বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় রাতে আঁধারে ফসলী জমির উপরিভাগের মাটি কাটায় মো. আবদুল মান্নান নামের এক ব্যক্তিকে তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) ভোর ৬টার দিকে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের কলঘর এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সাতকানিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত সিদ্দিকী বলেন, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) কাটার সময় হাতেনাতে মো. আবদুল মান্নান (৩৯) নামের এক যুবককে আটক করা হয়। পরে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর আওতায় তাকে ৩ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
অভিযানে সহযোগিতা করেন সাতকানিয়া থানার পুলিশ সদস্য ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারীরা। জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান আরাফাত সিদ্দিকী।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএসআরএম কারখানার ওপর থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএসআরএম কারখানায় কাজ করার সময় ওপর থেকে পড়ে সুজন চন্দ্র নাথ (৩০) নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সুজন উপজেলার কাটাছরা ইউনিয়নের তেতৈয়া গ্রামের সুভাষ চন্দ্র নাথের ছেলে।
সুজনের প্রতিবেশী অহিদুর রহমান জানান, প্রতিদিনের মতো বিএসআরএম কারখানার ওপরে কাজ করছিলেন সুজন। অসাবধানবসত নিচে পড়ে গেলে তাকে চলন্ত একটি গাড়ি চাপা দেয়। এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বিএসআরএম গ্রুপের ম্যানেজার (এডমিন) দেলোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, দুপুরে কাজ করার সময় সুজন নামে এক শ্রমিক ওপর থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে বাকপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধের মৃত্যু
বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথের চকরিয়ার পহরচান্দা এলাকায় ট্রেনের ইঞ্জিন বগিতে কাটা পড়ে শাহ আলম (৬৫) নামে এক বাকপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। রোববার (১৪ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা গোবিন্দপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শাহ আলম ওই এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান বলেন, ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় কক্সবাজারগামী একটি ইঞ্জিনবগিতে কাটা পড়ে শাহ আলম নিহত হয়েছেন। তার দুটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শাহ আলম বাকপ্রতিবন্ধী ও পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছে। পরিবারের সিদ্ধান্তে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হবিগঞ্জে কৃষককে খুনের ঘটনায় চট্টগ্রাম থেকে বাবা–ছেলে গ্রেফতার
বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : হবিগঞ্জের কৃষক বধুলাল খুনের ঘটনায় চট্টগ্রাম থেকে বাবা ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র্যাব)। তারা হলেন- বাবুল মিয়া ও তার ছেলে করিম মিয়া।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকালে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নূরুল আবছার।
র্যাব জানায়, আসামি বাবুল মিয়া লাখাই থানার চরগাঁও এলাকার জবান উল্লার ছেলে। ভুক্তভোগী বধুলাল দাস হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার হেলারকান্দি এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয় হাওরের জমিতে চাষাবাদ করত।
অভিযুক্ত বাবুল এবং সহযোগীরা বধুলালের প্রতিবেশী। দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের মধ্যে জমি চাষাবাদ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। একাধিক বার স্থানীয় ভাবে তাদের মধ্যে মীমাংসা হয়। গত ১১ জানুয়ারি রাতে একটি সাংস্কৃতিক অনুুষ্ঠান শেষে বাড়ী ফেরার পথে লাখাই থানার কাঠালকান্দি এলাকায় বধুলাল দাসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী বাদী হয়ে লাখাই থানায় মামলা করেন।
চট্টগ্রাম র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নূরুল আবছার বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামি চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকা থেকে বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মদুনা ঘাট এলাকা থেকে ছেলে করিম মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যালে এনজিওগ্রাম মেশিন ১০ দিন ধরে বিকল: হৃদরোগীদের হার্টে রিং পরানো বন্ধ
বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সচল ক্যাথল্যাব মেশিনটিও নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে হৃদরোগীদের হার্টে রিং পরানো, পেসমেকার স্থাপন, এনজিওগ্রাম ও ভালভ সম্প্রসারণের (পিটিএমসি) মতো জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সেবা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হৃদরোগে আক্রান্ত গরিব রোগীরা। কবে নাগাদ ক্যাথল্যাব মেশিনটি সচল হবে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ল্যাবে ছিল দুটি ক্যাথল্যাব মেশিন। এর মধ্যে প্রথমটি নষ্ট হয় ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর। প্রায় পাঁচ কোটি টাকায় কেনা জাপানের শিমার্জু ব্র্যান্ডের এই ক্যাথল্যাব মেশিন স্থাপন করা হয় ২০১৬ সালে। শুধুমাত্র মেশিনটির একটি এক্সরে টিউব নষ্ট হওয়ায় সেটি অকেজো হয়ে গত দুই বছর ধরে পড়ে আছে। যা সচল করতে করতে কোটি টাকার বেশ চাওয়া হচ্ছে। ওই টাকার জোগান দিতে না পারায় মেশিনটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে।
এরই মধ্যে ৪ জানুয়ারি এক রোগীর হার্টের রিং বসানোর সময় নষ্ট হয়ে যায় সচল ক্যাথল্যাব মেশিনটিও। এরপর থেকে হৃদরোগ বিভাগে বন্ধ রয়েছে হাটে রিং পরানোসহ ক্যাথল্যাব সহায়ক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা। সরকারি এ হাসপাতালে নামমাত্র মূল্যে রোগীরা যে ধরনের চিকিৎসা সেবা পেত। এখন একই চিকিৎসা পেতে বেসরকারি হাসপাতালে অনেকগুণ বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ৪ জানুয়ারি অচল হওয়া এনজিওগ্রাম মেশিনটি স্থাপন করা হয়। পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকায় কেনা এ মেশিনের সাত বছরের ওয়ারেন্টি ছিল। ইতোমধ্যে ক্যাথল্যাব সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিগ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেডের প্রকৌশলীরা তিন দিন চেষ্টা চালিয়েও ত্রুটি সারাতে পারেননি। এ মেশিনের টিউব নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তারা। যেটি আনতে হবে জাপান থেকে। যা সময় সাপেক্ষ বলছে চমেক হাসপাতাল কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ এই এনজিওগ্রাম মেশিনটি দিয়ে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ জন হৃদরোগীর এনজিওগ্রাম, ৫ থেকে ৭ জন রোগীর এনজিওপ্লাস্টিক করা হয়। এর বাইরে হার্টে স্থায়ী পেসমেকার (পিপিএম) স্থাপন ও পেরিপাইরাল এনজিওগ্রামের চিকিৎসাও হতো এ মেশিনের সাহায্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করতে সবমিলিয়ে রোগীদের খরচ হতো ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। যা বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে একই চিকিৎসা পেতে রোগীদের খরচ করতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। একইভাবে হার্টের একটি রিং স্থাপনে চমেক হাসপাতালে ব্যয় হতো ৯০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা। বেসরকারি হাসপাতালে একই সেবা নিতে খরচ করতে হচ্ছে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।
চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. আশীষ দে বলেন, ‘গত ৪ জানুয়ারি থেকে হৃদরোগ রোগীদরে চিকিৎসায় অতিগুরুত্বপূর্ণ ক্যাথল্যাব মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে আমাদের স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী অনেক ক্ষতি হচ্ছে। যেমন হার্টবিট কম নিয়ে আসা রোগীদের পেসমেকার করে রোগীর জীবন রক্ষা করা যেত। ক্যাথল্যাব নষ্ট হওয়ায় এখন তা করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে অনেক গরিব রোগী কম খরচে এনজিওগ্রাম এবং হার্টের রিং লাগাতো। তারা এখন করতে পারছে না। যা বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে অনেক ব্যয়বহুল।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘ক্যাথল্যাব মেশিন নষ্ট হওয়ার বিষয়টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে জানিয়েছি। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশলীরা এসে তা দেখে গেছেন। ত্রুটি সারানোর জন্য মেশিনটির ডাটাবেজ সংগ্রহ করে তা জাপানে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়েছে। তারা কিছুদিন সময় চেয়েছে। আমরা বলেছি, তাদের কাছে যদি কোনও বিকল্প যন্ত্রপাতি থাকে তাহলে তা দিয়ে হলেও ক্যাথল্যাব মেশিনটি চালুর ব্যবস্থা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে একটি মাত্র ক্যাথল্যাব দিয়ে হৃদরোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এটি যেকোনও সময় নষ্ট হতে পারে তা আশংকা প্রকাশ করে গেলো বছর মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় থেকে একটি নতুন মেশিন দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি।’