26 Dec 2024, 09:08 am

চার দশকের রশি টানাটানি থেকে মুক্তি চায় ঝিনাইদহের মহেশপুরের সাত গ্রামের জনগণ ; থাকতে চায় আপন ঠিকানা মহেশপুরে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ চার দশকের রশি টানাটানি থেকে মুক্তি চায় ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার সাত গ্রামের জনগণ। থাকতে চায় আপন ঠিকানা মহেশপুরে, যেতে চায় না চৌগাছা উপজেলায়।

গত ১৫ এপ্রিল সকাল ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত মান্দারবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চত্ত্বরে ও ১৬ এপ্রিল ডাক্তার সাইফুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজে সাত গ্রামের কয়েক হাজার জনগনের মুখে গণশুনানী গ্রহণ করেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) আব্দুর রশিদ। শুনানীতে উপস্থিত সাত গ্রামের গণমানুষের মুখের ভাষা ছিল, আমরা চৌগাছায় যেতে চাইনা, আপন ঠিকানা মহেশপুরে থাকতে চাই।

এ সাতটি গ্রাম নিয়ে দুই উপজেলার মধ্যে রশি টানা চলছে গত চার দশক ধরে। এতে নানা ভাবে ভোগন্তির পোহাতে হয় মহেশপুরের বিশ্বনাথপুর, শ্যামনগর, কমলাপুর, আলিশা, যদুনাথপুর, রাড়িপাড়া ও পাঁচবাড়িয়া গ্রামবাসীর। এই সাতটি মৌজায় বসবাস করেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। সর্বশেষ এই সাতটি মৌজার মুিিষ্টমেয় কয়েকজন মানুষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিকার বৈঠকে যশোর জেলার অন্তর্ভুক্ত করার সিন্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিয়ে সাত গ্রামের মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষ উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এই আপিলের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রানালয় গণশুনারি জন্য বিভাগীয় কমিশনার খুলনাকে দায়িত্ব দেন।

১৬ এপ্রিল গণশুনানীর সময় উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ -৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান চঞ্চল, মহেশপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হাীদদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক আজা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা খাতুন হেনা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ, সাধারণ সম্পাদক মীর সুলতানুজ্জামান লিটন, মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার শামীম উদ্দিন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান, মান্দারবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুন আর রশিদ, নাটিমা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মাষ্টার প্রমুখ।

এসময় ৭ মৌজার শত শত স্থায়ী বাসিন্দা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিগণ মহেশপুর উপজেলায় থাকার জন্য মতামত প্রকাশ করেন।

শুণানির সময় বিভাগীয় কমিশনার সাত গ্রামের ৬৭৯ জন নাগরিকের বক্তব্য লিখিতভাবে সংরক্ষণ করেন। শুনানি শেষে বিষয়টি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার বলে সকলকে প্রতিশ্রুতি দেন ।

উল্লেখ্য, গত ২০০৮ সালের ১৭ই জানুয়ারী এ সংক্রান্ত একটি রিট বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি ফারাহা মাহবুব এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেন।

জানা যায়, দুই উপজেলার মধ্যবর্তি এই সাতটি গ্রাম নিয়ে প্রায় চার দশক ধরে রশি টানাটানি চলে আসছিল। সাতটি গ্রাম মহেশপুর উপজেলার পক্ষে রাখতে দায়ের করা একটি রিট হাইকোট খারিজ করে দেওয়ায় গ্রামগুলো দ্বৈত শাসনের অবসান হয়।

রিটের নথি সূত্রে জানা যায়, সাত গ্রামের গণমানুষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিকার-৫৫ তম বৈঠকের সিন্ধান্ত মোতাবেক ১৯৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলা থেকে অবমুক্ত করে গ্রামগুলো যশোরের চৌগাছা উপজেলায় যুক্ত করা হয়। ১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ১৯৯১ সালে সাধারণ নির্বাচনে চৌগাছার অধিবাসী হয়ে গ্রামগুলোর মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। পরে ১৯৯৪ সালে সাত গ্রামের একাংশের জনগনের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিকার-৮১ তম বৈঠকে পূর্বের সিন্ধান্ত বাতিল করা হয়। এবং ৪ অক্টোবর ১৯৯৪ তারিখে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৭টি মৌজাকে পুনরায় মহেশপুর উপজেলায় যোগ হয়। বিষয়টি আলোচনায় আসলে তৎকালীন বিদ্যুৎ জালানী ও খনিজ স¤পদ প্রতিমন্ত্রি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কর্তৃক মন্ত্রী পরিষদের সচিবের বরাবর প্রেরিত একটি উপ-আনুষ্ঠানিক পত্রে পুনরায় সাত গ্রামকে চৌগাছা উপজেলায় সংযুক্তির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে পাঠান।

১৯৯৪ সালের সীমানা কমিশনের রিপোর্টে সাতটি মৌজাকে পূনরায় যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় অর্ন্তভুক্তি করার সুপারিশ করেন। সুপারিশপত্রে বলা হয় নিকার ৮১তম বৈঠকে যথাযথ বিবেচনা না করেই ৫৫ তম বৈঠকের (৭টি মৌজা চৌগাছার সাথে সংযুক্তকরন) সিন্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা সদরের দুরত্ব, অর্থ ও সামাজিক বিষয় বিবেচনা করে ৭টি মৌজা যশোরের চৌগাছা উপজেলার সাথে যুক্ত করা যায়।

সুপারিশের ভিত্তিতে মহেশপুর ও চৌগাছা উপজেলার থানা পুর্নগঠনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও ভুমি মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিকারের এই সিন্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম সর্দার হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এম এ আজিজ ও বিচারপতি হুদার একটি বেঞ্চ রুল জারি করেন। যার কারণে সাতটি গ্রাম চৌগাছার অর্ন্তভুক্তির বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়। ফলে ৭টি গ্রামের প্রশাসনিক কার্যক্রম দুই উপজেলার মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। প্রশাসনিক দায়িত্ব মহেশপুর উপজেলায় এবং সেচ-বিদ্যুৎ ও শিক্ষাবিষয়ে চৌগাছা উপজেলার নিয়ন্ত্রনে থাকে।

গণশুনানীর সময় পাঁচবাড়িয়া গ্রামের মিজানুর রহমান, শ্যামনর গ্রামের মকবুল হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও কমলাপুর গ্রামের খোকন মিয়া বলেন, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল কাজে সাত গ্রামের মানুষের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরেই সুবিধা বেশি। তাই আমাদের দাবী মুষ্টিমে কিছু লোক আমাদের নিয়ে যে সড়যন্ত্র করছে আমারা এ সড়যন্ত্র থেকে মুক্তি চাই এবং আমরা চৌগাছায় যেতে চাইনা আপন ঠিকানা মহেশপুরেই থাকতে চাই।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 10064
  • Total Visits: 1433023
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ২৩শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৯:০৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018