অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জীবিত মা ও ছেলেকে মৃত দেখিয়ে জাল ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে জমি রেজিস্ট্রির অভিযোগ উঠেছে। মিরসরাই সদর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের ৮০ বছর বয়সী শরিফা খাতুনকে মৃত বানিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ দেওয়া হয়েছে মর্মে চেয়ারম্যান বরাবরে ব্যাখ্যা চাইলে জাল ওয়ারিশ সনদ ও জায়গা রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি সামনে আসে।
বৃদ্ধা শরিফা খাতুন অভিযোগ করেন, তার নিজের নামে ও ছেলে নিজাম উদ্দিনের (প্রবাসী) নামে একশো দুই শতক সম্পত্তি রয়েছে। ছেলে প্রবাসে থাকায় ছেলের স্ত্রী কামরুন নাহার শাশুড়ি শরিফা ও শ্বশুর রেনু মিয়াকে ঘর থেকে বের করে দেন। এরপর নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী কামরুন নাহার এবং ছেলে তারিফ হোসেন ও শরিফুল ইসলাম ষড়যন্ত্র করে শরিফা ও নিজামকে মৃত বানিয়ে মিরসরাই ইউনিয়ন পরিষদের দুইটি জাল ওয়ারিশ সনদ (সনদ নম্বর ১০৪ ও ১০৫) তৈরি করেন।
ওই ওই বৃদ্ধা আরও বলেন, সেই সনদগুলো ব্যবহার করে তারিফ হোসেন তার ভাই শরিফুল ইসলাম ও মা কামরুন নাহার চলতি বছরের ২২ মে মিরসরাই সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ২৯০৬ নম্বর দলিলে ৫১ শতক জায়গা হেবা রেজিস্ট্রেশন করেন। জায়গাগুলো মিরসরাই সাব রেজিস্ট্রেশন অফিসের দলিল লেখক মো. খোরশেদ আলমের মাধ্যমে করা হয়। পরে রেজিস্ট্রেশন করা দলিল মূলে তারিফ হোসেনের নামে মিরসরাই ভূমি অফিস থেকে খতিয়ানও করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল আলম দিদার বলেন, শ্রীপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির আবেদনের মাধ্যমে ১০৪ নম্বর ওয়ারিশ সনদ দেওয়া হয়। ওই সনদে মৃত উজ্জল মিয়ার ওয়ারিশ হিসেবে বিন্দু মিয়ার নামে সনদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আবেদনকারী ইকবাল হোসেনসহ প্রতারকচক্র ১০৪ নম্বর আসল ওয়ারিশ সনদকে কম্পিউটারে স্ক্যান করে জালিয়াতির মাধ্যমে শরিফা খাতুনকে মৃত বানিয়ে ওয়ারিশ হিসেবে ছেলে নিজাম উদ্দিনের নাম বসিয়ে দেয়।
অভিযুক্ত কামরুন নাহার, তারিফ হোসেন ও শরিফুল ইসলাম
তিনি বলেন, এরপর আবুনগর এলাকার আব্দুর রহিম নামে আরেক ব্যক্তির আবেদনের মাধ্যমে ১০৫ নম্বর ওয়ারিশ সনদ দেওয়া হয়েছে। ওই সনদে নুর আহম্মদের পাঁচজনকে ওয়ারিশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রতারকচক্র ওই সনদটিকেও কম্পিউটারে জালিয়াতির মাধ্যমে জীবিত নিজাম উদ্দিনকে মৃত দেখিয়ে স্ত্রী কামরুন নাহার, ছেলে তারিফ হোসেন ও শরিকুল ইসলামকে ওয়ারিশ বানিয়ে সনদ তৈরি করেছে।
চেয়ারম্যান সামছুল আরও বলেন, জীবিত ব্যক্তিদের মৃত বানিয়ে ওই সনদগুলো ব্যবহার করে এরই মধ্যে জীবিত ব্যক্তিদের নামে থাকা এক একরের বেশি জায়গা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। শরিফা খাতুনের আবেদনের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জাল সনদ ও জায়গা রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি সামনে আসে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কামরুল নাহারের সঙ্গে কথা বলতে তার ব্যক্তিগত মোবাইলফোনে কল দিয়ে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে তারিফ হোসেন প্রবাসে থাকেন। আর অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম বলেন, ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি করেছে ইকবাল হোসেন নামে একজন। সে আরও এমন ওয়ারিশ সনদ জাল করেছে। তবে তাদের নেওয়া ওয়ারিশ সনদটি ভুয়া বলেও স্বীকার করেন তিনি।
মিরসরাই সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক খোরশেদ আলম জানান, কম্পিউটারের মাধ্যমে জাল ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে নিয়ে আসার তিনি সনদগুলো আসল না নকল বুঝতে পারেননি। পরে মিরসরাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামছুল আলম দিদারের মাধ্যমে তিনি জেনেছেন সনদগুলো নকল ছিল।
তিনি বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য দলিলের দাতা ও গ্রহীতাদের আসতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র ভালোভাবে না দেখে দলিল রেজিস্ট্রেশন করা তার ঠিক হয়নি বলেও স্বীকার করেন তিনি।
Leave a Reply