বশির আল–মামুন চট্টগ্রাম : সিএমপির ৩৩তম কমিশনার হয়েছেন উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাসিব আজিজ। তিনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট পদে কর্মরত ছিলেন।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ পুলিশ-১ শাখার উপসচিব মো. মাহাবুর রহমান শেখ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ পদায়ন করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাসিব আজিজ শরীয়তপুর জেলার সফিপুর থানায় ১৯৭১ সালের ৩০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ১৫তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হিসেবে ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। হাসিব আজিজ ২০০২ সালে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
হাসিব আজিজের বাবা এম আজিজুল হক বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি ছিলেন।
গত ২৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ পুলিশ-১ শাখার উপ সচিব সিরাজাম মুনিরা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সিএমপির ৩২তম কমিশনার হিসেবে উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. সাইফুল ইসলামকে পদায়ন করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির পদত্যাগ দাবিতে তিন দিন ধরে চলছে বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচী
বশির আল–মামুন , চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহর পদত্যাগ দাবিতে ওয়াসা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি চলছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে চট্টগ্রাম বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এ সময় আন্দোলনকারীদের ওয়াসার এমডির পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। গত তিন দিন ধরে এমডির পদত্যাগ দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন।
এদিকে, আন্দোলনকারীরা চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবনের এমডির কক্ষে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওয়াসার কিছু অস্থায়ী কর্মচারী তাদের বাধা দেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি ফজলুল্লাহ বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিয়ে বলছেন, আমি নাকি প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি করেছি। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে আপনজনদের চাকরি দিয়েছি। তাদের এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রকল্প থেকে আমার এক টাকাও নেওয়ার সুযোগ নেই। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার এক জরাজীর্ণ অবস্থায় আমি ২০০০ সালে দায়িত্ব নিয়েছি। তখন চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদনক্ষমতা ছিল মাত্র ১২ কোটি লিটার পানি। বর্তমানে তা ৫৬ কোটি লিটারে উন্নীত করা হয়েছে।’
নুরুল ইসলাম নামে চট্টগ্রাম ওয়াসার এক অস্থায়ী কর্মচারী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গত ১৫ বছরে ওয়াসায় কমপক্ষে ৩০০ জন অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে রাজস্ব খাতে স্থায়ী করা হয়নি। আমাদের চাকরি স্থায়ী করার জন্য এমডির কাছে দাবি করেছি।’
আবদুল মহিন নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার সব নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজনরাই নিয়োগ পেয়েছে। যে ৩০০ অস্থায়ী শ্রমিক আছে তাদের বাদ দিতে হবে। নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মেধাবীদের নিতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির অনেক দুর্নীতি-অনিয়ম আছে। তিনি কোনও প্রকল্প সঠিক সময়ে শেষ করতে পারেননি। প্রত্যেক প্রকল্পে সময় ও ব্যয় বেড়েছে। এসব হয়েছে দুর্নীতির কারণে। আমরা তার পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেননি। এ জন্য চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকরা তার পদত্যাগের দাবিতে আজ মঙ্গলবার ওয়াসা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছে। লাগাতার এ আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে সোমবার চার দফা দাবি আদায়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহকে আলটিমেটাম দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী দল। ওয়াসা ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
গত রবিবার দুপুর থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির পদত্যাগসহ ১৭ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ। সেই থেকে ১৫ বছর ধরে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
তাগাদা দিয়েও তুলতে পারছে না পাঁচ ব্যাংকে রাখা ১১০৬ কোটি টাকা: বিপাকে চট্টগ্রাম বন্দর
বশির আলমামুন চট্টগ্রাম : এস আলম নিয়ন্ত্রিত চার ব্যাংকসহ পাঁচটি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) রেখে বেকায়দায় পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। লাভের আশায় এসব ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন লাভতো দূরে থাক মূল টাকাটাও ফেরত পেতে একাধিক বার চিঠি দিয়েও আদায় করা যাচ্ছে না। এমনকি এসব টাকা উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ পাঁচটি ব্যাংকে বন্দরের জমা রয়েছে এক হাজার ১০৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকগুলোর লুটপাট দৃশ্যমান হয়েছে। অনেক ব্যাংক ভুগছে তারল্য সংকটে। যে কারণে ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব টাকা আদায়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, এস আলম নিয়ন্ত্রণাধীন চারটিসহ মোট পাঁচটি ব্যাংকে চট্টগ্রাম বন্দরের স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা এক হাজার ১০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এস আলম নিয়ন্ত্রিত চারটি ব্যাংকের ২১টি শাখায় চট্টগ্রাম বন্দরের স্থায়ী আমানত আছে ৯২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের চারটি শাখায় ২১২ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চারটি শাখায় ১৯০ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দুটি শাখায় ১১৫ কোটি ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ১১টি শাখায় ৪১১ কোটি টাকা রয়েছে। এ ছাড়াও পদ্মা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ২২টি এফডিআরের মাধ্যমে ১৭৯ কোটি টাকা আমানত রেখেছে বন্দর। ব্যাংকগুলোতে জমানো টাকা ফেরত পেতে বার বার তাগাদা দেওয়া হলেও মিলছে না সাড়া।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকে জরুরি পত্র দিয়ে পদ্মা ব্যাংকে (সাবেক ফার্মার্স ব্যাংক) বিনিয়োগ করা ১৭৯ কোটি টাকা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে। এ ব্যাংকে রাখা আমানতের বিপরীতে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কোনও প্রকার মুনাফা দিচ্ছে না পদ্মা ব্যাংক। এ ব্যাংক গচ্ছিত টাকার বিপরীতে মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পর এফডিআর ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। ছয়টি এফডিআরের বিপরীতে ৯৫ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে চিঠি দিলে তারা কোনও সাড়া দেয়নি। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব টাকা আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘বেশ কয়েকটি ব্যাংকে আমাদের স্থায়ী আমানত হিসেবে টাকা গচ্ছিত আছে। তবে কিছু ব্যাংক এফডিআরের বিপরীতে কোনও মুনাফা দিচ্ছে না। এমনকি এফডিআরের টাকাও ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এসব ব্যাংকে চিঠি দিয়েছি। ব্যাংকগুলো আমাদের চিঠির কোনও সাড়া দিচ্ছে না। এফডিআরের টাকা যেকোনও সময় উত্তোলন আমাদের অধিকার। এসব ব্যাংক সেই অধিকার খর্ব করেছে। পদ্মা ব্যাংকে আটকে পড়া ১৭৯ কোটি টাকা উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, দরপত্র দাখিলের সময় টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে জামানত হিসেবে পে-অর্ডার নেওয়া হয়। আবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া হয়। এ ছাড়াও এফডিআরের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের তহবিল বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হয়। মূলত জাহাজ ভেড়ানো, পণ্য ওঠানামা, ইয়ার্ড ভাড়া ও নিজস্ব জমির ভাড়াসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ তহবিল থেকেই বন্দরের চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি, জনবল ও পরিচালন ব্যয়ও নির্বাহ করা হয়।
এদিকে, ৯টি ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেবার বিপরীতে মাসুল বা চার্জ হিসেবে এসব ব্যাংকের চেক, পে-অর্ডার ও ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ করবে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থ ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত এক আদেশের মাধ্যমে বন্দরের অভ্যন্তরীণ বিভাগগুলোতে এ বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরীণ বিভাগগুলোর কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনার বিভাগের সব কার্যক্রমে নিম্নোক্ত ব্যাংকসমূহ থেকে ইস্যু করা সব প্রকার পে-অর্ডার, চেক, ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।
Leave a Reply