21 Dec 2024, 11:45 pm

তাকদীর (ভাগ্য) সম্পর্কে হাদীসে কুদসীসমূহ (বাংলা অর্থ)

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

তাকদীরে বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। তাকদীর শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো ভাগ্য নির্ধারণ। পরিভাষায় তাকদীরের অর্থ হলো এই যে, ভবিষ্যতে প্রত্যেক সৃষ্টির জীবনে কি ঘটবে অনাদিকাল থেকে মহান আল্ল­াহ তাআ’লা তা সুরক্ষিত ফলকে (লাওহে মাহফুজে) লিপিবদ্ধ করছেন। মানুষকে কাজ করার ইচ্ছা, আগ্রহ ও ক্ষমতা আল্ল­াহ দান করেছেন। কখন মানুষ কি কাজ করবে তাও মহান আল্ল­াহর জ্ঞানে রয়েছে। এটা আল্ল­াহর একটি বিধান। কাজ করার ইচ্ছাশক্তি আল্ল­াহ প্রদত্ত হলেও আল্ল­াহ মানুষকে ভাল-মন্দের জ্ঞান দান করেছেন ও যুগে যুগে নবী রাসুল পাঠিয়ে সতর্ক করেছেন।
এটা আশার বাণী যে, আল্ল­াহ তা’আলা মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রন করেছেন এবং রদবদল করার অবকাশও রেখেছেন। সুতরাং একনিষ্ঠভাবে আল্ল­াহ তা’আলার দাসত্ব করার মাধ্যমে কল্যাণকামী হওয়ার সূত্রই হলো রহস্যময় তাকদীর।

১. নিশ্চয় আল্ল­াহ তা’আলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে কলম। অতঃপর আল্ল­াহ তাকে বললেন, “লিখ”। সেটা বলল, “হে আমার রব, কি লিখব?” তিনি বললেন “প্রত্যেক বস্তুর আদৃষ্টলিপি, যে পর্যন্ত না-কিয়ামতের সময় এসেছে।  যে ব্যক্তি এর উপর আস্থা না রেখে মৃত্যুবরণ করে, সে আমার সাথে সম্পর্কবিহীন।” হযরত আবু দাউদ (র) আলোচ্য হাদীসটি উবাদাহ ইবনে সামিত (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

২. মহান আল্ল­াহ সৃষ্টিকে সৃষ্টি করলেন এবং প্রত্যেকের বিষয় মীমাংসা করে দিলেন, আর নবীদের নিকট থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার আদায় করলেন। তখন আল্লাহর আরশ পানির উপর ছিল। অত:পর যারা ডানদিকের উপযোগী তাদেরকে ডান হাতে এবং যারা বাম হাতের উপযোগী তাদেরকে তাঁর অন্য হাতে নিলেন, আর মহান ও মর্যাদাবান করুণাময়ের উভয় হাতই ডান হাত; তারপর তিনি বললেন, “হে ডানহাতে অবস্থিত ব্যক্তিগণ !” তখন তারা জবাব দিল ও বলল, “আমরা হাযির আছি, হে আমাদের রব এবং আপনার (প্রদত্ত) কল্যাণ কামনা করি।” তিনি বললেন, “আমি কি তোমাদের রব নহি ?” তারা বলল, “হ্যাঁ”। তিনি বললেন, “হে (অন্য হাতে অবস্থিত) ব্যক্তিগণ!” তারা জবাব দিল ও বলল, “আমরা হাযির আছি হে আমাদের রব, আপনার (প্রদত্ত) কল্যাণ হোক।” তিনি বললেন, “আমি কি তোমাদের রব নহি ?” তারা বলল, “হ্যাঁ”। অতঃপর তিনি তাদের একদলকে অন্যের সাথে একত্রে মিলিত করে দিলেন। অতঃপর তাদের মধ্য থেকে জনৈক প্রশ্নকারী বলল, “হে আমাদের রব! আমাদেরকে কেন মিলিয়ে দিলেন?” তখন তিনি বললেন, “”তাদের আমল ছাড়া আরো আমল আছে যা তারা করতেছে। (তাছাড়া)-শেষ বিচার দিবসে যেন তারা বলতে না পারে, আমরা এ বিষয়ে অজ্ঞ ছিলাম। অতপর, তিনি তাদেরকে পুনরায় আদমের পিঠে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর বেহেশতবাসীগণ বেহেশতের উপযোগী হলো এবং জাহান্নামের অধিবাসীগণ জাহান্নামের উপযোগী হলো। (তখন) প্রশ্ন করা হলো, “হে আল্ল­াহর রাসূল! তাহলে আমলের অর্থ কি?” তিনি বললেন, “প্রত্যেক সম্প্রদায় স্বীয় অবস্থা অনুসারে আমল করবে।” হযরত আবদ ইবনে হামিদ, হাকেম ও তিরমিযী আবূ উমামাহ (রা)-এর সূত্রে আলোচ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৩. নিশ্চয়ই, বরকতময় আল্ল­াহ তা’আলা সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজে যা কিছু লিখেছেন তা, “পরম করুণাময় দয়ালু আল্ল­াহ তা’আলার নামে শুরু করতেছি, নিশ্চয়ই আমি আল্ল­াহ, আমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আমার কোন অংশীদার নেই, যে ব্যক্তি আমার মীমাংসার নিকট আত্মসমর্পণ করেছে, আমার কঠিন পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করেছে এবং আমার শাসনে সন্তুষ্টি রয়েছে, আমি তাকে সত্যবাদীরূপে লিখেছি; এবং তাকে কিয়ামতের দিন সত্যবাদীদের সঙ্গে পুনর্জীবিত করব।” ইবনুল নাজ্জার আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী (রা)-এর সূত্রে রেওয়ায়েত করেছেন।

৪. মহান ও মর্যাদাবান আল্ল­াহ তা’আলা বলেন, “যে যুবক আমার নির্ধারিত তকদীরে বিশ্বাসী আর আমার নির্ধারিত লেখনীতে সন্তুষ্ট, আমার দেওয়া জীবনোপকরণে তৃপ্ত এবং আমার খাতিরে প্রবৃত্তির কামনা পরিত্যাগী, যে আমার নিকট কোনো কোনো ফেরেশতার মত।” দায়লামী আলোচ্য হাদীস খানা হযরত ইবনে উমর (রা)-এর সূত্রে উলে­খ করেছেন।
[আলোচ্য হাদীসে তাকদীরে বিশ্বাসের পাশাপাশি উত্তম আমলকে যেভাবে একত্রে গ্রথিত করা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, তাকদীরের নিয়ন্ত্রণে আমলের অনেক প্রভাব রয়েছে। উপরন্তু কাজ করা হবে অথচ তার ফল আসবে না, এটা অস্বাভাবিক।]

৫. হযরত জিরাঈল (আ) আমার নিকট আগমন করলেন, এবং বললেন “হে মুহাম্মদ! নিশ্চয়ই আপনার প্রভু আপনাকে সালাম জানিয়ে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমার বান্দাদের মধ্যে এরূপ বান্দাও রয়েছে, ঐশ্বর্য ছাড়া যার ঈমান ঠিক থাকে না। যদি তাকে গরীব করে নেই, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। আর নিশ্চয়ই আমার বান্দাদের মধ্যে এরূপ ব্যক্তি রয়েছে, দারিদ্র্য ছাড়া যার ঈমান ঠিক থাকে না। যদি আমি তাকে ধনী করে দেই, তবে নিশ্চয়ই সে কাফির হয়ে যাবে। আর আমার বান্দাদের মধ্যে নিশ্চয়ই এরূপ ব্যক্তি আছে, রোগাগ্রস্ত ছাড়া যার ঈমান ঠিক থাকে না। তাকে যদি সুস্থতা দান করি তবে নিশ্চয়ই সে কাফির হয়ে যাবে। আর নিশ্চয়ই আমার বান্দাদের মধ্যে এরূপ ব্যক্তি আছে, স্বাস্থ্য ছাড়া যার ঈমান ঠিক থাকে না। যদি তাকে রোগাগ্রস্ত করে দেই, তবে নিশ্চয় যে কাফির হবে।” খাতীব আলোচ্য হাদীসখানা হযরত উমর (রা)-এর সূত্রে উলে­খ করেছেন।
[দুনিয়ায় আল্ল­াহ তা’আলা বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্নরূপ কল্যাণের অধিকারী করে রাখার প্রকৃত কারণ কি, আলোচ্য হাদীস সে রহস্যের ওপর আলোকপাত করতেছে।]

৬. কোন একস্থানে একটি পাথর পাওয়া গিয়েছিল, তাতে লেখা ছিল, “আমি আল্লাহ, বাক্কার (মক্কার) মালিক, আমি ভাল ও খারাপ পয়দা করেছি। অতঃপর কল্যাণ তার জন্য, যার হাত দিয়ে ভাল সৃষ্টি করেছি। আর ধ্বংস সে ব্যক্তির জন্য, যার হাত দিয়ে খারাপ পয়দা করেছি।” দায়ালামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

৭. মহান আল্ল­াহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি আমার নির্ধারিত ভাগ্যে সন্তুষ্ট নয়, আর আমার অগ্নি পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করতে পারে না তার উচিত সে যেন আমাকে ব্যতীত অন্য প্রভু অনুসন্ধান করে নেয়।”
তিবরানী আলোচ্য হাদীসখানা সাঈদ ইবনে যিয়াদ (রাঃ)-এর সূত্রে উলে­খ করেছেন।
[আলোচ্য হাদীসে যারা ভাগ্যলিপিতে বিশ্বাস করে না, তাদের ব্যাপারে আল্ল­াহ তা’আলা কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।]
৭. হযরত জিবরাঈল (তাঃ) আমাকে বললেন, মহান ও মর্যাদাবান আল্ল­াহ বলেছেন, “হে মুহাম্মদ! যে ব্যক্তি আমার ওপর ঈমান এনেছে, অথচ আমার দ্বরা ভাল-মন্দ নিয়ন্ত্রণে (তাকদীরে) বিশ্বাস করে না, সে যেন আমাকে ছাড়া অন্য একজন প্রতিপালক খোঁজ করে নেয়।” সিরাজী আলোচ্য হাদীস খানা হযরত আলী (রাঃ) থেকে উলে­খ করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2664
  • Total Visits: 1405636
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ১৯শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১১:৪৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018