অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : অর্থনৈতিক জোটের সবচেয়ে বড় আসর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা সোমবার (৯ অক্টোবর) মরক্কোয় শুরু হচ্ছে। এই বৈঠক চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯০টি দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা সেখানে যোগ দেবেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ উপস্থাপন করা হবে এবং এতে বিনিয়োগ চাওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ থেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারসহ একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ওই অংশ নিচ্ছে। এ বছর আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বিশ্বব্যাংকের আগ্রহের ফলে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ উপস্থাপন করার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্ল্যানের মাধ্যমে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ আহ্বান করা হবে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে। মোটা অঙ্কের এ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ ও সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে প্রণয়ন করা হয়েছে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০। শতবর্ষের এ মহাপরিকল্পনার প্রথম ধাপ ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এ সময়ে ৮০টি প্রকল্পের আওতায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে ৮০টি প্রকল্প ব্যয়ের অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে প্রথম ধাপে ২০৩১ সালের জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের সমান বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এর আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ, বেসরকারি বিনিয়োগ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ স্থির করা হয়েছে। ২০৩১ সালেও উল্লিখিত হারে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ডেল্টা প্ল্যানের প্রথম ধাপের ৮০টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি ভৌত অবকাঠামো এবং ১৫টি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, দক্ষতা ও গবেষণা সংক্রান্ত। এরমধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি এবং নদী ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করা হবে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এছাড়া নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহে ৬৭ হাজার ১৫২ কোটি, নদীভাঙন রোধে ৬৮ হাজার ৮৭৯ কোটি, চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি এবং খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য প্রকল্পে বরাদ্দ হচ্ছে ১৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। অন্যান্য প্রকল্পে বিনিয়োগ করার লক্ষ্য রয়েছে অবশিষ্ট ৮৮ হাজার ৪১০ কোটি টাকা।
ডেল্টা ‘নলেজ ব্যাংক’ ও ‘ডিজিটাল তথ্যভান্ডার’ স্থাপনের কাজ চলছে। আর সার্বিক কর্মকাণ্ডের আর্থিক বিষয়টি নিশ্চিত করতে ডেল্টা তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা হয়েছে শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান তথা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’। এটাকে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। বন্যা, নদীভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার মতো দীর্ঘমেয়াদি ৬টি কৌশল রয়েছে প্ল্যান-২১০০-এ।
ডেলটা প্লানের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ, বেসরকারি বিনিয়োগ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ স্থির করা হয়েছে। ২০৩১ সালেও উল্লিখিত হারে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে প্রচুর বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংকের বৈঠকে এর উপস্থাপনা ও সক্ষমতা তুলে ধরলে বিশ্বব্যাংক আকৃষ্ট হবে। আর বিশ্বব্যাংক এগিয়ে এলে অন্যান্য সহযোগী সংস্থা আরও বেশি আকৃষ্ট হবে। বিশ্বব্যাংকের আগ্রহ আছে বলেই সংস্থাটি তাদের বৈঠকে এটি উপস্থাপন করতে বলেছে।
Leave a Reply