বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়াকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১ মার্চ) কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি এ নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, ওসির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন আলম নামের এক স্থানীয় সংবাদকর্মী। তিনি জানান, তাকে থানায় আটক করে নির্যাতন করা হয়েছে।
ওই সংবাদকর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশকে ফোনকলের মাধ্যমে অভিযুক্ত ওসিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এছাড়া সাংবাদিকদের সত্য সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শুক্রবার আপনারা একটি সংবাদ দেখেছেন, যেখানে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতির সময় এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়নি। তারপরও কিছু মিডিয়া সংবাদটি প্রকাশ করেছে। এতে ওই নারী সমাজে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে আপনাদের কিছু সংবাদে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়। আপনাদের অনুরোধ করছি, সত্য সংবাদ প্রকাশ করুন। আমি নিজেও একসময় সাংবাদিকতা করেছি। আমি একসময় মর্নিং নিউজে ছিলাম।’
চট্টগ্রামে আমদানীকৃত ফলের অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধিতে দিতেহারা সাধারণ ক্রেতারা
বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে আমদানীকৃত ফলের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ এখন আর ফলে কিনে খেতে পারছেনা। শুধুমাত্র উচ্চবিত্তরা এখন এ ফল কিনছে। ফলে মধ্যবিত্ব ও নিম্নবিত্তের ফল খাওয়া দুরূহ হয়ে গেছে আরও ৫-৬ বছর আগে। এতে ক্রেতা কমে যাওয়ায় তলানিতে ঠেকেছে ফল বেচাকেনা।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ফলের পাইকারি আড়ৎ রেয়াজ উদ্দিন বাজারের ফলমন্ডি ও খুচরা বাজার বহদ্দারহাট, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলি ফলের বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে ফলের বাজারে এখন তেমন কোনো বিদেশি ফল নেই। চায়না থেকে আনা কিছু ফল আর দেশি ফলেই চলছে এই ব্যবসা। তবে দেশি ফল বিদেশি ফলের মতো সুমিষ্ট ও মানসম্মত না হওয়ায় ক্রেতাও নেই। তাছাড়া বিদেশি ফলের সংকটে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে দেশি ফলের দাম। এতে মধ্যবিত্ত যারা আগে ফলের ক্রেতা ছিলেন তারা আর ফল কিনতে আসেন না। কতিপয় উচ্চবিত্ত শ্রেণির কিছু মানুষ মাঝেমধ্যে ফল কিনছেন।
ফল ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ফলের ব্যবসায় ধস নামে করোনা সংক্রমণের সময় থেকে। এ সময় ডলার সংকটে এলসি (ঋণপত্র) খোলার জটিলতায় ফল আমদানি নিরুৎসাহ করেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী। এরপর থেকে ফলের বাজার অস্থির হতে শুরু করে। এই সময় মাত্র দুই-তিন দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি ফলের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
এ অবস্থায় ওই সময় রমজানে খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ফলও পায়নি ক্রেতারা। তখন থেকে দেশি ফল বিক্রি করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এরপর শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এতে ডলার সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠে। তখন সব ভোগ্যপণ্যের মতো ফল আমদানিতেও প্রভাব পড়ে। অর্থপাচার, অনিয়ম-দুর্নীতিতে এই সংকট আর কাটেনি।
চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটের ফল ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন বলেন, পাইকারি বাজারে এখন চায়না থেকে আমদানি করা কমলা, কেনু, আপেল, আঙ্গুর, নাশপাতি এবং দেশের পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত আপেল, মাল্টা, আঙুর, কমলা, আনারস, কলা, পেয়ারা ছাড়া আর কোনো ফল নেই।
তিনি বলেন, বাজারে দেশের পাহাড়ে উৎপাদিত আপেল কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, মাল্টা ৩২০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রয় হচ্ছে ৪২০ টাকায়। আঙ্গুর ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০০ টাকায়। পেয়ারাও কেজিপ্রতি ১০০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রয় হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
এছাড়া চায়না কমলা ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, কেনু ২৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫০ টাকা, নাশপাতি ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা, আনার প্রতিকেজি ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়, কলা ডজন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। এভাবে ফলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারাও ফল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
ফলের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারের ফলমন্ডির পাইকারি ফলের ব্যবসায়ীরাও। পাইকারি ফল ব্যবসায়ী তসকির আহমেদ বলেন, রমজানকে সামনে রেখে চীন থেকে কিছু ফল আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু ফল খালাসের আগেই এনবিআর থেকে ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করে। ১০ শতাংশ বৃদ্ধির এ ঘোষণার সঙ্গে বাজারের প্রত্যেকটি ফলের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। ফলে আমদানি করা ফল খালাস নিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়েছে দেশি ফলের ওপর। যা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা সৈয়দ মুনিরুল হক জানান, বিদেশি ফলের আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণায় আমদানিকারকরা আন্দোলন শুরু করেছেন। ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফলের চালান খালাস করেননি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। এতে বাজারে প্রভাব পড়েছে।
তিনি জানান, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে রমজান পর্যন্ত দেশে বিদেশি ফলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময়ে বাজারে আমদানি করা ফল না থাকায় শুধুমাত্র দেশি ফল দিয়ে বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাজারে সব ধরনের ফলের দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়ছে। অন্যদিকে ক্রেতা না থাকায় মার খাচ্ছেন ফল ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারি ফলের আড়ৎ ফলমন্ডি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ফল আমদানিকারক তৌহিদুল আলম বলেন, এর আগে আমদানিকারক ও ফলমন্ডির ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেছেন। আমদানি ফলের চালান খালাস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে এনবিআর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বর্ধিত শুল্ক বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা আন্দোলন শিথিল করেছেন। কিন্তু বাজারে তো ফল ব্যবসা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ফল আমদানির ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে শুল্ককর কমাতে হবে।
চট্টগ্রামের দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নুরু অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার
বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ৩১টি মামলার আসামি নুরে আলম প্রকাশ নুরুকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে আকবরশাহ থানাধীন ১ নম্বর ঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তার তার কাছ থেকে একটি দেশীয় তৈরি এলজি ও ৬ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (পিআর অ্যান্ড মিডিয়া) মাহমুদা বেগম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘নুরে আলম নুরু চট্টগ্রাম নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অন্যতম। তার বিরুদ্ধে মাদক, চাঁদাবাজি, পাহাড় কাটা, ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে ৩১টি মামলা রয়েছে।’
পুলিশ জানিয়েছে, শুরুতে নুরু ফয়’স লেকের রিসোর্টে একজন কর্মচারী ছিল। পরে ধীরে ধীরে সে পাহাড়ের মাটি কাটা শুরু করে। এ সময় স্থানীয় প্রভাবশালীদের অনেকেই তাকে ব্যবহার করতে শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় নুরুর অপরাধ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটে।
পাহাড় দখল, পাহাড় কাটা, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসাসহ সব রকমের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পরে সে। ২০১৪ সালে দায়ের করা একটি অস্ত্র মামলায় ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে ১৭ বছরের সাজা দেন আদালত।
Leave a Reply