এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : সদ্য জাতীয়করণকৃত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারী মাহতাব উদ্দীন কলেজের ৭৮জন শিক্ষক কর্মচারীর চাকরী স্থায়ী করা হয়েছে। সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে এসব শিক্ষক কর্মচারিদের পদায়ন করে সার্কুলার (জিও) জারি করা হয়। এই সার্কুলারের ফলে ওই কলেজের আরো ২৫ শিক্ষক কর্মচারির নিয়োগ বাতিল হলো। এরমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বোন ফাতেমা খাতুন, এমপির ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে পরিচিত সুব্রত কুমার নন্দি ও তার স্ত্রী মিতা বিশ্বাস রয়েছেন। পদায়ন বাতিল হওয়া শিক্ষকদের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্যাটার্ন বহির্ভুত নিয়োগ, যথযথ ভাবে কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়নি, অনার্স শাখায় প্রাপ্যতা নেই, অনার্স বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়নি, নিয়োগের সময় শিক্ষক নিবন্ধন ছিল না ও সার্কুলার বিহীন নিয়োগসহ একাধিক মতামত প্রদান করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা-৬ শাখার উপ-সচিব শারমিন আক্তার জাহান সাক্ষরিতে এক চিঠিতে (স্মারক নং ৮৯০) এসব তথ্য জানা গেছে। সরকারী মাহতাব উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার বিকালে জানান, কলেজে মোট ১০৩ জন জনবল ছিল। এরমধ্যে ৭৮ জনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে চুড়ান্ত ভাবে পদায়ন করে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও মাউশিকে চিঠি দিয়েছে। বাকী ২৫ জনের মধ্যে ৮জনের নিয়োগ স্থায়ী ভাবে বাতিল করেছে। অধ্যক্ষ বলেন, পদায়ন থেকে বাতিল হওয়া শিক্ষকরা নিয়োগের আগে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরী করে বেতন ভাতা গ্রহন করেছেন। তাদের নিয়োগ প্রদানের সময় পত্রিকায় কোন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। যে বিজ্ঞপ্তি দেখানো হয়েছে তা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী করা। তিনি বলেন, ১৭ জন শিক্ষক কর্মচারির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মতামত সন্তোষজনক হলে ১৭ জন শিক্ষক কর্মচারি আবোর নতুন ভাবে পদায়নের সুযোগ পেতে পারেন। জানা গেছে, সরকারী ঘোষনার পরে মাহতাব উদ্দীন কলেজে রাতারাতি বহু শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে কোটি কোটি টাকার বানিজ্য’র অভিযোগ ওঠে। ব্যাকডেটে এসব শিক্ষক কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা সরকারীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরী করে বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মিতা বিশ্বাস সরকারী প্রাইমারি স্কুলে চাকরী করতেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি সরকারী প্রাইমারিতে চাকরী করে বেতন ভাতা তুলেছেন। তাকেই আবার ২০১৫ সালে ব্যাকডেটে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেখানো হয়েছে। মিতা বিশ্বাসের স্বামী সুব্রত কুমার নন্দি তিনিও শহীদ নুর আলী কলেজে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ছিলেন। তাকে জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১৫ সালে রাতারাতি নিয়োগ দেওয়া হয়। ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা খাতুন ২০১৯ সাল পর্যন্ত কলেজে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত শহীদ নুর আলী ও নলডাঙ্গা এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে বেতন ভাতা তুলেছেন। এ সব বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, মাউশি ও দূর্ণীতি দমন কমিশন একাধিক তদন্ত করে দূর্ণীতি ও অনিয়মের সত্যতা পান।
Leave a Reply