25 Nov 2024, 12:20 am

ডিএনএ রিপোর্ট প্রমাণে সাক্ষ্য দিতে হবে প্রস্তুতকারীকে : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  বিয়ের প্রলোভন দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ। ফলে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। করা হয় ডিএনএ টেস্ট। টেস্টের কথিত রিপোর্টে তার প্রমাণ মেলেনি। যিনি ডিএনএ টেস্ট করেছেন তিনি ওই রিপোর্টের সপক্ষে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেননি। যার কারণে ওই রিপোর্ট উচ্চ আদালতের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি।

এ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছে, বিশেষজ্ঞ রিপোর্ট তখনই প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হবে, যখন ওই বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি (রিপোর্ট প্রস্তুতকারী) আদালতে হাজির হয়ে রিপোর্টের বিষয়বস্তু এবং তাতে তার প্রদত্ত স্বাক্ষর প্রমাণ করবেন। বিচার চলাকালে জেরার জন্য হাজির থাকবেন। তাই এই মামলায় যিনি ডিএনএ রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন তাকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির করা হয় নাই। ফলে রিপোর্টটি অপ্রমাণিত থেকে যায়। ফলে ওই রিপোর্ট আইনগত প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ ধর্ষণ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে ডিএনএ রিপোর্ট প্রমাণে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

রায়ে হাইকোর্ট বলে, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির রিপোর্ট তার অনুপস্থিতিতে সর্বাবস্থায় গ্রহণ করতে হবে আইনের এমন ব্যাখ্যা একটি বিকৃত ব্যাখ্যা। যা সাক্ষ্য আইনের উদ্দেশ্য ও বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেবলমাত্র উপযুক্ত ক্ষেত্রে আদালতের যথার্থ বিবেচনায় এমন রিপোর্ট একটি করোবরেট এভিডেন্স (সমর্থন করে এমন সাক্ষ্য) হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের ঘটনায় ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন এক ভিকটিম। ট্রাইব্যুনাল এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট থানাকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। তদন্ত শেষে আসামি কাছুম আলীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। চার সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো সাক্ষ্য প্রদান করেনি আসামি। দুই বছর পর যুক্তিতর্ক ও শুনানি শেষে আসামিকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

এই রায়ের বিরুদ্ধে যথাসময়ে আপিল করতে ব্যর্থ হন। পরে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ ক ধারায় আবেদন করে ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল চান বাদী। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্ট খালাসের রায় বাতিল করে আসামিকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়। একই সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৩ ধারা অনুযায়ী ভিকটিমের ভরণপোষণ দিতে বাদীকে এবং সন্তানের ভরণপোষণ দিতে রাষ্ট্রকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছে আদালত।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, ডিএনএ রিপোর্ট প্রমাণের দায়ভার ছিল আসামির ওপর। কিন্তু তিনি সেটা পরিপালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কথিত ডিএনএ রিপোর্ট যিনি প্রস্তুত করেছেন তাকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয় নাই। ফলে রিপোর্টটি অপ্রমাণিত থেকে যায়। যা প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এমন ক্ষেত্রে ভিকটিম ডিএনএ রিপোর্টের ওপর নারাজি দিয়েছেন কি দেননি তা একটা অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। নারাজি দরখাস্ত দেওয়া বা না দেওয়ার কারণে তা প্রমাণের দায়ভার হতে আসামি মুক্ত নন।

রায়ে আদালত বলেছে, ধর্ষণ মামলায় ভিকটিম ব্যতীত অপরাপর প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রত্যাশা করা যায় না। ফলে এ ধরনের মামলায় ভিকটিমের সাক্ষ্যের গুণমান এবং নির্ভরযোগ্যতার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষ্য আইনানুযায়ী বাদীর জবানবন্দি বিশ্বাসযোগ্য হলে তার ভিত্তিতেই দোষী সাব্যস্ত করে আসামিকে শাস্তি দেওয়া যায়। ট্রাইব্যুনালের নথিতে রক্ষিত সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারক উপস্থিত সাক্ষ্য-প্রমাণ মূল্যায়নে মারাত্মক ভুল করে সঠিক রায় দেননি। যা বাতিল করা হলো।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14336
  • Total Visits: 1297628
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১২:২০

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018