অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :বিশ্বের শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-সেভেনের হিরোশিমা সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতা-বিবৃতির কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে গুরুত্ব না দিয়ে বেইজিংয়ের ভাবমর্যাদা ও অবস্থানকে খাটো করার চেষ্টা হয়েছে জি-সেভেনের শীর্ষ বৈঠকে। সেখানে চীন সংক্রান্ত নানা ইস্যুতে মনগড়া তথ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলেও চীনের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাপানের হিরোশিমায় জি-সেভেনের তিনদিনের শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়েছে গতকাল রোববার। সেখানে সদস্য দেশ জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এক ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও হাজির হন ঐ সম্মেলনে।
এবারের শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করবে বলে আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। বাস্তবেও হয়েছে তাই। জি-সেভেন চীনের উদ্দেশে বলেছে, বিশ্বের নিরাপত্তার জন্যই তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা জরুরি। অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও রাজনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে পেরে উঠছে না যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে চীনের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ অবস্থান ও শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লী কান মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জি-সেভেনের সদস্য দেশগুলোকে নিয়ে চীনের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও বাস্তবতা হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এই ইস্যুতে খুব একটা ঐক্য নেই। তারা মুখে যাই বলুক চীনের বাজারের প্রয়োজনে তারা খুব একটা কঠোর অবস্থানে যাবে না।
জি-সেভেনের বিবৃতিতে বিশ্বের নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলার কথা বলা হলেও এসব দেশের কাজে এর প্রমাণ নেই। আমেরিকা বরাবরই যুদ্ধ ও অশান্তি জিইয়ে রাখার চেষ্টায় রয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে দেশটির নীতি কোনো ভাবেই শান্তির পক্ষে নয় বরং যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালার শামিল।
এছাড়া, যে হিরোশিমা শহরে জি-সেভেনের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো সেই নামের সঙ্গে মিশে আছে বিশ্বের বুকে বড় নির্মমতার ইতিহাস। মার্কিন পরমাণু বোমার ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে এই শহর। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমার সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তথাকথিত শান্তির ধ্বজাধারী আমেরিকা।
যাইহোক, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমেরিকা ও তার মিত্রদের হস্তক্ষেপমূলক তৎপরতার বিষয়ে বেইজিং এ পর্যন্ত বহুবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা আমেরিকার এ ধরণের তৎপরতাকে বিশ্ব শান্তির জন্য সহায়ক নয় বরং হুমকিপূর্ণ হিসেবে গণ্য করছেন। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হেনরি কিসিঞ্জারও এটা স্বীকার করেছেন যে, তাইওয়ান ইস্যু চীনের কাছে রেড লাইন। এ বিষয়ে চীনের সতর্কতা ও হুঁশিয়ারিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে, অন্যথায় বিশ্ব অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে।
Leave a Reply