অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জাতিসংঘের শিশু সংস্থা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, গত বছর চরম আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশসহ ৮৫টি দেশে প্রায় ২৪ কোটি ২০ লাখ শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। যা প্রায় প্রতি সাতজন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন। সংস্থাটি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় অবহেলাকরাকে দায়ী করে এর নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘ থেকে এএফপি আজ এ খবর জানায়।
এই তথ্যের যথেষ্ট গরমিল রয়েছে উল্লেখ করে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ কোটি ২০ লাখ সংখ্যাটি
রক্ষণশীল ।
তথ্যে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিন্ডারগার্টেন থেকে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর ক্লাস স্থগিত, ছুটি পরিবর্তন, পুনরায় খোলা বিলম্বিত, সময়সূচি পরিবর্তন আবার স্কুলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে তাপপ্রবাহের প্রভাবকে সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কমপক্ষে ১৭ কোটি ১০ লাখ শিশু তাপপ্রবাহে আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে শুধুমাত্র এপ্রিল মাসে, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ১১ কোটি ৮০ লাখ শিশু আক্রান্ত হয়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল সতর্ক করে বলেন, শিশুরা চরম আবহাওয়ার জন্য আরো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, তাদের দ্রুত গরম লাগে, তারা তুলনামূলক বেশি ঘামে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়।
‘শিশুরা প্রচণ্ড গরমের কারণে অস্বস্তি বোধ করলে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ দিতে পারে না। বন্যায় রাস্তা প্লাবিত হলে বা ভেসে গেলে তারা স্কুলে যেতে পারে না।’
কয়েক দশক ধরে জীবাশ্ম জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত পোড়ানোসহ মানবিক কার্যকলাপ গ্রহটিকে উষ্ণ করেছে এবং আবহাওয়ার ধরনকে পরিবর্তন করেছে। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছাছে। গত কয়েক বছরে প্রথমবারের মতো অস্থায়ীভাবে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের সীমা অতিক্রম করেছে।
এর ফলে বর্ষাকাল আরও ভেজা এবং শুষ্ককাল আরো শুষ্ক হয়ে পড়েছে। তাপ ও ঝড় তীব্রতর হয়েছে এবং জনগণকে দুর্যোগের ঝুঁকিতে ফেলেছে।
হাজার হাজার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ফিলিপাইনে শিশুরা হাইপারথার্মিয়ার ঝুঁকিতে থাকায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে অনেক দেশে বছরের স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এই সময়ও শিশুরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।
১৮টি দেশে ক্লাস এই সময়টিতে স্থগিত রাখা হয়। বিশেষ করে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিধ্বংসী টাইফুন ইয়াগির কারণে এসব স্কুল স্থগিত রাখা হয়েছিল।
জলবায়ু-সম্পর্কিত স্কুল ব্যাঘাতের ফলে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে ১২ কোটি ৮০ লক্ষ স্কুল শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রধানত তাপপ্রবাহের কারণে ৫ কোটি ৪০ লাখ শিশু ভারতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শীর্ষে রয়েছে। বাংলাদেশেও সাড়ে ৩ কোটি শিশু তাপপ্রবাহের শিকার হয়েছে।
বিশ্বের প্রায় এক বিলিয়ন শিশু জলবায়ু এবং পরিবেশগত ধাক্কার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে বাস করায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী বছরগুলোয় এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
ইউনিসেফের পূর্বাভাস অনুসারে, গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন যদি তার বর্তমান গতিপথে চলতে থাকে, তাহলে ২০০০ সালের তুলনায় ২০৫০ সালে আট গুণ বেশি শিশু তাপপ্রবাহের শিকার হবে।
অনুমানে দেখা গেছে যে, তিনগুণেরও বেশি শিশু চরম বন্যার সংস্পর্শে আসবে এবং ১.৭ গুণ বেশি শিশু দাবানলের সংস্পর্শে আসবে।
ইউনিসেফ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই ক্ষতির ফলে কিছু শিশুর বিশেষ করে মেয়েদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
জলবায়ু ঝুঁকির কারণে শিক্ষা সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়, তবুও নীতিগত আলোচনায় এটি প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। ‘জলবায়ু-সম্পর্কিত সমস্ত পরিকল্পনা এবং কর্মকাণ্ডের অগ্রভাগে শিশুদের ভবিষ্যৎ থাকা উচিত বলে সংস্থাটি মনে করে। জলবায়ু ঝুঁকির প্রতিরোধী শ্রেণিকক্ষে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ ।
Leave a Reply