালে মারা যান। একটি চোখে কিছুই দেখতেন না। আমৃত্যু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটিয়েছেন। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে। চার ছেলেমেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মেছেন। স্ত্রী রাশিদা বেগম অনেক কষ্ট করে সন্তানদের বড় করে বিয়ে দেন। পরে তাদের ঘরের সন্তানরাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মান। বংশ পরম্পরায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় এখন তারা শঙ্কিত। চিকিৎসাসেবায় কেউ এগিয়ে এলে গ্লানি মুছে যাবে—এমন স্বপ্ন দেখেন তারা।

দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা হলেন—হোসেন আলীর ছেলে আমির হোসেন, আমিরের স্ত্রী শিউলি আক্তার, আমিরের বোন নাসরিন আক্তার, হাসিনা আক্তার, আমিরের ভাই জাকির হোসেন, জাকির হোসেনের সন্তান জোনাকি আক্তার ঝিনুক, হাসিনার মেয়ে রূপা আক্তার ও ছেলে মারুফ মিয়া। এর মধ্যে হোসেন আলীর চার ছেলেমেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও অন্যরা পান না।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অবস্থায় ২০০২ সালে স্বামী মারা গেছেন উল্লেখ করে হোসেন আলীর স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, ‘মারা যাওয়ার সময় জন্মান্ধ চার ছেলেমেয়ে রেখে গেছেন। তাদের লালনপালন করে বিয়ে দিয়েছি। এখন তাদের ঘরের সন্তানরাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করছে। এ নিয়ে বিপদে আছি।’

একবেলা খেলে আরেকবেলায় না খেয়ে থাকতে হয় জানিয়ে রাশিদা বেগম বলেন, ‘একদিন ভাত মিললে আরেকদিন তরকারি মেলে না। খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটে আমাদের। সরকারিভাবে পাওয়া মাসিক ভাতা ১৫ দিনে শেষ হয়ে যায়। মাসের বাকি দিন খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়।’

আমির হোসেন বলেন, ‘আমি কোনও উপার্জন করতে পারি না। একবেলা খাইলে আরেকবেলায় খাবার পাই না। আগে বাউল গানের আসরে ঢোল বাজাতাম। প্রতিবন্ধী হওয়ায় এখন কেউ নেয় না। তিন মাস পরপর ২২৫০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। এই টাকায় সংসার চলে না। বর্তমান বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। সরকারিভাবে কম দামে যে পণ্য বিক্রি হয় তার কোনও কার্ড পাই না। প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ায় তা থেকেও বঞ্চিত আমরা।’

হাসিনা আক্তার বলেন, ‘আমার এক ছেলে এক মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। লেখাপড়া করতে পারে না। পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় কষ্টে দিন কাটে আমাদের। আমরা চিকিৎসা সহযোগিতা চাই।’

জাকির হোসেন বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার সময় ছোট ছিলাম। ছোট থেকে এ পর্যন্ত বেড়ে উঠলেও কোনও ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইনি। আমার মেয়ে জোনাকি দৃষ্টিহীন। দৃষ্টিহীন হয়ে জন্ম নেওয়ায় তার বয়স যখন এক বছর তখন তার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ যদি আমাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হতো। সমাজের আর ১০ জন মানুষের মতো আমরা বাঁচতে চাই।’

খুব কষ্টে সংসার চলে জানিয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, ‘তিন মাস পরপর সমাজসেবা অধিদফতর থেকে সরকারিভাবে ২২৫০ টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে না। আমরা সমাজে বাঁচার জন্য সহযোগিতা চাই।’

ছোটবেলা থেকেই আমি দৃষ্টিহীন জানিয়ে আমির হোসেনের স্ত্রী শিউলি আক্তার বলেন, ‘এক চোখে দেখি। ডান চোখে কিছুই দেখি না। শাশুড়িকে রান্নাবান্নার কাজে সহায়তা করি। বাবা-মা কেউ নেই। কোনও রকমে বেঁচে আছি।’

আমি আর দাদি ছাড়া পরিবারের সবাই দৃষ্টিহীন জানিয়ে আমির হোসেনের ছেলে ইমন জানায়, ‘তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। আমার বাবা অনেক কষ্ট করেন। কেউ যদি পরিবারের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসতো তাহলে এই অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতো সবাই। দৃষ্টিহীন হওয়ায় কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না।’

উজিলাব গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন ও বশির আহমদ বলেন, ওই পরিবারের আট জন দৃষ্টিহীন। খুব কষ্ট করে চলে তাদের সংসার। পরিবারে উপার্জনক্ষম বলতে কেউ নেই। সরকারি সহায়তায় সংসার চলে না। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের অনুরোধ জানাই।’

শ্রীপুর উপজেলা সামজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘হোসেন আলীর পরিবারের আট জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে মাঝেমধ্যে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি। তাদেরকে উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজের দায়িত্বশীল কেউ তাদের চিকিৎসাসেবার উদ্যোগ নিলে সবচেয়ে ভালো হতো।’

আজকের বাংলা তারিখ

March ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Feb    
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  


Our Like Page