স্টাফ রিপোর্টার : অব্যবস্থাপনা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেহাল বশা ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। জনবল সঙ্কট ও রোগ নিয়ন্ত্রণের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ায় ইনডোর থেকে আউটডোর পর্যন্ত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। কাক্ষিত সেবা না পেয়ে সচ্ছল রোগীরা ক্লিনিকমুখী হলেও দরিদ্র রোগীরা পড়ছেন মহা বিপাকে।
সীমান্তবর্তী উপজেলার সাড়ে ৪ লাখ মানুষের প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখানে চিকিৎসা সেবার চেয়ে সংকটের তালিকাই এখন বড়। আগে প্রতি মাসে যেখানে গড়ে ১৪ থেকে ১৮টি সিজার হতো, সেখানে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একটিও অপারেশন হচ্ছে না। অযত্নে পড়ে আছে লেবার ওয়ার্ডের অপারেশন থিয়েটার।
শুধু লেবার ওয়ার্ড নয়, একই অবস্থা অন্যান্য বিভাগেও। বহির্বিভাগে মেডিকেল কর্মকর্তার নেমপ্লেট থাকলেও রোগী দেখছেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তারা। জরুরি বিভাগ বেহাল, ল্যাবে নেই এক্স-রে বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেবা। জেনারেটর ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকতে হয় রোগী ও তার স্বজনদেরকে। এমন অসংখ্য সংকটে ভুগছে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
পদ থাকলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে কখনোই আসেননি কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বর্তমানে পাঁচজন মেডিকেল কর্মকর্তা ও দশজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা আন্তঃবিভাগ ও জরুরি বিভাগে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন অন্তত সাড়ে তিনশ থেকে ৫শ রোগী। অথচ ২১টি অনুমোদিত ডাক্তারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ১৭টি পদই শূন্য পড়ে আছে।
এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য খাবার বরাদ্দ থাকলেও সব রোগীকে খাবার দেওয়া হয় না- এমন অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাবার তৈরি করা হয় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে। একবেলার রান্না দুবেলা গরম করে সরবরাহ করা হয়। যা অধিকাংশ সময় নষ্ট হয়ে যায়। খাবারের মান নিয়েও রোগী ও স্বজনদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার নেই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ নেই, অপারেশন তো বহুদিন বন্ধ। এমন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে লাভ কী!
রোগীর স্বজন শিউলি আক্তারের অভিযোগ, “আমার বোনকে প্রসবের জন্য আনা হয়েছিল, কিন্তু এখানে সিজার হয় না। বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে হয়েছে। খরচও অনেক বেড়ে গেছে।
হামিদুর রহমান নামের রোগীর আরেক স্বজন বলেন, জেনারেটরের ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকতে হয়। অনেকে বিদ্যুৎ আসা পর্যন্ত মোমবাতি জালিয়ে রাখে। তিনি আরও বলেন বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পরিবেশ এতটাই নোংরা যে কোনো সাধারণ মানুষ ভেতরে গেলে সেও অসুস্থ হয়ে যাবে। কী যে অবস্থা, টয়লেটে যাওয়ার পরিবেশ নেই।
জনবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত বলেন, “জনবল সংকট থাকলেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, প্রয়োজনে বড় হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে।
প্রতিদিন ভিড় জমে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে । তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা না থাকলে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।