25 Nov 2024, 12:34 pm

তিন উন্নয়ন প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধন দু’দেশের বন্ধুত্বের অনন্য নিদর্শন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ তিনটি ভারত-সহায়ক উন্নয়ন প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনন্য সাধারণ বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রমাণ দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা (ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আমি) আজ যৌথভাবে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। এটি আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যকার অনন্য সাধারণ বন্ধুত্ব ও পারষ্পরিক সহযোগিতারই বহি:প্রকাশ।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশাবাদী সামনের দিনগুলোতে আমাদের যৌথ সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্বরুপ আরো এমন অনেক সাফল্যের উদাহারণ তৈরি হবে যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশির সঙ্গে যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখলে দেশের উন্নতি হয়, আমরা সেটাই প্রমাণ করেছি। আমি মনে করি বিশে^র জন্য এটা একটা দৃষ্টান্ত।
শেখ হাসিনা আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভারতের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধনকালে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং নয়াদিল্লি থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, আমরা আবার ভারত-বাংলাদেশ পারস্পরিক সহযোগিতা উদযাপন করতে একত্রিত হয়েছি। আমাদের সম্পর্ক আপাত দৃষ্টিতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।’
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।
তিনটি প্রকল্প হচ্ছে-আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ এবং মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের দ্বিতীয় ইউনিট।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইতিহাস,সংস্কৃতি এবং ভাষা দ্বারা আবদ্ধ। আমাদের দুই দেশই ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রসহ অগনিত বিষয়ে অভিন্ন মূল্যবোধ পোষণ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। বিগত বছরগুলোতে আমরা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি। যার মধ্যে রয়েছে-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সহজীকরণসহ আরো অনেক কিছু।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে আমাদের অর্জন দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সে সময় তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ছিল বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এই দুটি খাতে বাংলাদেশের অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য তিনি ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো এবং উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশের জনগণ ও তাঁর তরফ থেকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় করতে আপনার আন্তরিকতার জন্যও আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘মুজিব একটি জাতির রুপকার’ চলচ্চিত্রটি যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণের জন্য ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতঞ্জতা জানান। চলচ্চিত্রচি বর্তমানে ভারতসহ বাংলাদেশের সকল প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে। নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সকল কলা-কুশলীসহ সকলকেও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আত্মত্যাগের কথা জানতে পারবে।
সরকার প্রধান বলেন, আজকে যে তিনটি প্রকল্প আমরা উদ্বোধন করেছি তা উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। এই প্রকল্পগুলো আঞ্চলিক যোগাযোগের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আমি বিশ^াস করি।
তিনি বলেন, মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টটি আরো সাশ্রয়ী মূল্যে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ অবদান রাখবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে অন্যান্য ব্যয়বহুল উৎসের ওপর থেকে আমাদের নির্ভরতাকে কমিয়ে নিয়ে আসবে। পাশাপাশি সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়তা করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ আমাদের দু’দেশের জনগণের মধ্যে বিশেষকরে ভারতের উত্তর পূর্ব অংশের সঙ্গে সংযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ প্রকল্পটি মোংলা বন্দরকে বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সারাসরি যুক্ত করবে। এতে করে আমাদানীকৃত কন্টেনারইগুলো সহজেই রেলের সাহায্যে দেশের উত্তরপূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন সম্ভব হবে।
আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভারতের জনগণ যাতে ব্যবহার করতে পারে সেজন্য তাঁর সরকার উন্মুক্ত করে দিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিগত প্রায় ১৫ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বিশে^র দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি হিসেবে আবিভর্ূূত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশে^র ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দেশের চরম দারিদ্রের হার ২০০৬ সালে থাকা ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে তার সরকার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে ২ হাজার ৭শ’ ৬৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছে।
বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁদের স্বপ্ন ও লক্ষ্যের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেজন্যই তাঁর সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। গতবছর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখি সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেতু আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।
পাশাপাশি রাজধানীতে মেট্রোরেল পরিষেবা চালু, ঢাকায় প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং এই অক্টোবর মাসে পদ্মাসেতু রেল পরিষেবারও উদ্বোধন করা হয়েছে। মাত্র ক’দিন আগে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেছি। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের আরো সুযোগ সৃষ্টি হবে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দু’দেশের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক বাস্তব ফলাফল অর্জন করেছি। যারমধ্যে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য রাজ্যসমূহের সাথে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সংযোগ সহজিকরণ প্রভৃতি।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরজীবী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে আসন্ন দীপাবলী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতের জনগণকে তাঁর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14674
  • Total Visits: 1304909
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ১২:৩৪

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018