23 Feb 2025, 10:38 pm

ঢালাওভাবে’ বরখাস্ত অব্যাহত থাকলে চাকরিবিধি মেনে বড় কর্মসূচি দেবে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক সামান্য অপরাধে ঢালাওভাবে সাময়িক বরখাস্ত শুরু করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এটি অব্যাহত থাকলে চাকরিবিধি মেনে বড় কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের উদ্যোগে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে করণীয়: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা জানানো হয়। পরে পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া সুপারিশকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ক্যাডার ও বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। এ দ্বন্দ্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি অসদাচরণের অভিযোগে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম ও ঢাকায় সংযুক্ত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও মন্তব্য ঘিরে তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্যের জের ধরে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে গত ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে সরকারি কলেজের প্রভাষক চারজন। তারা হলেন আনোয়ার হোসেন ফকির, তানভীর খান, রফিকুল ইসলাম ও অসীম চন্দ্র সরকার। অন্যজন সহকারী অধ্যাপক শাহাদত উল্লাহ কায়সার।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আলোচনা সভায় নেওয়া কর্মসূচিতে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রের দায়িত্বভার হাতে থাকায় সেটির অপব্যবহার করে সামান্য অপরাধে ঢালাওভাবে সাময়িক বরখাস্ত শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে দেখা করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হবে। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে চাকরিবিধি অনুসরণ করে বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকায় এ মুহূর্তে বড় কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী এক মাস ভবিষ্যৎ সিভিল সার্ভিসের রূপরেখা বিষয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে।
এছাড়া জনবান্ধব রাষ্ট্রগঠনে সিভিল সার্ভিস সংস্কারের জন্য সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে জনগণের মতামত গ্রহণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত সুপারিশে ২৫ ক্যাডারের মতামতের প্রতিফলন দেখতে চায় নেতারা। সেই সময় পর্যন্ত সব সদস্যকে ধৈর্য ধারণ করতে আহ্বান করা হয়।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সিভিল সার্ভিস ক্যাডার বহির্ভূতকরণের চিন্তা হতে বিরত থাকতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে আহ্বান জানায় সমন্বয় পরিষদ।

একই সঙ্গে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত সুপারিশ প্রস্তাব দেওয়ার আগে কোনো ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করার জন্য ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে যেন কোনো গোষ্ঠী কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পরিষদের সব সদস্য সতর্ক থাকবেন। কিছু গোষ্ঠী পরিষদের সদস্যদের উসকে দিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করতে চাচ্ছে, এ বিষয়ে সহনশীল থেকে এবং কোনো ধরনের প্ররোচনায় না গিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে বলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক থাকা এবং কাউকে আঘাত বা হেয় করে কোনো মন্তব্য না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

আলোচনা সভা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক কৃষিবিদ মো. আরিফ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ফারহানা আক্তার ও ডা. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। সভায় পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫ টি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সেক্রেটারি, সিনিয়র নেতারাসহ সারাদেশ থেকে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন, বিরাজমান প্রশাসনিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে ২৫ ক্যাডারের অনেকগুলো শীর্ষ পদে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন নেই। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণে যেন রিপোর্টে সুপারিশ করে, ২৫ ক্যাডার সেই প্রত্যাশা করে।

তারা বলেন, দক্ষ, পেশাদার ও গতিশীল সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, পদমর্যাদা ক্রম নির্ধারণসহ সকল ক্যাডারের মধ্যে সমতার প্রয়োজন রয়েছে। একই দেশে একটি ক্যাডারের কর্মকর্তা পদ না থাকা সত্ত্বেও প্রমোশন পাবে, আর অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদ থাকা সত্ত্বেও প্রমোশন পাবে না, এটা কোন আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থা হতে পারে না। সেজন্য ২৫ ক্যাডারের পক্ষ হতে এই অনিয়ম দূর করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, কমিশনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে অনেকে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য প্রচার শুরু করেছে। সিনিয়র সার্ভিস পুলের (উপসচিব পুল) পদগুলো কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডারের নয়। সিনিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি) অর্ডার, ১৯৭৯’ অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে এ সব পদে নিয়োগের কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে কোটা পদ্ধতি চালু রেখেছে প্রশাসন ক্যাডার। অতঃপর সরকারের পাশে থাকার সুবাদে, প্রথমে এসএসপি আইন বাতিল এবং ২০১৮ এর নির্বাচনের পর ‘সার্ভিস অ্যাক্ট, ১৯৭৫’ (যার ওপর ভিত্তি করে এসএসপি চালু হয়) রহিত করে ও ২০২৪ এর নির্বাচনের পর উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদ নিজেদের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করেছে প্রশাসন ক্যাডার, যা মেধাভিত্তিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রগঠনে মারাত্মক অন্তরায়।

বৈষম্যহীন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তার দ্বারা পরিচালনা এবং কোটামুক্ত মেধাভিত্তিক উপসচিব পুল অত্যন্ত জরুরি বলে জোর দাবি করেন বক্তারা।

সভায় বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত রেখে শুধু একটি ক্যাডারের নিয়মিত ও ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 13688
  • Total Visits: 1627601
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1708

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
  • ২৪শে শা'বান, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১০:৩৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
     12
2425262728  
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018