অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দারিদ্র বিমোচনের পাশাপাশি দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র-মুক্ত করার লক্ষ্যে সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় মোট ২৩ টি শ্রেণীতে ১ কোটি ৯ লক্ষ ৬৮ হাজার ৮৭৮ জন প্রান্তিক গ্রামীণ ও অভাবগ্রস্ত মানুষকে মাসিক ভাতা প্রদান করছে।
সমাজ কল্যাণ সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আলাপকালে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দুঃস্থ, বয়স্ক, অসহায়, প্রতিবন্ধী, বিধবা, নির্যাতিতা নারী ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য ভাতা চালু করেছেন।”
তিনি বলেন সরকার সকল দুঃস্থ ব্যক্তি সহ -হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়, চা-শ্রমিক ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন “আমরা সারা দেশের ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, থ্যালাসেমিয়া সহ পক্ষাঘাতগ্রস্থ ব্যক্তি ও স্ট্রোকের রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। সরকার দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”
এছাড়াও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করছে যেমন- বিকল্প কর্মসংস্থান ও ভিক্ষুক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, বেসরকারি খাতের এতিমখানার জন্য ক্যাপিটেশন অনুদান প্রদান, কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রদান, দগ্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের পুনর্বাসন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, শহরের সমাজ কল্যাণ কেন্দ্র ও পল্লী মৈত্রি কেন্দ্র- প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে।
সরকার শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান করার পাশাপাশি হিজড়াদের উন্নয়ন, বেদে সমাজের উন্নয়ন, সমাজের সুবিধা-বঞ্চিত জনগোষ্ঠির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং চা শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতিকরণের জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন করছে।
সরকারি তথ্য মতে, বর্তমানে ৫৭.০১ লাখ বয়স্ক মানুষ নিয়মিত ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পাচ্ছে, আরোও ২৪.৭৫ লাখ বিধবা এবং নির্যাতিতা নারীও মোবাইল ব্যাংকিং বা এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে মাসিক ৫০০ টাকা সরকারি ভাতা পাচ্ছে। সরকার প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ৮৫০ টাকা করে মাসিক ভাতা প্রদান করছে এবং মোট ২৩.৬৫ লাখ শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রতি মাসে ভাতা পাচ্ছে।
একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা মাসিক উপবৃত্তি পাচ্ছেন এবং এই ভাতার পরিমাণ মাধ্যমিক স্তরের ক্ষেত্রে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯০০ টাকা, উচ্চ শিক্ষা স্তরে ১,৩০০ টাকা। এভাবে মোট ১০০,০০০ শিক্ষার্থী প্রতি মাসে উপবৃত্তি পাচ্ছেন।
২,৬০০ জন হিজড়া প্রতিমাসে ৬০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন, পাশাপাশি ৫,০৬৬ জন বেদেও মাসিক ৬০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। এছাড়া প্রায় ৪৫,২৫০ জন সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে একই অংকের মাসিক ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। প্রতেক চা-শ্রমিক বার্ষিক ৫,০০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন এবং চা-শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৬০,০০০।
শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রতিজনের জন্য সরকার ৩,৫০০ টাকা ব্যয় করছে এবং বেসরকারি খাতের এতিমখানার প্রত্যেক অনাথ শিশু মাসিক ২,০০০ টাকা করে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট হিসাবে পাচ্ছে।
সরকার একজন অসহায় রোগীকে তার ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, থ্যালাসেমিয়া, জন্মগত হৃদরোগসহ পক্ষাঘাতগ্রস্থ ব্যক্তি অথবা স্ট্রোকের চিকিৎসার জন্য বার্ষিক ৫০,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
এছাড়াও, সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি, যেমন- কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রদান এবং দগ্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনে একটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠি নিয়মিত নগদ সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। নতুন অর্থ বছরে সরকার সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় তিন লাখ শারীরিক প্রতিবন্ধী সুবিধাভোগীকে যুক্ত করতে যাচ্ছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য ৬,৫০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত বাজেট নির্ধারণ করা হয়।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রামীণ ও দুস্থ মানুষের ভাগ্য ও জীবন-জীবিকার পরিবর্তনের জন্য ‘সেফটি নেট কর্মসূচি’র সূচনা করেছিলেন, এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনকল্যাণে বঙ্গবন্ধুর সেই অসমাপ্ত কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ভাতাসমুহ এমএফএস- এর মাধ্যমে সরাসরি দেওয়া হচ্ছিল, পরবর্তীতে বয়স্ক, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারী, অসচ্ছল এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের গভর্নমেন্ট টু পার্সন (জি-টু-পি) পদ্ধতিতে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা এসএসএন কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হচ্ছে।”
স্বচ্ছল ব্যক্তি দ্বারা ভাতা সহায়তা সুবিধার অপব্যবহার রোধে সরকার আরও ১০০টি উপজেলার সকল বয়স্ক দরিদ্র ব্যাক্তিকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা বাতিল করতে চলেছে।
বাসস’র সাথে আলাপকালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সুবিধাভোগী কুলসুম বিবি জানান, সরকার সরাসরি ‘নগদ’ এর মাধ্যমে তার মোবাইল ফোন একাউন্টে ভাতা পাঠায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-কে ধন্যবাদ জানিয়ে কুলসুম বিবি বলেন, “তাঁর (প্রধানমন্ত্রীর) সততা ও আন্তরিকতা না থাকলে আমরা মাসিক বয়স্কভাতা পেতাম না।”
ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সার্ভিস ‘নগদ’, সরকারের সোশ্যাল নেট কর্মসূচির অধীনে মোট ভাতার ৭৫ শতাংশ বিতরণ (সংশোধিত) করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
Leave a Reply