03 Dec 2024, 11:11 pm

গীবত বা পরনিন্দা সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদীসে রসুল (সঃ) এর বাংলা অর্থ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

“তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে যে, তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে ? তোমরা নিজেরাই এটাকে ঘৃণা করবে। মহান আল্লাহকে ভয় কর। মহান আল্লাহ অধিক তওবা কবুলকারী এবং দয়াময়”। (সূরা : হুজুরাত ঃ আয়াত : ১২)
এমন  কোন জিনিষের পিছনে লেগো না। যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চিত জেনে রাখ, চোখ কান ও দিল সব কিছুর জন্যই জবাবদিহি করতে হবে”। (সূরা : বনী ঈসরাঈল ঃ আয়াত : ৩৬)
যে শব্দই তার মুখে উচ্চারিত হয়, তা সংরক্ষণের জন্য একজন সর্বক্ষণ প্রস্তুত পর্যবেক্ষক নিযুক্ত রয়েছে”। (সূরা : ক্বা-ফ ঃ আয়াত : ১৮)

১. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “যে ব্যাক্তি মহান আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেনভাল কথা বলে কিংবা চুপ থাকে। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
২. হযরত আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম- ইয়া রসুলুল্লাহ (সঃ) মুসলমানদের মধ্যে কে সর্বোত্তম মুসলমান ? তিনি বললেন, “যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে সেই সর্বোত্তম মুসলমান”।
৩. হযরত সাহল ইবনে সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, “যে ব্যাক্তি আমাকে তার দু’চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিষের (জিহŸা) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী জিনিষের  (যৌনাঙ্গ) নিশ্চয়তা দিতে পারবে আমি তার জান্নাতের নিশ্চয়তা হতে পারি”।  (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৪. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি- রসুলুল্লাহ (সঃ) কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন,  “বান্দা যখন ভালোমন্দ বিচার না করেই কোন কথা বলে, তখন তার কারণে সে নিজেকে জাহান্নামের এতোদুর গভীরে নিয়ে যায় যা পূর্ব ও পশ্চিমের দুরত্বের সমান”। (বোখারী ও মুসলিম)
৫. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রসুলুল্লাহ (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বান্দা যখন মহান আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টিমূলক কথা বলেকিন্তু এর পরিণামের পরওয়া করে না, তখন এর পরিবর্তে মহান আল্লাহ্ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা মহান আল্লাহ্ তা’আলার অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে, কিন্তু এর পরিণতি সম্পর্কে সে মোটেই চিন্তা করে না, তখন একথা দ্বারা সে নিজেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। (মুসলিম শরীফ)
৬. হযরত উক্বা ইবনে আমির (রাঃ) বলেন- আমি বরলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ (সঃ)! নাজাতের উপায় কি? তিনি বললেন, “তোমার জিহŸাকে সংযত রাখ। নিজের ঘরকে প্রশস্ত কর এবং কৃত অপরাধের জন্য কান্নাকাটি কর। (তিরমিযী শরীফ)
৭. হযরত আবু আব্দুর রহমান বিলাল ইবনে হারিস মুযানী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, মানুষ তার মুখ দিয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক বাক্য উচ্চারণ করে, অথচ সে জানে না একথার মূল্য ও মর্যাদা কত, মহান আল্লাহ্ তাঁর সাথে সাক্ষাতের দিন অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তার জন্য নিজের সন্তুষ্টি রিখে দেন। আর মানুষ মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে, অথচ সে এর পরিণাম সম্পর্কে একটুও চিšত্মা করে না। মহান আল্লাহ্ তাঁর জন্য কিয়ামতে তার সাক্ষাতে হাজির হবার সময় অসন্তুষ্টি লিখে দেন। (মুয়াত্তা ও তিরমিযী শরীফ)
৮. হযরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন- আমি বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ (সঃ)! আমাকে এমন একটা বিষয় বলে দিন যা আমি দৃঢ়তার  সাথে ধরে থাকব। তিনি বললেন , বল, মহান আল্লাহই আমার প্রভু প্রতিপালক এবং এর উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাক। আমি পুনরায় বললাম- ইয়া রসুলুল্লাহ (সঃ)! কোন জিনিষকে আপনি আমার জন্য সর্বাধিক ভয়ের কারণ বলে মনে করেন ? তখন তিনি নিজ জিহবা স্পর্শ করে বললেন, এটি। (তিরমিযী শরীফ)
৯. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- মহান আল্লাহর যিকির ছাড়া বেশি কথা বলো না। কেননা মহান আল্লাহ তা’আলার যিকির বা স্মরণ ছাড়া বেশী কথাবার্তা মনকে কঠোর করে দেয়, আর কঠোর মনের ব্যক্তিই মহান আল্লাহ্ থেকে সর্বাধিক দুরে। (তিরমিযী শরীফ)
১০. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ দু’চোয়ালের মধ্যবর্তী স্থানের অর্থাৎমুখের দুষ্কর্ম এবং দু’পায়ের মধ্যবর্তী স্থানের অর্থাৎ যৌনাঙ্গের দুষ্কর্ম থেকে রক্ষা করেছেন সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (তিরমিযী শরীফ)
১১. হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) রসুলুল্লাহ (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আদম সšত্মান যখন সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে তখন তখন তার শরীরের যাবতীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তার কাছে অনুনয়-বিনয় করে বলে, আমারে ব্যাপারে মহান আল্লাহকে ভয় কর। কেননা আমরা তোমার সাথেই আছি। যদি তুমি ঠিক থাকতে পার তবে আমরাও ঠিক থাকব। যদি তুমি বাঁকা পথ ধর তবে আমরাও খারাপ হয়ে যাব। (তিরমিযী শরীফ)
১২. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন- তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন, মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলই (সঃ) ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমরা ভাইয়ের এমন প্রসঙ্গ আলোচনা কর, যা সে অপছন্দ করে। বলা হল- আপনার কি মত। আমি যা আলোচনা করলাম তা যদি তার মধ্যে থেকে থাকে? তিনি বললেন, যে সব দোষ তুমি বর্ণনা করেছ তা যদি সত্যিই তার মধ্যে থেকে থাকে, তবেই তো তার গীবত করলে। যদি তার মধ্যে সে দোষ না থেকে থাকে তবে তুমি তার প্রতি মিথ্যা ও অপবাদ আরোপ করলে। (মুসলিম শরীফ)
১৩. হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সঃ)-কে বললাম, সাফিয়ার ব্যাপারে অর্থাৎ তার এ দোষগুলো আপনার জন্য যথেষ্ট। কোন কোন রাবী বলেন, সাফিয়া (রা) বেঁটে ছিলেন। তিনি বললেন, তুমি এমন একটি কথা বলেছ, তা যদি সাগরের পানিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়. তাহলে পানির ওপর তা প্রভাব বিস্তার করবে। আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন- আমি তাকে এক ব্যাক্তির অনুকরণ করে দেখালাম। তিনি বললেন, আমি কোন মানুষের নকল বা অনুকরণ পছন্দ করি না। যদিও আমার জন্য এরূপ হয়। (আবু দাউদ ও তিরমিযী শরিফ)
১৪. হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন- যখন আমাকে মি’রাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আমি এমন একদল লোকের সামলে দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখগুলো ছিল বড় বড়। তারা নখ দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশ খামচাচ্ছে। আমি বললাম- হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের মান ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলত। (আবু দাউদ শরীফ)
১৫. হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) বিদায় হজ্জে কুরবানীর দিন মিনা নামক স্থানে তার বক্তৃতায় বলেন- তোমাদের পরস্পরের রক্ত বা জীবন, ধন-সম্পদ ও মান-ইজ্জত পরস্পরের প্রতি হারাম ও সম্মানের যোগ্য। যেমনিভাবে আজকের এ দিন, এ মাস, এ শহর তোমাদের জন্য হারাম ও সম্মানের। আমি কি তোমাদের কাছে মহান আল্লাহর বাণী পৌছে দিয়েছি ? (বোখারী ও মুসলিম)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 7368
  • Total Visits: 1365312
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1669

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১লা জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১১:১১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018